২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গ্রহাণুর আঘাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার পরীক্ষামূলক মিশনে নাসা

গ্রহাণুর আঘাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার পরীক্ষামূলক মিশনে নাসা - সংগৃহীত

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে এমন গ্রহাণুকে তার গতিপথ থেকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেবার এক প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখার জন্য মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার 'ডার্ট' নামে একটি যান বুধবার তার যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে।

পরীক্ষাটা চালানো হবে ডাইমর্ফোস নামে একটি গ্রহাণুর ওপর।

নাসার মহাকাশযানটি এর ওপর আঘাত হানবে এবং তারপর পরীক্ষা করে দেখা হবে - এর কক্ষপথ এবং গতিবেগে কোনো পরিবর্তন হলো কিনা।

বলা হচ্ছে, এটিই মানুষের প্রথম পরীক্ষা - যেখানে পৃথিবীকে রক্ষার উদ্দেশ্যে একটি গ্রহাণুর গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টা করা হবে।


কী ঘটতে পারে - যদি পৃথিবীতে কোনো গ্রহাণু আঘাত হানে?

মহাশূন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন বড় আকারের কোনো গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হানার আগেই তাকে মোকাবিলা করার এ প্রস্তাব বহুদিন ধরেই বিবেচনাধীন ছিল।

এর কারণ, কয়েকশ' মিটার চওড়া কোনো গ্রহাণু যদি পৃথিবীতে আঘাত হানে - তাহলে যে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটতে পারে, তা এতই ব্যাপক মাত্রার হবে যে তা অনুভূত হবে একটা পুরো মহাদেশ জুড়ে।

বলা হচ্ছে ১৬০ মিটার চওড়া কোনো গ্রহাণু যদি বিস্ফোরিত হয়, তা হবে একটি পারমাণবিক বোমার চাইতেও বহুগুণ বেশি প্রচণ্ড। এতে জনবসতি আছে এমন এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হবে এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যাবে।

আর ৩০০ মিটার বা তার চেয়ে বেশি বড় কোন গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত করলে যে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটবে - যা হবে একটা পুরো মহাদেশের মত বড় এলাকা জুড়ে।

যদি ১ কিলোমিটারের চেয়ে বড় আকারের গ্রহাণুর সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষ হয় - তাতে ক্ষয়ক্ষতি হবে সারা পৃথিবী জুড়ে।


'ডাইমর্ফোস' কোনো হুমকি নয়

অবশ্য ডাইমর্ফোস নামে যে গ্রহাণুটির ওপর এই পরীক্ষা চালানো হবে - তা এখন পৃথিবীর প্রতি কোনো হুমকি নয়।

নাসার 'প্ল্যানেটরি ডিফেন্স' সংক্রান্ত সমন্বয়কারীর দফতরের কেলি ফাস্ট বলছেন, ডার্ট দিয়ে আঘাত হেনে ডাইমর্ফোসের গতিবেগ বা পথে যতটুকু পরিবর্তন করা যাবে তা হবে খুবই সামান্য। তিনি বলেন, ‘কিন্তু একটা গ্রহাণুকে আঘাতের আগেই যদি চিহ্নিত করা যায়, তাহলে তা এড়ানোর জন্য ওইটুকু পরিবর্তনই যথেষ্ট।’

এ 'ডার্ট' মহাকাশযান বহনকারী রকেট ফ্যালকন-নাইন নামে একটি রকেট বুধবার ভোরে ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ স্পেস ফোর্স ঘাঁটি থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে।

এ মিশনে ব্যয় হচ্ছে ৩২ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার।


মহাশূন্যে ঘুরে বেড়ানো এসব গ্রহাণু কী

এ গ্রহাণুগুলো হচ্ছে সৌরজগৎ যা দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে, ওই গ্রহ-উপগ্রহগুলোর রয়ে যাওয়া টুকরো।

এগুলোও সূর্যের চার দিকে ঘুরছে, তবে এদের কক্ষপথ কখনো কখনো পৃথিবীর কক্ষপথের মধ্যে ঢুকে পড়তে পারে - এবং দৈবক্রমে তারা এক বিন্দুতে এসে পড়লে পৃথিবী ও গ্রহাণুর মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটতে পারে, যদিও তা বিরল ঘটনা।

এ মিশনের একজন বিজ্ঞানী টম স্ট্যাটলার বলছেন, ‘বড় গ্রহাণুর চেয়ে ছোট গ্রহাণুর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই যদি পৃথিবীতে আদৌ কখনো গ্রহাণু আঘাত হানে - তাহলে সেটা ছোট আকারের হবার সম্ভাবনাই বেশি।’

মার্কিন কংগ্রেস ২০০৫ সালে নাসাকে নির্দেশ দিয়েছিল যেন তারা পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা ১৪০ মিটারের বেশি চওড়া গ্রহাণুগুলোর ৯০ শতাংশকে খুঁজে বের করে এবং সেগুলোর ওপর নজর রাখে।

দেখা গেছে যে এ শ্রেণির কোনো গ্রহাণু পৃথিবীর প্রতি কোনো আশু হুমকি হয়ে উঠবে না, তবে এ ধরনের গ্রহাণুগুলোর মাত্র ৪০ শতাংশ আসলে আবিষ্কৃত হয়েছে।

কত বিশাল এ ডাইমর্ফোস গ্রহাণু?


নাসার ডার্ট মহাশূন্যযানের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে এক জোড়া গ্রহাণু - যাদের বলে 'বাইনারি', কারণ এদের একটি অপরটির চারদিকে ঘুরছে।

এদের মধ্যে বড়টির নাম ডিডাইমোস - যা ৭৮০ মিটার চওড়া। ছোটটির নাম ডাইমর্ফোস - এটি ১৬০ মিটার চওড়া।

ডার্ট নামে যানটি উৎক্ষেপণের পর প্রথমত এটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ কাটিয়ে মহাশূন্যে যাবে এবং সূর্যের চারদিকে তার নিজ কক্ষপথে ঘুরতে শুরু করবে।

এর পর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ ওই জোড়া গ্রহাণু যখন পৃথিবীর ৬৭ লক্ষ মাইলের মধ্যে আসবে তখনই তাদের একটির সাথে সংঘর্ষ ঘটবে ডার্টের।

ডার্টের গায়ে বসানো আছে একটি ক্যামেরা যার নাম ড্রাকো। এই ক্যামেরায় দুটি গ্রহাণুরই ছবি উঠবে - যা যানটিকে নির্ভুলভাবে ডাইমর্ফোসের ওপর আঘাত হানতে সহায়তা করবে।

ঘন্টায় প্রায় ১৫,০০০ মাইল বেগে ডাইমর্ফোসের গায়ে আঘাত হানবে ডার্ট। এতে গ্রহাণুটির গতি খুব সামান্য হলেও কমে যাবে - প্রতি সেকেন্ডে এক মিলিমিটারের ভগ্নাংশ পরিমাণ। এর ফলে এর কক্ষপথেও সামান্য পরিবর্তন হবে।

এ পরিবর্তন সামান্য হলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন পৃথিবীর সাথে ধাক্কা লাগা এড়াতে গতিপথের এতটুকু পরিবর্তনই হবে যথেষ্ট।

ডার্টের এ গ্রহাণুতে আঘাত হানার দৃশ্যের ছবি পৃথিবীতে পাঠানোর কাজ করবে আরেকটি ছোট যান - যার নাম লিসিয়াকিউব। এটি তৈরি করেছে ইতালি এবং আঘাত হানার ১০ দিন আগে একে 'মোতায়েন' করা হবে।

এ আঘাতের ফলে ডাইমর্ফোসের গতিপথে কতটা পরিবর্তন হলো - বা আদৌ হলো কিনা - তা মাপা হবে পৃথিবী থেকে টেলিস্কোপের মাধ্যমে।

মনে করা হচ্ছে এ গতিপথ পরিবর্তন হবে এক শতাংশের মতো এবং তা মাপতে কয়েক সপ্তাহ বা মাস লেগে যাবে।

ডার্টের আঘাতের ফলে ডাইমর্ফোসের গতিপথ পরিবর্তিত হবে কিনা - তা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণ হলো - এ গ্রহাণুটির অভ্যন্তরীণ গঠন বিজ্ঞানীদের এখনো অজানা।

পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক গ্রহাণুতে আঘাত হেনে তাকে সরিয়ে দেবার এ পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে কাইনেটিক ইমপ্যাক্টর টেকনিক।

তবে অন্য আরো কিছু চিন্তাভাবনাও আছে। এর একটি হলো - গ্রহাণুটিকে ধীরে ধীরে তার কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেয়া।

অপরটি হলো: গ্রহাণুটিকে পারমাণবিক বোমা দিয়ে আঘাত করা। এ বিকল্প নিয়ে হলিউডে 'আরমাগেডন' ও 'ডিপ ইমপ্যাক্ট' নামে দুটি সিনেমাও হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement