২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

সৈয়দ আলী আশরাফের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সৈয়দ আলী আশরাফ - ছবি : সংগ্রহ

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাসাহিত্যে বিশ্বাসী নান্দনিকতার অগ্রদূত কবি ও গদ্যশিল্পী সৈয়দ আলী আশরাফের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সৃজনশীল ও মননশীল সাহিত্যে বিশ্বাসের যে অনুরণন সৃষ্টি করেছেন, পরবর্তী সময়ে তা অনেকেরই অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩০ পরবর্তী কাব্যধারায় আধুনিকতার ভেল্কিবাজিতে যে ‘লিভারপুল কবিকুল’ তৈরি হয়েছিল, যারা কবিতা ও সাহিত্যে অবিশ্বাস, অবক্ষয়, নৈরাজ্য ও নাস্তিকতাকে শিল্প করতে চেয়েছেন, সৈয়দ আলী আশরাফ সেখান থেকে পাশ কাটিয়ে শিকড়ের টানে ফিরে যান বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের কাছে। গড়ে তোলেন আপন কাব্যভূবন।

ত্রিশের পঞ্চপাণ্ডব থেকে শুরু করে সত্তর দশকের শেষ অবধি বাংলা কবিতা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো আধুনিকতার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে ভুলে যায় শেকড়ের টান ও বিশ্বাসের স্তুতি। এই কারণেই উত্তর আধুনিক বাংলা সাহিত্যে প্রধান অনুপ্রেরণাকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তিনি ছিলেন মুসলিম বিশ্বে জ্ঞান ও শিক্ষার ইসলামীকরণের আন্দোলনের পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব। ব্রিটেনের ক্যামব্রিজসহ বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। শিক্ষা ও সাহিত্যে তার বিশেষ অবদানের উপর বিদেশে দু’টি পিএইচডি থিসিসসহ ইতোমধ্যে তিনটি পিএইচডি এবং দুটি এমফিল থিসিস রচনা করা হয়েছে। ব্রিটেনের ক্যামব্রিজ ইসলামিক একাডেমি থেকে ড. শেখ আবদুল মাবুদ সম্পাদিত দু’টি স্মারক ভলিওম প্রকাশ করা হয়েছে।

অধ্যাপক ড. সৈয়দ আলী আশরাফ ১৯২৫ সালে ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের বর্তমান রাজধানী ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা শহরেই পার করেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান বিলেতে। সেখানে ভর্তি হন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ফিটজউইলিয়াম কলেজ (Fitzwilliom, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান) থেকে অনার্স এবং পিএচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজী সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক (Lecturer) শুরু করেন চাকরিজীবন, তারপর ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী সাহিত্য বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৬ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ১৯৭৪ সালে ব্রান্সউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শন অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত মক্কায় অবস্থিত বাদশাহ আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত জেদ্দায় বাদশাহ আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন।

পরে তিনি ১৯৮০ সালে ওআইসির প্রতিষ্ঠিত সৌদি আরবের জেদ্দায় বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রের মহাপরিচালক হন। তিনি ক্যামব্রিজের ইসলামিক একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালকও ছিলেন। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে মৃত্যুর আগ পর্যস্ত তিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভিসি ছিলেন। ১৯৯৮ সালের ৭ আগস্ট, শুক্রবার সকালে কেমব্রিজের নিজ বাস ভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন। পরে ৮ আগস্ট ঢাকার সাভারে দারুল এহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে তাকে দাফন করা হয়।

সৈয়দ আলী আশরাফ শুধু কবিতা, গদ্য, অনুবাদ, ভ্রমণ বিষয় লেখেননি। লিখেছেন অনেক ইংরেজি প্রবন্ধ, যা দেশে বিদেশে প্রকাশিত হয়েছে।

লেখকের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে

তার প্রকাশিত বাংলা গ্রন্থ- কবিতা: চৈত্র যখন (১৯৫৭), বিসংগতি (১৯৭৪), হিজরত (১৯৮৪), রূবাইয়াতে জহীনি (১৯৯১), প্রশ্নোত্তর (১৯৯৬)। অনুবাদ: ইভানকে ক্লেয়ার গল (অনুবাদ : ১৯৬০), প্রেমের কবিতা (সৈয়দ আলী আহসানের সাথে যৌথ)। গদ্যগ্রন্থ: কাব্যপরিচয় (১৯৫৭), নজরুল জীবনে প্রেমের এক অধ্যায়, রূপ বাংলা (১৯৯৫), বাংলাসাহিত্যে মুসলিম ঐতিহ্য (১৯৬২), সংসদ যুগ : পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদের ইতিকথা, অন্বেষা (আধ্যাত্মিক জীবনের বর্ণনা), সাহিত্য বিচার, কাব্যসংকলন (১৯৬৭) সৈয়দ আলী আশরাফের কবিতা (১৯৯১)। ইংরেজীতে: Ed. The other Harmony, Muslim Tradition in Bengali Literature (1982), Literature, Society and Culture 1947-1972, Muslim Education: Aims and Objectives of Islamic Education: Curriculum and teacher Education-etc.তাঁর সম্পাদনায় বাংলাসাহিত্যে প্রথমবারের মতো সংকলিত হয় “হামদ : আল্লাহর প্রশস্তি কবিতা” এবং কবি ইশারফ হোসেনের সম্পাদনায় প্রকাশিত “রসুল সা. কে নিবেদিত কবিতা” সংকলনের তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও উৎসাহদাতা। এছাড়া তিনি “দিলরুবা” সাহিত্য পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন।

আমরা তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement