হ্যাকারদের যে গ্রুপটি বিভিন্ন দেশের এটিএম থেকে বিপুল অর্থ চুরি করেছে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৫০
কল্পনা করুন যে আপনি ভারতে একজন নিম্ন-আয়ের মানুষ এবং বলিউডের একটা সিনেমায় অভিনয়ের জন্য আপনাকে এক দিনের একটা কাজ দেয়া হলো। আপনার চরিত্র, আপনাকে একটা অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) থেকে কিছু অর্থ তুলতে হবে।
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে ২০১৮ সালে কয়েকজন লোক ভেবেছিলেন যে তারা সিনেমার এমনই চরিত্রে অভিনয় করছে। কিন্তু তাদেরকে আসলে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরিতে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
ওই বছর আগস্ট মাসের এক সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কসমস কো-অপারেটিভ ব্যাংকে এই চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ব্যাংকের সদর দফতর পুনে শহরে।
যেভাবে প্রথম ধরা পড়ে
শনিবার দুপুরে ওই ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা হঠাৎ করেই বেশ কিছু সতর্ক-বার্তা পান। এসব বার্তা এসেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা কার্ড কোম্পানি থেকে। সেসব বার্তায় সতর্ক করা হয় যে তারা দেখতে পাচ্ছে এটিএম থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেয়ার চাহিদা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেসব লোক কসমস ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করেন তারাই এসব অর্থ তুলে নিচ্ছেন।
কিন্তু কসমস ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন তাদের নিজেদের সিস্টেম পরীক্ষা করে দেখেন, তারা সেখানে অস্বাভাবিক কোনো লেনদেনের ঘটনা দেখতে পাননি। এর প্রায় আধা-ঘণ্টা পর, অনেকটা নিরাপদ থাকার জন্যই, তারা কসমস ব্যাংকের কার্ড দিয়ে সব অর্থ লেনদেন বন্ধ করে দেয়ার জন্য ভিসাকে কোম্পানিকে জানায়। এই বিলম্ব হওয়ার কারণে তাদেরকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
পরদিন ভিসা কোম্পানির পক্ষ থেকে সন্দেহজনক লেনদেনের একটি পূর্ণ তালিকা পাঠানো হয় কসমস ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে। তাতে দেখা যায় যে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন এটিএম থেকে অর্থ উত্তোলনে করা হয়েছে।
এই ঘটনায় ব্যাংকটি প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ ডলার হারিয়েছে।
বিভিন্ন স্থান থেকে একযোগে এত সতর্কতার সাথে এই বিপুল অর্থ চুরি করা হয় যে একে দুঃসাহসী অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।
অপরাধীরা ২৮টি দেশে এটিএম ব্যবহার করে এই অর্থ চুরি করেছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও রাশিয়া।
দুই ঘণ্টা ১৩ মিনিটে বিপুল অর্থ চুরি
এসব ঘটনাই ঘটেছে মাত্র দুই ঘণ্টা ১৩ মিনিটের মধ্যে, যা বিশ্বজুড়ে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। শেষ পর্যন্ত তদন্তকারী কর্মকর্তারা এর সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে পেরেছেন। এরা হ্যাকারদের একটি গ্রুপ, যারা এর আগেও উত্তর কোরিয়ার নির্দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে।
কিন্তু এই সামগ্রিক চিত্রটি জানার আগে মহারাষ্ট্রের সাইবার-অপরাধ ইউনিটের তদন্তকারী কর্মকর্তারা সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পান যে বহু লোক এটিএম বুথের দিকে হেঁটে যাচ্ছে, এটিএমে ব্যাংক কার্ড প্রবেশ করাচ্ছে এবং তাদের ব্যাগগুলো ব্যাংক নোট দিয়ে ভর্তি করছে।
এই তদন্তে নেতৃত্ব দেয়া ইন্সপেক্টর জেনারেল ব্রিজেশ সিং বলেন, ‘অর্থ চুরির এ ধরনের একটি নেটওয়ার্কের ব্যাপারে আমরা সচেতন ছিলাম না।’
তিনি বলেন, চক্রের একজন হ্যান্ডলার তার ল্যাপটপের সাহায্যে রিয়েল টাইমে এটিএম থেকে অর্থ তোলার ওপর নজর রাখছিল। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে যে যারা মেশিন থেকে অর্থ তুলছিল, তারা যখনই নিজের জন্য কিছু অর্থ রেখে দিতে চেষ্টা করেছে, তখনই হ্যান্ডলার সেটা শনাক্ত করেছে এবং তাকে সতর্ক করে দিয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজ ও এটিএম বুথের আশপাশের এলাকা থেকে সংগৃহীত মোবাইল ফোনের ড্যাটা ব্যবহার করে ভারতীয় তদন্তকারীরা ঘটনার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ১৮ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। তাদের বেশিরভাগই এখন বিচারের অপেক্ষায় কারাগারে রয়েছেন।
ব্রিজেশ সিং বলেন, এই ব্যক্তিরা আসল অপরাধী নন। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশনকারী একজন, একজন ড্রাইভার এবং একজন মুচি। আরেকজনের ফার্মেসিতে ডিগ্রি রয়েছে। তারা সবাই ভালো মানুষ।
লাজারাস : কারা এই হ্যাকার?
তদন্তকারী কর্মকর্তারা মনে করেন এই চুরির পেছনে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। উত্তর কোরিয়া বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি। দেশটিতে সীমিত যে সম্পদ রয়েছে তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করা হয় পরমাণু অস্ত্র, ব্যালিস্টিক মিসাইল তৈরির পেছনে, যা জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ নিষিদ্ধ করেছে। এর ফলে জাতিসঙ্ঘ দেশটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যে কারণে দেশটির বাণিজ্যের বেলাতেও রয়েছে কঠোর বিধি-নিষেধ।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ১১ বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা নজিরবিহীন। এসব পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে চারটি পরমাণু পরীক্ষা এবং উস্কানিমূলক কয়েকটি আন্তঃমহাদেশীয় মিসাইল নিক্ষেপের পরীক্ষা।
যুক্তরাষ্ট্রে কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব কর্মসূচির অর্থ সংগ্রহের জন্যে এবং দেশটির অর্থনীতি সচল রাখতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ চুরির জন্য উত্তর কোরিয়ার সরকার দক্ষ ও বিশেষ হ্যাকারদের দিয়ে গঠিত একটি গ্রুপকে ব্যবহার করছে।
হ্যাকারদের ওই গ্রুপটি লাজারাস গ্রুপ নামে পরিচিত। ধারণা করা হয়, ওই গ্রুপটি উত্তর কোরিয়ার শক্তিশালী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালিত একটি ইউনিটের অংশ। ওই ইউনিটের নাম রিকনিসনস জেনারেল ব্যুরো।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বাইবেলের একটি চরিত্র লাজারাসের নামানুসারে ওই গ্রুপটির নামকরণ করেছেন। লাজারাসের মৃত্যুর কয়েক দিন পর তাকে আবার জীবিত করা হয়েছিল। ওই গ্রুপটির তৈরি ভাইরাস একবার কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ভেতরে ঢুকে পড়লে তাকে নির্মূল করাও প্রায় অসম্ভব। এ কারণেই হ্যাকারদের ওই গ্রুপটির নাম দেয়া হয়েছে লাজারাস।
কিভাবে আলোচনায় আসে
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ওই গ্রুপটি প্রথম আলোচনায় আসে যখন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৪ সালে সনি পিকচার্স এন্টারটেইনমেন্টসের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হ্যাকিংয়েএর জন্য উত্তর কোরিয়াকে অভিযুক্ত করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) অভিযোগ করে যে ‘দ্য ইন্টারভিও’ নামের একটি কমেডি সিনেমার জবাবে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা ক্ষতিকর সাইবার-আক্রমণ পরিচালনা করছে। ওই সিনেমাতে দেখানো হয় যে কিম জং উনকে হত্যা করা হয়েছে।
এরপর থেকে লাজারাস গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা ২০১৬ সালে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি ডলার চুরি করার চেষ্টা করেছে এবং ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এনএইচসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির ওপর ‘ওয়ানাক্রাই’ নামে পরিচিত সাইবার আক্রমণ চালিয়ে তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ সংগ্রহের চেষ্টা করেছে।
উত্তর কোরিয়া লাজারাস গ্রুপের অস্তিত্ব তীব্রভাবে অস্বীকার করে। এছাড়াও দেশটির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সমর্থনে হ্যাকিংয়ের যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলোও তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে আইন-প্রয়োগকারী শীর্ষস্থানীয় সংস্থাগুলো বলছে, উত্তর কোরিয়ার চালানো হ্যাকিং অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত, অনেক বেশি উদ্ধত এবং অনেক বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী।
কিভাবে অর্থ চুরি করা হয়
কসমস ব্যাংক থেকে অর্থ চুরিতে হ্যাকাররা যে পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন তাকে বলা হয় ‘জ্যাকপটিং’। বাজি খেলায় জিতলে স্লট মেশিন থেকে যেভাবে অর্থ বের হয়ে আসে তেমনি এই পদ্ধতিতেও এটিএম থেকে নগদ অর্থ নির্গত হয়।
এর আগে হ্যাকাররা ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভিন্ন উপায়ে ভেঙে দিয়েছে। প্রথমে একটি ক্ষতিকর ইমেইল পাঠানো হয়, কোনো কর্মকর্তা যখন ওই ইমেল খুলে দেখে তখন ওই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ম্যালওয়্যার দিয়ে আক্রান্ত হয়। একবার নেটওয়ার্কের ভেতরে ঢুকে পড়তে পারলে হ্যাকাররা এটিএম সুইচ নামের সফটওয়্যারের পরিবর্তন ঘটায়। এই সফটওয়্যারটি ব্যাংকের কাছে বার্তা পাঠায় এটিএম বুথ থেকে অর্থ তোলার বিষয়টি অনুমোদন করার জন্য।
তখন হ্যাকাররা তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো স্থানের এটিএম থেকে অর্থ তোলার ক্ষমতা অর্জন করে। তারা একমাত্র পরিবর্তন করতে পারে না একবারে সর্বোচ্চ কত অর্থ তোলা যাবে তার সীমা। এ কারণে তাদের প্রচুর সংখ্যক কার্ড ও প্রচুর সংখ্যক লোকের প্রয়োজন হয়।
এই চুরির প্রস্তুতি নিতে হ্যাকাররা তাদের সহযোগীদের নিয়ে ক্লোন করা এটিএম কার্ড তৈরির কাজ করেছে। এই কাজ করার জন্যে তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রকৃত তথ্য ব্যবহার করেছে, যেন তারা এটিএমে ব্যবহারের জন্য নকল কার্ডটি তৈরি করতে পারে।
ব্রিটিশ নিরাপত্তা কোম্পানি বিএই তাৎক্ষণিকভাবেই সন্দেহ করে যে এই কাজটি লাজারাস গ্রুপের। বিএই কয়েক মাস ধরেই গ্রুপটির ওপর নজর রাখছিল এবং তারা জানত যে গ্রুপটি ভারতীয় একটি ব্যাংকে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছে। তারা শুধু জানত না কোন ব্যাংকে এই হামলা চালানো হবে।
লাজারাস গ্রুপটি বহুমুখি এবং খুবই উচ্চাভিলাষী বলে জানিয়েছেন বিএইর নিরাপত্তা গবেষক এড্রিয়ান নিশ। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ অপরাধী গ্রুপ কয়েক লাখ চুরি করতে পারলেই খুশি হবে এবং এই কাজ বন্ধ করে দিবে।’
কসমস ব্যাংক থেকে অর্থ চুরির ঘটনায় যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে তা বিস্ময়কর। হ্যাকাররা কিভাবে ২৮টি দেশে তাদের সহযোগীদের খুঁজে বের করল? তাদের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার অনেক নাগরিকও রয়েছেন, যারা বৈধভাবে অন্য কোনো দেশে ভ্রমণ করতে পারেন না। হ্যাকাররা তাদেরকে কিভাবে সংগ্রহ করল?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি নিরাপত্তাবিষয়ক তদন্তকারীরা মনে করেন, লাজারাস গ্রুপটি ইন্টারনেটের অন্ধকার জগত বা ডার্ক ওয়েব থেকে মুখ্য সহায়তাকারীকে খুঁজে পেয়েছে। ওই জগতে হ্যাকিংয়ের দক্ষতা শেয়ার করা হয় এবং সেখানে অপরাধীরা সেখানে তাদের দক্ষতা ও সার্ভিস বিক্রি করে থাকে।
অন্ধকার জগতের বিগ বস
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিগ বস নামের একজন ইউজার কিভাবে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি চালাতে হয় সে বিষয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন যে তার কাছে এটিএম কার্ড ক্লোন করার যন্ত্র আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতে অর্থ তুলতে পারবে এমন কিছু গ্রুপের সাথেও তার যোগাযোগ রয়েছে বলে সে জানায়।
কসমস ব্যাংকে আক্রমণ চালানোর জন্য লাজারাস গ্রুপের এই সার্ভিসটির প্রয়োজন ছিল। তখন তারা বিগ বসের সাথে কাজ করতে শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ইনটেল-১৪৭১ এর প্রধান গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাইক ডিবোল্টকে বলা হয় এই সহযোগীদের বিষয়ে আরো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য।
ডিবোল্টের দলটি জানতে পারে যে বিগ বস অন্তত ১৪ বছর ধরে তৎপর। তার আরো কিছু নাম রয়েছে, যেমন জি, হাবিবি ও ব্যাকওয়ার্ড। বিভিন্ন ফোরামে সে একই ইমেইল ব্যবহার করায় নিরাপত্তা তদন্তকারীরা তার এসব নাম সম্পর্কে জানতে পারে।
