পণ্য বয়কট অভিযানে কার লাভ আর কার ক্ষতি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১১ জুন ২০২৪, ১৪:১৩
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ যত তীব্র হচ্ছে, তার সাথে প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হতাহতের ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে যেসব আন্তর্জাতিক কোম্পানি ইসরাইলের সেনাবাহিনী বা সরকারকে সমর্থন করে তাদের পণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হয়।
আরব ও ইসলামী বিশ্বে বয়কটের প্রচারণা নতুন কিছু নয়, কারণ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই বিষয়টি নিয়ে বহু বছর ধরে অনেক আলোচনা হয়েছে।
কখনো কখনো বয়কটের ডাক দেয়ার কারণ রাজনৈতিক, আবার কখনো কখনো ধর্মীয়।
যেমন প্রায় ২০ বছর আগে ইরাকে আমেরিকান আগ্রাসনের সময় আরব দেশগুলোতে আমেরিকান পণ্য বয়কট করা হয়েছিল।
গাজা যুদ্ধের আগে সর্বশেষ যে বয়কট প্রচারাভিযান আলোচিত হয়েছে, সেটি ছিল সুইডেন ও ডেনমার্কের বিরুদ্ধে।
ওই দেশ দু’টি কোরআন পোড়ানোর অনুমতি দিলে আল-আজহারের মতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এর প্রতিক্রিয়ায় সুইডিশ এবং ডেনিশ পণ্য বয়কটের আহ্বান জানায়।
তারা একে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী প্রচারণার অংশ বলে মনে করে।
‘বিডিএস’
বিভিন্ন বৈশ্বিক কোম্পানি বিশেষ করে যেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন দেয়ার অভিযোগ রয়েছে, তাদের পণ্য বয়কটের ডাক দেয়ার মূলে রয়েছে, ‘বয়কট (বর্জন), ডিভেস্টমেন্ট (বিনিয়োগ প্রত্যাহার) এবং স্যাঙ্কশন (নিষেধাজ্ঞা) প্রচারাভিযান’। যা সংক্ষেপে বিডিএস নামে পরিচিত।
এই প্রচারণা সর্বপ্রথম শুরু হয় ২০০৫ সালে। ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রায় ১৭০টি ফিলিস্তিনি নাগরিক সমাজ সংস্থা এটি চালু করে।
অহিংস উপায়ে এই চাপ দেয়া হয় যাতে ইসরাইল সমস্ত আরব ভূমির দখল বন্ধ করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে।
ইসরাইল যেন ওই ভূখণ্ডে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি-আরবদের সমান অধিকার প্রদান করে এবং তাদের মৌলিক অধিকারকে সম্মান জানায়।
জাতিসঙ্ঘের ১৯৪ নম্বর প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের অধিকারকে সম্মান ও সুরক্ষা দেয়া উচিত যেন তারা তাদের ভিটাবাড়িতে ফিরে যেতে পারে। ক্যাম্পেইনারদের ওয়েবসাইটে এমনটাই বলা হয়েছে।
এবারো গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে অভিযানে যেসব কোম্পানি ইসরাইলকে সমর্থন দিচ্ছে তাদের পণ্য বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে আসছে বিডিএস।
বিডিএস একইসাথে বিশেষ কিছু কোম্পানির পণ্য বয়কটের আহ্বান জানাচ্ছে, যেগুলো ইসরাইলের সবচেয়ে সমর্থনকারী বলে মনে করা হয়।
একইসাথে তারা বয়কটের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানিকে চিহ্নিত করেছে যাতে প্রচারণার ‘প্রভাব দ্বিগুণ’ হয়। ওইসব কোম্পানির নাম বিডিএস ওয়েবসাইটে তুলে দেয়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নির্মিত ইসরাইলি বসতিগুলোয় এসব কোম্পানির শাখা রয়েছে, সেইসাথে কোম্পানিগুলো ইসরাইলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রকল্পগুলোয় বিনিয়োগ করে, যাতে সেই বসতির পরিধি বাড়ানো যায়।
এসব কোম্পানির মধ্যে একটি বিখ্যাত স্পোর্টস ওয়্যার (খেলাধুলার পোশাক) ও ফুটওয়্যার (জুতা) কোম্পানিও রয়েছে যারা ইসরাইলি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে স্পন্সর করে।
প্রচারাভিযানে বলা হয়েছে, ওই অ্যাসোসিয়েশনে এমন অনেক ফুটবল দল রয়েছে, যারা আসলে দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নির্মিত বসতিগুলোয় তৈরি হয়েছে।
এরকম অনেক অনেক ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যেখানে বয়কটের আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন খাদ্য পণ্য, প্রসাধনী, পোশাক এবং জুতার ব্র্যান্ড, রেস্তোরাঁর চেইন, ক্যাফে এবং সুপারমার্কেট।
সেইসাথে ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন জানানোয় সব আমেরিকান পণ্য বয়কটেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
সেইসাথে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানির পণ্য বয়কটের ডাকও আসে। কারণ সেসব দেশের নেতারা ইসরাইল সফর করেছেন এবং গত ৭ অক্টোবরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া অনেক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বয়কট করার আহ্বানও জানানো হয়েছে। ইউজারদের অভিযোগ হলো তাদের তৈরি ফিলিস্তিনিপন্থী বিভিন্ন কন্টেন্ট রেস্ট্রিক্ট এবং ডিলিট করে দেয়া হয়।
বর্তমানে এ নিয়ে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, যেখানে বয়কট করা পণ্যগুলো তালিকাভুক্ত থাকে। যাতে ক্রেতাদের পক্ষে তা শনাক্ত করা সহজ হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের মধ্যে যারা বয়কটকে সমর্থন করে তারা বিভিন্ন বিকল্প পণ্যের তালিকাও প্রচার করছে।
কে হারবে আর কে জিতবে?
