পুতিন-শি ভিডিও বৈঠক : রাশিয়া ও চীনের সম্পর্ক অভূতপূর্ব স্তরে
- Online desk
- ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ২৩:২১, আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ২৩:২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে এক ভিডিও বৈঠকের পর রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, দু’দেশের সম্পর্ক এখন এক "অভূতপূর্ব স্তরে" পৌঁছেছে।
এএফপি জানায়, বৈঠকের পর চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে শি জিনপিংকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো’ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে আন্তর্জাতিক আইন পদদলিত করে চীন ও রাশিয়ার ব্যাপারে নাক গলাচ্ছে। চীন ও রাশিয়াকে উভয়ের নিরাপত্তা ও স্বার্থকে আরো কার্যকরভাবে অক্ষুণ্ণ রাখতে অবশ্যই আরো বেশি যৌথ উদ্যোগ গড়ে তুলতে হবে।’
এমন এক সময় এ বৈঠক হলো - যখন দু’দেশই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের ক্রমবর্ধমান সমালোচনার বিষয় হচ্ছে।
বুধবার ভিডিও কলে দু’নেতার মধ্যে ৯০ মিনিটব্যাপি এক বৈঠকে পুতিন চীন ও রাশিয়ার মধ্যেকার ‘আদর্শ সম্পর্কের’ প্রশংসা করে বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে চীনে অনুষ্ঠেয় শীতকালীন অলিম্পিকের তিনি নিজে উপস্থিত থাকবেন।
ক্রেমলিনের শীর্ষ পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেন, ‘৯০ মিনিটের এ বৈঠক ছিল খুবই ইতিবাচক।’
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দু’নেতাই বলেছেন যে রাশিয়া ও চীনের সম্পর্ক এখন যে স্তরে পৌছেছে - তা আগে কখনো ছিল না।
'প্রিয় বন্ধু'
শি জিনপিংকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে বর্ণনা করে পুতিন বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি মাসে বেজিংয়ে আমাদের দেখা হতে যাচ্ছে।’
অন্যদিকে শি জিনপিং বলেন, ‘চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক সকল কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং তাতে এখন নতুন গতিশীলতা ও প্রাণশক্তি দেখা যাচ্ছে।’
পুতিন চীনা প্রেসিডেন্টকে বলেন, দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতার যে নতুন মডেল গড়ে উঠেছে তাতে রাশিয়া-চীন সীমান্তকে স্থায়ীভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুপ্রতিবেশীসুলভ করে গড়ে তোলার অঙ্গীকার আছে।
রাশিয়া-চীন কেন এ মৈত্রীকে তুলে ধরছে
চীন ও রাশিয়া উভয়ের সাথেই সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পর্কের অবনতি হয়েছে এবং দু’দেশই এ জন্য নিজেদের ক্রমবর্ধমান মিত্রতাকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।
এ ভিডিও কলের মাত্র কয়েক দিন আগেই জি-৭ জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইউক্রেনের সীমান্তে রুশ সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি আর হংকং ও শিনজিয়াং-এ চীনা কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া চীনে ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় শীতকালীন অলিম্পিকসে কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের পাঠাচ্ছেন না। এর কারণ হিসেবে শিনজিয়াংএ উইঘুর মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর চীনের নিপীড়নের কথা বলা হয়।
বেজিং ও মস্কো উভযেই এর কড়া নিন্দা করে।
বুধবার পুতিন বলেন, তিনি ও শি জিনপিং উভয়েই খেলাধূলা ও অলিম্পিকসে রাজনীতি টেনে আনার বিরোধী।
এর আগে ২০১৪ সালে রাশিয়ার সোচিতে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকে ডোপিংয়ের অভিযোগের পর রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়, তবে রুশ এ্যাথলেটরা তাদের দেশের পতাকা ব্যবহার না করে প্রতিযোগিতা করতে পারেন।
রাশিয়ার কর্মকর্তাদের ও পুতিনকেও এরপর কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া থেকে নিষিদ্ধ করা হয় - যদি না স্বাগতিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের আমন্ত্রণ থাকে। পুতিন চীনের উইন্টার অলিম্পিকসে যাচ্ছেন শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করছে যে রাশিয়া তার প্রতিবেশী ইউক্রেনে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে এবং সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করছে। রাশিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করছে।
এ ধরনের কিছু হলে রাশিয়ার ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
রাশিয়া চাইছে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট যেন তার পূর্বমুখী সম্প্রসারণ বন্ধ করে এবং ইউক্রেনসহ তার প্রতিবেশী দেশে অস্ত্র মোতায়েন না করে।
পুতিন ইতোমধ্যে বলেন, তিনি অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সাথে নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে চান।
অন্যদিকে সম্প্রতি বাণিজ্য ও মানবাধিকার রেকর্ড থেকে শুরু করে তাইওয়ান প্রশ্নের মতো নানা বিষয় নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে চীনের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে গণতন্ত্র সম্মেলন করেন - তাতে লক্ষণীয়ভাবে রাশিয়া ও চীনের কাউকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি ।
এরপর চীন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় এবং পশ্চিমা গণতন্ত্রকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র বলে বর্ণনা করে।
সূত্র : বিবিসি