১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিশ্বে চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান কততম

- ছবি : বিবিসি

আমাদের চেনাজানা অনেকেই আছেন, চা পান না করলে তাদের দিনই শুরু হয় না। অথবা, দিনে একবার চায়ের দোকানে বসে চা না খেলে অনেকেরই গোটা দিনটাই যেন অপূর্ণ থেকে যায়।

তবে চা কিন্তু শুধুমাত্র পানীয় হিসেবেই ব্যবহৃত হয় না। অনেক সময় দেশে দেশে বন্ধুত্ব তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। যেমন, ১৯৭৩ সালে আরব ইসরাইল যুদ্ধের সময় আরবদের প্রতি সমর্থন এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মিশরে চা পাঠিয়েছিলেন সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান।

বিশ্বের বেশিভাগ মানুষের কাছে চা পান কেবলই একটি অভ্যাস হলেও, এর বেশ কিছু স্বাস্থ্যগুণও রয়েছে। যুগে যুগে চায়ের আবেদনও বেড়েই চলেছে।

যদিও বিশ্বের মাত্র গুটি কয়েক দেশ এই ক্রমবর্ধমান চায়ের চাহিদা মেটাতে পারে।

চীন
খ্রিষ্টের জন্মের দেড় হাজার বছর আগে চীনের ইউনান প্রদেশে একটি ঔষধি পানীয় হিসেবে চা পানের প্রচলন শুরু হয়েছিল। তাই সারা বিশ্বে এই স্থানটি চায়ের জন্মস্থান নামে পরিচিত।

চা মূলত তৈরি করা হয় ক্যামেলিয়া সিনেসিস নামের চিরহরিৎ গুল্ম থেকে। এই ছোট গাছের পাতা এবং পাতার কুঁড়ি সংগ্রহ করে এর থেকে চা উৎপাদন করা হয়। ব্ল্যাক টি (রঙ চা), গ্রিন টি (সবুজ চা), হোয়াইট টি (সাদা চা), এমনকি উলং টি’র মতো হাজার প্রকারের চা আছে বিশ্বে। কিন্তু সেগুলোর সবই তৈরি করা হয় ওই গাছের পাতা থেকে।

আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দেশ চীনের বার্ষিক চা উৎপাদন গড়ে ৩১ লাখ টনের বেশি, যার বাজারমূল্য ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।

চীনের ইউনান ও গুইঝো প্রদেশে সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদিত হয়। ২০২২ সালে শুধুমাত্র ইউনান প্রদেশেরই ৫৩ হাজার হেক্টরের বেশি পরিমাণ জমিতে চা চাষ করা হয়।

ওই বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় সাত বিলিয়ন কিলোগ্রাম চা পান করা হয়েছে, তার এক তৃতীয়াংশ উৎপাদিত হয়েছে চীনে।

মূলত, কয়েক শতাব্দী ধরেই চা চীনের জাতীয় পানীয় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং এমনকি ধর্মীয় কারণে সমগ্র চীনে এটি তুমুল জনপ্রিয়। তাই, নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ২০২৩ সালে চীন প্রায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চা রফতানি করেছে।

প্রতি বছর ভিয়েতনাম, মরোক্ক’র মতো অনেক দেশ চীন থেকে প্রচুর চা আমদানি করে থাকে। পশ্চিমা দেশগুলোর মাঝে শীর্ষ আমদানিকারকদের তালিকায় আছে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও মিশর।

ভারত
ভারতবর্ষে আগে চায়ের ব্যবহার তেমন একটা ছিল না। কিন্তু ব্রিটিশরা ১৮০০ দশকের দিকে ভারতে চা ব্যবহার ও উৎপাদন করা শুরু করে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন ভারতে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ করা শুরু করে, তখন এই চা ছিল সমাজের উঁচু শ্রেণির লোকদের পানীয়। পরে তা ধীরে ধীরে সর্বসাধারণের মাঝেও জনপ্রিয় হয়।