বৈশ্বিক কোম্পানিগুলোকে বয়কট করার ফলে প্রকৃত অর্থে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং কারা উপকৃত হচ্ছে তা নিয়ে এসব ক্যাম্পেইন বিতর্কের মুখে পড়েছে।
এতে কী শুধু ওই কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, নাকি তাদের পৃষ্ঠপোষক দেশগুলোর অর্থনীতি প্রভাবিত হচ্ছে? যা কিনা এই বয়কটের ডাক দেয়ার মূল্য উদ্দেশ্য।
ইজিপশিয়ান ফোরাম ফর ইকোনমিক স্টাডিজের প্রধান রাশাদ আবদো বিষয়টি দু’টি দিক থেকে বিশ্লেষণ করেছেন।
প্রথমত, যদি প্যারেন্ট কোম্পানি বা মূল কোম্পানির কোনো শাখাকে বয়কট করা হয় এবং দ্বিতীয়ত স্থানীয় মালিকানাধীন কোনো কোম্পানিকে বয়কট করা হয়, যার কাছে ওই বৈশ্বিক কোম্পানির ফ্র্যাঞ্চাইজি আছে বা মূল কোম্পানির ট্রেডমার্ক ব্যবহারের অনুমোদন আছে।
বয়কটের ক্ষেত্রে এই দু’টি জায়গায় বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে বলে জানান আবদো।
‘প্রথম ক্ষেত্রে, মূল কোম্পানির লাভ বলতে বোঝায় তাদের সমস্ত শাখার লাভের সমষ্টিকে। তাই যদি কিছু শাখা লাভ করতে না পারে তাহলে মূল কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, কিছু সমস্যা রয়েছে। কারণ এখানে যে স্থানীয় ব্যবসায়ী মূল কোম্পানির ট্রেডমার্ক ব্যবহারের অধিকার পান, তিনি এই ট্রেডমার্ক ব্যবহার বাবদ সাধারণত মূল কোম্পানিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে থাকেন।
এখন ওই স্থানীয় ব্যবসায়ীর লাভ হোক বা ক্ষতি তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মূল কোম্পানিকে দিতেই হবে। অর্থাৎ বয়কটের ফলে ক্ষতির কোনো প্রভাব মূল কোম্পানির ওপর পড়ে না।
এতে শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হন ওই স্থানীয় বিনিয়োগকারী যিনি শ্রমিক নিয়োগ করেন এবং কোম্পানি চালাতে স্থানীয় পণ্য কেনেন।
এই ক্ষেত্রে বয়কটের প্রচারণা ওই বিনিয়োগকারী, তার আওতায় কাজ করা শ্রমিক এবং যে পরিবারগুলো তাদের আয়ের ওপর নির্ভর করছে তাদের ক্ষতির মুখে ফেলে।
এভাবে জাতীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বয়কটের সমর্থকরা বিশ্বাস করে যে এই প্রচারণার ফলে স্থানীয় পণ্য এবং ব্যবসাকে সমর্থন এবং উৎসাহিত করা হবে।
উদাহরণ স্বরূপ, একটি মিসরীয় কোমল পানীয় কোম্পানি তাদের পণ্য আরো বেশি করে উৎপাদন এবং আরো বেশি এলাকা জুড়ে বিতরণের ঘোষণা দেয়।
ওই কোম্পানিটি আগে তেমন জনপ্রিয় ছিল না। কিন্তু আমেরিকান কোমল পানীয় বয়কটের প্রচারণা চলার কারণে মিসরীয় পণ্যটির চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
এই অবস্থায় ওই কোম্পানি চাকরির শূন্য পদে আবেদন করতে বলে।
এই ঘোষণার পর কোম্পানিটি ১৫ হাজারের বেশি সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত পায় বলে সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্টে জানায়। যা প্রত্যাশার চাইতেও অনেক বেশি ছিল।
