করোনার টিকা নিলে কি নারীর প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৬ আগস্ট ২০২১, ০০:১৯
বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও কোভিডের টিকার সাথে নারীর সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা এবং গর্ভপাত সংক্রান্ত কিছু মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য এখনো অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে।
গর্ভধারণের সময় নারীকে চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ দেয়ার ব্যাপারে ডাক্তাররা চরম সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন। এর ফলে আগে তারা গর্ভবতী নারীদেরকে করোনাভাইরাসের টিকা এড়িয়ে চলার কথা বলতেন।
কিন্তু এখন এ সংক্রান্ত অনেক তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, যার ফলে ডাক্তারদের দেয়া আগের পরামর্শ বদলে গেছে। শুধু তাই নয়, গর্ভবতী নারীদের এখন এই টিকা নেয়ার জন্য আরো বেশি করে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
কারণ করোনাভাইরাসের কারণেই প্রেগন্যান্সি বা গর্ভধারণ হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এখানে আমরা অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া কিছু বক্তব্যের দিকে নজর দিয়েছি এবং খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি- কেন এসব বক্তব্য ভুল।
এই গবেষণায় ইঁদুরের শরীরে টিকা দেয়া হয়েছিল এবং একজন মানুষের শরীরে যতোটুকু টিকা দেয়া হয় তার চেয়েও বহু গুণ বেশি ডোজে (১,৩৩৩ গুণ বেশি) টিকা দেয়া হয়েছিল ইঁদুরের দেহে।
দেখা গেছে টিকার ইঞ্জেকশন দেয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর পুরো ডোজের মাত্র ০.১% (এক হাজার ভাগের এক ভাগ) প্রাণীটির ওভারিতে গিয়ে জমা হয়েছে।
কিন্তু ইঁদুরের শরীরের যে জায়গায় ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে (মানুষের বেলায় সাধারণত টিকা দেয়া হয় তার বাহুতে) সেখানে এর চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণে টিকা জমা হয়েছে। দেখা গেছে এক ঘণ্টা পরে সেখানে জমা হয়েছে টিকার ৫৩% এবং ৪৮ ঘণ্টা পর জমেছে ২৫%।
এর পরে যে জায়গাতে বেশি টিকা জমা হয় সেটি লিভার বা যকৃৎ (৪৮ ঘণ্টা পরে ১৬%)। রক্ত থেকে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে এই লিভার।
কিন্তু যারা নারীর ওভারিতে টিকা জমা হওয়ার দাবি প্রচার করছেন তারা একটি ভুল তথ্য বেছে নিয়েছেন।
তারা আসলে বলছেন, ওভারিতে জমা হওয়া চর্বির কথা। টিকার কথা নয়।
টিকা নেয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর ওভারিতে চর্বির মাত্রা আসলেই বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ টিকার মধ্যে যেসব উপাদান আছে সেগুলো শরীরের যে জায়গায় ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে সেখান থেকে শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে তখনও যে তাতে ভাইরাসের জেনেটিক উপাদান রয়ে গেছে- এর পক্ষে কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
টিকা দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর কী হয়েছে সেটা আমরা জানি না। এটাই এই গবেষণার সীমাবদ্ধতা।
যুক্তরাষ্ট্রে নারীর প্রজনন ক্ষমতা সংক্রান্ত চিকিৎসক র্যান্ডি মরিস এবিষয়ে একটি গবেষণা করেছেন। তার কাছে আইভিএফ চিকিৎসা নিতে আসা কিছু নারীর ওপর নজর রাখেন তিনি। দেখার চেষ্টা করেন করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার কারণে তাদের গর্ভধারণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে কীনা।
ড. মরিসের গবেষণায় ১৪৩ জন নারী অংশ নিয়েছেন যাতে টিকা নেয়া, না নেয়া এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন এমন নারীরাও ছিলেন। দেখা গেছে তাদের মধ্যে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে তেমন কোনো তারতম্য ঘটেনি।
ড. মরিস বলছেন, যেসব মানুষ এধরনের ভয় ছড়াচ্ছেন তারা কিন্তু ব্যাখ্যা করছেন না যে টিকা নেয়ার কারণে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি, নারীর প্রজনন ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে- এই ধারণা তারা কেন বিশ্বাস করছেন।
সমস্যা হচ্ছে, লোকজনকে আশ্বস্ত করতে বিজ্ঞানীরা যখন তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরেন, তার আগেই লোকজন অনলাইনে অন্যান্য বিষয়ের দিকে সরে যান।
যেমনটা ড. মরিস বলছিলেন, এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে যখনই এগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করা হয়, তখনই লোকেরা গোলপোস্ট অন্যদিকে সরিয়ে নেয়।
সূত্র : বিবিসি