স্ট্যাটিস্টা বলছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী চায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার ভারত। দেশটিতে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ টনের বেশি চা উৎপাদিত হয়।

ভারতের আসাম, তামিলনাড়ু হলো সর্বাধিক চা উৎপাদনকারী অঞ্চল, যার বেশিভাগই নীলগিরি জেলার পাহাড়ে জন্মে। অন্যান্য চা উৎপাদনকারী দক্ষিণের মুন্নার এবং ওয়ানাদ।

তবে বিশ্বব্যাপী ভারতের যেসব চা অনেক বেশি জনপ্রিয়, তার উৎপত্তিস্থল দার্জিলিংয়ে। দার্জিলিং টি-ই ভারতের প্রথম পণ্য, যা ২০০৪ থেকে ২০০৫ সালে প্রথম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

তবে ভারতীয়দের মাঝেও প্রচুর চা পানের অভ্যাস আছে। তাই নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে চীনের পর সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদিত হয় ভারতেই। ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি চা আমদানি করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।

কেনিয়া
স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, চা উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের দেশ কেনিয়ার নাম। কেনিয়াতে বছরে সাধারণত পাঁচ লাখ টনেরও বেশি পরিমাণ চা উৎপাদন হয়।

যদিও ২০২৩ সালে দেশটিতে তার আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম চা উৎপাদিত হয়েছে। ওই বছর দেশটিতে মোট উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ ছিল চার লাখ ১২ হাজার টন।

রৌদ্রোজ্জ্বল জলবায়ু ও গাঢ় লাল মাটির কারণে চা উৎপাদনের জন্য কেনিয়া এক স্বর্গভূমি। আফ্রিকান দেশগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদনকারী দেশ এটিই।

তবে কেনিয়ায় যত পরিমাণ চা উৎপাদিত হয়, তার বেশিভাগই আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করা হয়। বলা হয়ে থাকে, চা-ই হলো কেনিয়ার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।

২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কেনিয়া থেকে ৪৫টিরও বেশি দেশে চা রফতানি করা হয়েছিল। তবে রফতানিকৃত চায়ের ৪০ শতাংশ কিনেছিল পাকিস্তান। মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রও প্রচুর চা কিনেছিল।

কেনিয়া এত বিপুল পরিমাণ চা রফতানি করতে পারে, কারণ দেশটির স্থানীয়দের মাঝে চা পানের প্রবণতা কম। যদিও এখন তা ক্রমশ বাড়ছে।

২০২১ সালে কেনিয়ার মানুষ ৩৮ দশমিক চার মিলিয়ন কিলোগ্রাম পরিমাণ চা ক্রয় করেছিল। অথচ, ২০১০ সালে স্থানীয়রা মাত্র ১৯ মিলিয়ন কিলোগ্রাম পরিমাণ চা কিনেছিল।

শ্রীলঙ্কা
বিশ্বের শীর্ষ চা রফতানিকারী দেশের মাঝে শ্রীলঙ্কার নামও আছে। শ্রীলঙ্কার সিলন চা পৃথিবীব্যাপী বিখ্যাত।

স্ট্যাটিসটা ও টি অ্যাক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন শ্রীলঙ্কা অনুযায়ী, দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালে আড়াই লাখের বেশি টন চা উৎপাদিত হয়েছিল।

চলতি বছরের শুরুর তিন মাসেই সেখানে ৫৮ হাজার টন চা উৎপাদন করা হয়ে গেছে।

শ্রীলঙ্কার ওই ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কায় যে পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছিল, তার প্রায় দুই লাখ ৪২ হাজার টন চা রফতানি করা হয়েছে।

শ্রীলঙ্কা থেকে যারা চা আমদানি করে, তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো তুরস্ক, ইরাক, রাশিয়া ইত্যাদি দেশ।

ভিয়েতনাম
চা উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মাঝে এশিয়ার এই দেশটিও আছে। ভিয়েতনামের ব্ল্যাক ও গ্রিন টি‘র খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। তবে ভিয়েতনামের সবুজ চা’র কদর উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