অনেক মিসরীয় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা, কেবল মিসরীয় পণ্যের দোকান বা সুপারমার্কেট চেইন থেকে কেনাকাটার উৎসাহ দিয়ে বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করে।
আবদো বলেন, ‘স্থানীয় বিনিয়োগকারীর পক্ষে কেবলমাত্র তখনই উপকৃত হওয়া সম্ভব যদি সে তার পণ্য এবং সেবার মান উন্নত করে এবং ভোক্তাদের আস্থা অর্জনের জন্য তার লাভের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।’
‘সেই সাথে তারা যদি দাম বাড়ানোর সুযোগকে কাজে না লাগায় এবং বাজারে একচেটিয়া আধিপত্যের চেষ্টা না করে।’
জর্ডানের অর্থনীতিবিদ এবং বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ ওয়াজদি মাখামরেহ এর সাথে একমত পোষণ করে বিপি সিএনএনকে বলেন, ‘বৈশ্বিক কোম্পানির পণ্য বয়কট স্থানীয় কোম্পানির পণ্য বিক্রি ও সম্প্রসারণে সাহায্য ও উৎসাহ যোগাতে পারে। তবে সেটা তখনই সম্ভব যদি এই পণ্যগুলো প্রতিযোগিতামূলক হয় এবং একই গুণমান বজায় রাখতে পারে। তাহলে তাদের পণ্যের প্রসার বাড়তেই থাকবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
কিন্তু অনেকের ধারণা, বয়কটের এই প্রচারণার ফলে আরব দেশগুলোর কিছু জাতীয় পণ্যের ত্রুটি প্রকাশ হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে ওই বিদেশী পণ্যগুলোর কোনো বিকল্প পাওয়া যায়নি।
একটি শক্তিশালী বয়কট আন্দোলনের সম্মুখীন দেশগুলিতে বিদেশী বিনিয়োগের ওপর বয়কটের সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে অর্থনীতিবিদরা দ্বিমত পোষণ করেন।
রাশাদ আবদো অস্বীকার করেছেন যে বয়কট ভবিষ্যতের বিদেশী বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, ‘বিশেষ করে যদি বাজারটি মিসরীয় বাজারের মতো বিশাল হয়, যেখানে ১০ কোটি গ্রাহক রয়েছে এবং সমগ্র আরব অঞ্চল, যেখানে ৪০ কোটির বেশি গ্রাহক রয়েছে।’
‘বিদেশী বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ হচ্ছে এই বড় বাজারগুলো ধরে রাখা। তাই আমরা কিছু কোম্পানিকে বিবৃতি দিতে দেখেছি যে তারা ইসরাইলকে সমর্থন করে না, তারা ফিলিস্তিনের পাশে আছে।’
ওয়াগদি মাখামরার ধারণা, যদি বয়কট দীর্ঘ সময়ের জন্য চলতে থাকে, তাহলে কিছু আন্তর্জাতিক কোম্পানি সংশ্লিষ্ট দেশে তাদের বিনিয়োগ বাতিল করতে পারে বা অন্তত তাদের পণ্য সরবরাহ কমিয়ে আনতে পারে।
এদিকে বিদেশী বিনিয়োগ কমে গেলে কিছু আরব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা ওই বিনিয়োগ তাদের রিজার্ভ বাড়াতে খুবই প্রয়োজন।
কেননা এর মাধ্যমে তারা যেমন বৈদেশিক মুদ্রা পায় তেমনি তাদের কাজের সুযোগও সৃষ্টি হয়।
বৈদেশিক বিনিয়োগ হ্রাস পেলে, বয়কট করা দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বয়কট কতটা কার্যকর?