ডিবোল্ট বলেন, ‘আসলে সে অলস। সাধারণত আমরা এমনটাই হতে দেখি। বিভিন্ন ফোরামে সে নাম পরিবর্তন করে, কিন্তু ইমেইল অ্যাড্রেস একই থাকে।
বিগ বসকে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তখন জানা যায় তার নাম ঘালিব আলাওমারি। সে ৩৬ বছর বয়সী একজন ক্যানাডিয়ান। উত্তর কোরিয়ার কথিত ব্যাংক চুরির ঘটনার মতো বেশ কিছু অপরাধের সাথে জড়িত থাকার কথা সে স্বীকার করে। তাকে ১১ বছর আট মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
কসমস ব্যাংকে চুরিসহ অন্য কোনো হ্যাকিং কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উত্তর কোরিয়া কখনোই স্বীকার করেনি। কসমস ব্যাংকে আক্রমণের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বিবিসির পক্ষ থেকে লন্ডনে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করা হয়, কিন্তু তারা কোনো উত্তর দেয়নি।
কিন্তু এর আগে যখন রাষ্ট্রদূত চো ইলের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল, তিনি তখন উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সমর্থনে হ্যাকিংয়ের অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে।’
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এফবিআই, যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস ও ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস লাজারাস গ্রুপের সন্দেহভাজন তিন হ্যাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। ওই তিন হ্যাকার হচ্ছেন জন চ্যাং হিউক, কিম ইল ও কার্ক জিন হিউক। অভিযোগে বলা হয়, তারা উত্তর কোরিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করছেন। ধারণা করা হয়, বর্তমানে তারা পিয়ংইয়ংয়ে অবস্থান করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষের হিসেবে উত্তর কোরিয়ার রয়েছে সাত হাজারের মতো প্রশিক্ষিত হ্যাকার। তারা সবাই যে উত্তর কোরিয়ার ভেতর থেকে কাজ করছে তার সম্ভাবনা কম।
উত্তর কোরিয়ার সাবেক এক কূটনীতিক রিও হিউন উ জানিয়েছেন, হ্যাকাররা কিভাবে বিদেশে থেকে কাজ করে।
২০১৭ সালে তিনি কুয়েতে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসে কাজ করতেন। ওই অঞ্চলে যে ১০ হাজার উত্তর কোরিয়ার নাগরিক কাজ করত, তিনি তাদের দেখাশোনা করতেন। ওই সময় অনেকেই উপসাগরীয় দেশগুলোতে নির্মাণ খাতে কাজ করত। তাদের মজুরির বেশিরভাগই তুলে দিতে হতো উত্তর কোরিয়ার সরকারের হাতে।
তিনি জানান, তার অফিসে উত্তর কোরিয়ার একজন হ্যান্ডলারের কাছ থেকে প্রতিদিনই ফোন কল আসত। ওই হ্যান্ডলার ১৯ জন হ্যাকারের ওপর নজর রাখত, যারা দুবাইয়ে কাজ করত এবং ছোট ছোট ঘরে বসবাস করত।
তিনি বলেন, ‘তাদের শুধু দরকার ছিল ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ আছে এমন কম্পিউটার।
উত্তর কোরিয়ার বক্তব্য
বিদেশে হ্যাকার মোতায়েনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে উত্তর কোরিয়া। দেশটি বলছে যে যেসব তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীর বৈধ ভিসা রয়েছে, শুধুমাত্র তারাই বিদেশে কাজ করে।
তবে রিউ যে বর্ণনা দিয়েছেন তার সাথে এফিবিআইয়ের অভিযোগের মিল রয়েছে।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাতে উত্তর কোরিয়ার জ্বালানি আমদানি সীমিত করা, আমদানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার পাশাপাশি জাতিসঙ্ঘের সদস্য দেশগুলোতে যেসব উত্তর কোরিয়ার নাগরিক কাজ করছে, তাদেরকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়।
তবে এখনো হ্যাকাররা তৎপর রয়েছে। এখন তারা ক্রিপ্টো-কারেন্সি কোম্পানিগুলোকে টার্গেট করছে এবং ধারণা করা হচ্ছে যে তারা এখন পর্যন্ত ৩২০ কোটি ডলার চুরি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ‘বিশ্বের শীর্ষ ব্যাংক ডাকাত’ বলে উল্লেখ করেছে যারা বন্দুকের পরিবর্তে কিবোর্ড ব্যবহার করে।
সূত্র : বিবিসি