এই দেশটি লোটাস (পদ্ম) ও জেসমিন (জুঁই) চায়ের জন্যও বিখ্যাত। পদ্মের পাতা, ফুল, শিকড়, ফল, বীজ বা ভ্রূণ থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় লোটাস চা তৈরি করা হয়। আর জেসমিন চা মূলত প্রস্ফুটিত জুঁই ফুল থেকে চায়ের সাথে সৌরভ মিশ্রিত করে এক ধরনের সুগন্ধি চা। জেসমিন চায়ের স্বাদ মিষ্টি এবং সুগন্ধিযুক্ত হয়ে থাকে।

স্ট্যাটিসটা অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশটিতে এক লাখ ১১ হাজার টন চা উৎপাদিত হয়, তার আগের বছরের তুলনায় চা এক লাখ টনেরও বেশি। ওই বছর দেশটির ১২৩ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ করা হয়েছিল।

ভিয়েতনামের মানুষ চা-কে মননশীল কার্যক্রম পরিচালনার একটি গুরুপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে দেখে। যেমন, তারা যখন কোনো পাণ্ডিত্যপূর্ণ কাজ করে, তখন তারা চা পান করে।

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চা উৎপাদনের দিক থেকে ভিয়েতনাম পঞ্চম। দেশটিতে অনেক আগে থেকেই চা পানের রেওয়াজ থাকলেও তারা এটি ব্যাপক পরিসরে চাষ শুরু করে ১৮৮০ সাল থেকে।

মূলত, ফরাসি উপনিবেশবাদীরা ভিয়েতনামের হ্যানয়ের উত্তর-পশ্চিম চা বাগান তৈরি করে।

বাংলাদেশের অবস্থান কততম স্থানে?
চা উৎপাদনকারী শীর্ষ পাঁচটি নয় কেবল, ১০টি দেশের তালিকায়ও বাংলাদেশ নেই। ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, চা উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ ১২তম।

বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা দেশগুলো হলো তুরস্ক, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, আর্জেন্টিনা, জাপান ও থাইল্যান্ড।

বাংলাদেশ চা বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চা উৎপাদনের অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে ২০২৩ সালে মোট ১০২ দশমিক ৯২ মিলিয়ন কেজি (১ লাখ টনের কিছু বেশি) চা উৎপাদিত হয়েছে।

উৎপাদিত চা থেকে এক মিলিয়ন কেজির কিছুটা বেশি পরিমাণ চা রফতানি করা হয়েছে। রফতানিকৃত চায়ের মূল্য ২৭২ মিলিয়ন টাকার চেয়ে সামান্য বেশি।

এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে ২০০১ সালের সাথে তুলনা করলে গত দুই দশকেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে দেশটিতে চায়ের উৎপাদন বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু চা রফতানির পরিমাণ বেশিভাগই কমেছে।

অর্থাৎ, এই সময়ের মাঝে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই চায়ের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

জানা যায়, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে চা বাগানের সংখ্যা ছিল ১৫০টি, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১৬৮টি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
শিশু অধিকার নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে ইউজিসির তাগিদ সিদ্ধিরগঞ্জে জিএম কাদের-শামীম ওসমানসহ ১৪৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা হত্যাকারীদের রক্ষা করতেই বুদ্ধিজীবী হত্যার তদন্ত হয়নি : বিআরজেএ ঢাবি শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে ভাঙচুর ফুটপাতে নবজাতকের লাশ, টানাহ্যাঁচড়া করছিল কুকুর মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান : আসিফ নজরুল জর্দানে বৃদ্ধাশ্রমে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৬ আর কোনো শহীদের লাশ উত্তোলন করতে দেয়া হবে না সিরিয়ায় গম রফতানি স্থগিত রাশিয়ার পাকিস্তানে এমপি ও মন্ত্রীদের বেতন-ভাতার তথ্য প্রকাশ

সকল