বাহরাইন, কুয়েত, জর্ডান এবং মিসরের মতো আরব দেশগুলোতে বসবাসকারী অনেক সাংবাদিক সহকর্মী আমাকে জানিয়েছেন যে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তারা দেখেছে এই বয়কট প্রচারাভিযানের মাধ্যমে চিহ্নিত কিছু রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফে চেইনের শাখাগুলোর চাহিদা নাটকীয় হারে কমে গিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের অনেক ব্যবহারকারীরা এ সংক্রান্ত নানা পোস্ট ও ছবি প্রচার করেছে, যেখানে দেখা যায় সুপারমার্কেটগুলো এখন বয়কট প্রচারাভিযানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে বিশাল ছাড় এবং আকর্ষণীয় অফার দিচ্ছে।
একে তারা তাদের প্রচারাভিযানের সাফল্যের প্রমাণ বলে মনে করে।
এই প্রচারাভিযানের সমর্থকরা তাদের কার্যকর ভূমিকার প্রমাণ হিসাবে এমন কিছু তথ্য শেয়ার করেছে।
যেখানে বলা হয়, কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা সঙ্ঘাতের শুরুতে ইসরাইলের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা জানালেও তারা পরে ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল উভয় দিকে হতাহতের ঘটনায় সেইসাথে ইহুদি-বিদ্বেষ এবং মুসলমানদের ঘৃণার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার জন্য তাদের দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে।
ওই কোম্পানিগুলো রেড ক্রসসহ অন্যান্য সংস্থাকে অনুদান দেয়ার কথা বলেও বিবৃতি দিয়েছে। ওই ত্রাণ সংস্থাগুলো ‘মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে’ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সাহায্য করে।
তারা বেশ আশা প্রকাশ করে জানায় যে ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল উভয়ের ক্ষেত্রেই শান্তি অর্জিত হবে।
আমেরিকান রেস্তোরাঁ চেইন ম্যাকডোনাল্ডসের ইসরাইলে তাদের ট্রেডমার্ক ব্যবহার করার অধিকার রয়েছে।
এই কোম্পানিটি ইসরাইলি সৈন্যদের বিনামূল্যে খাবার বিতরণের ঘোষণা দেয়ার পরে তারা বিরোধের মধ্যে পড়ে যায়।
বেশ কয়েকটি আরব দেশে এই কোম্পানির ফ্র্যাঞ্চাইজি রয়েছে। তারা বলেছে যে এ ধরনের সিদ্ধান্তে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং কিছুই করার নেই।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও ঘোষণা দিয়েছে যে তারা গাজার জনগণকে সাহায্য করতে অনুদান দেবে।
মধ্যপ্রাচ্যে স্টারবাকস কফি চেইনের বাণিজ্যিক অ্যাজেন্ট এক বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, তারা ইসরাইলি সরকার বা ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে বলে যে দাবি উত্থাপিত হয়েছে তা সত্য নয়।
কিন্তু কিছু অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, এই বয়কট প্রচারণা শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তার পর্যায়ে আটকে আছে।
আরব দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংস্থা যেমন চেম্বার অফ কমার্সের সাথে এর কোন সমন্বয় নেই।
এক্ষেত্রে যেটা প্রয়োজন, সেটা হল যে পণ্যগুলো বয়কট করা উচিত সেগুলো চিহ্নিত করা।
তারপর ওই পণ্যগুলোর পরিবর্তে, মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য সহজলভ্য বিকল্প পণ্য বের করা নির্ধারণ করা।
আপনার পণ্য বয়কটের ফলে টার্গেটেড প্যারেন্ট কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নাকি সেই কোম্পানির অ্যাজেন্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটি বের করা।
স্থানীয়ভাবে, এটি উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব ফেলবে না, বরং এটি বয়কট করা দেশগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
অর্থনীতি এবং বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ ওয়াগদি মাখামরা বলেছেন, ‘আরব নাগরিকরা ইসরাইলকে সমর্থন করে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অনেক পণ্য ব্যবহার করে। তাই এই সমস্ত পণ্য যদি ব্যাপক হারে বয়কট করা না হয় তবে এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের ওপর খুব একটা পড়বে না। কারণ এই কোম্পানিগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জন করে।’
বিশেষজ্ঞরা আরো সতর্ক করে বলেছেন যে যদি গাজা যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার পর বয়কটের প্রচারণাও বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ওই স্থানীয় কোম্পানিগুলোর পণ্যের চাহিদা আবারো কমতে শুরু করবে।
এতে ওইসব কোম্পানি মালিকরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। তারা পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের জন্য ব্যাংক থেকে যে বিপুল অংকের ঋণ নেবে। সেটা তারা পরিশোধ করতে পারবে না।
বয়কট প্রচারণার সমর্থকরা মনে করেন, তাদের বয়কটের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি বেশি হবে না কি কম সেটি মুখ্য নয়।
বরং বয়কট, মিছিল এবং বিক্ষোভের মাধ্যমে তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা তুলে ধরছে এবং গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে এবং প্রতিনিয়ত হতাহতের ঘটনা রোধে কাজ করছে।
অন্যদিকে, এর বিরোধীরা মন করে যে, এতে তাদের দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বিশেষ করে সেইসব দেশ, যারা ইতোমধ্যেই গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে।
সূত্র : বিবিসি