০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

জলবায়ু বদলের ফলে ৪৫ গুণ বেড়েছে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা

জলবায়ু বদলের ফলে ৪৫ গুণ বেড়েছে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা - সংগৃহীত

এপ্রিলের শেষ দিক থেকে টানা তাপপ্রবাহের সাক্ষী থেকেছে ভারতের দক্ষিণবঙ্গ। শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, ভারত তো বটেই এশিয়ার একটা বড় অংশও পুড়েছে দহনজ্বালায়। শুক্রবার থেকে ভারতের উত্তর-পশ্চিমে তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া অফিস।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবেই তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে এমনটা হচ্ছে। আর এপ্রিল মাসে ভারতে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা বেড়েছে ৪৫ গুণ! জলবায়ুর চোখরাঙানির জেরে বিশ্ব জুড়ে তাপমাত্রা বাড়তে পারে এক দশমিক দুই থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে আশঙ্কার দেখা গেছে ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশনের (ডব্লিউডব্লিউএ) সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে।

মালয়েশিয়া, ব্রিটেন, সুইডেন, নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন আবহাওয়া-সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৩ জন বিজ্ঞানী রিপোর্টটি তৈরি করেছেন। গত দু’বছরের রিপোর্টেও এবারের মতোই ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কার্যকারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা আবহাওয়ার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে শিল্পবিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় বর্তমানে তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।

নতুন রিপোর্টে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল বিশ্লেষণের জন্য পৃথক মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছিল। পশ্চিম এশিয়ায় (যেমন সিরিয়া, লেবানন, জর্ডন, ফিলিস্তিন) মার্চ-এপ্রিলের তিন দিনের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা খতিয়ে দেখা হয়। ফিলিপিন্সে দৈনিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ১৫ দিনের গড় পর্যালোচনা করা হয়েছে। তবে ভারত, মায়ানমার, লাওস-সহ দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে এপ্রিলের গড় তাপমাত্রাকে বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গেছে, গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রি।

রিপোর্ট বলছে, ভারতে জলবায়ু পরিবর্তনের জোরাল ইঙ্গিত মিলেছে। তাপমাত্রা বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপপ্রবাহের আশঙ্কা বেড়েছে ৪৫ গুণ। ভবিষ্যতে পশ্চিম এশিয়ায় তাপমাত্রা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। ২০৪০ বা ২০৫০ সালে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দুই ডিগ্রি ছুঁতে পারে।

সাধারণভাবে এপ্রিল মাসে এশিয়ায় তাপমাত্রা এমনিতেই বেশি থাকে।

গবেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক তাপমাত্রা যে বিপুল হারে বাড়ছে (বিশেষত কিছু শহরে), তা নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। অত্যধিক তাপে যে সমস্ত প্রজাতির বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে, তাদের সুরক্ষারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তা না হলে ব্যাহত হতে পারে জীববৈচিত্র।

গ্রান্থাম ইনস্টিটিউটের গবেষক মরিয়ম জাকাকারিয়া জানান, বিশ্ব জুড়ে যদি অবিলম্বে তাপ নিঃসরণের হার নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, সেক্ষেত্রে তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আগামী দিনে এই বৃদ্ধির হার দুই ডিগ্রিও ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর তাপপ্রবাহের ক্ষেত্রে তা হতে পারে সাত ডিগ্রি।

রিপোর্ট বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় বাস্তুহারা ১৭ লাখ মানুষের জীবন আরো দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে অত্যধিক গরমে। মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম চলতি বছরের এপ্রিলে উষ্ণতম দিনের সাক্ষী থেকেছে। ফিলিপিন্স সাক্ষী উষ্ণতম রাতের। ভারতে ৪৬ ডিগ্রি ছুঁয়েছে তাপমাত্রা।

এর প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। অত্যধিক গরমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিকাজ। ফলে খাদ্যশস্যের জোগানে ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। পানির সঙ্কটের সাক্ষী ভারতের বেঙ্গালুরুসহ বহু শহর।

তাপমাত্রাজনিত কারণে গত এপ্রিলে মৃত্যুর সংখ্যা (সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী) বাংলাদেশে ২৮, ভারতে পাঁচ এবং গাজায় তিন। তাইল্যান্ড, ফিলিপিন্সেও এতে মৃত্যু হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনে খলনায়ক মানুষই। অত্যধিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ও অরণ্যবিনাশের মতো হঠকারী পদক্ষেপের মাসুল দিতে হচ্ছে মানুষকে।
সূত্র : আনন্দাবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement