ইয়োগা স্কুলে যৌন নিগ্রহ : তদন্তে যা পাওয়া গেল
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৭ জুলাই ২০২১, ১১:১৬, আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২১, ১১:১৭
বিশ্বজুড়ে ইয়োগা শিক্ষার একটি প্রধান প্রতিষ্ঠান হচ্ছে শিভানন্দা। এটির শাখা রয়েছে বিভিন্ন দেশে। এরই একজন প্রশিক্ষক ছিলেন বিবিসির সাংবাদিক ইশলিন কউর। ঘটনাচক্রে তার চোখে পড়েছিল সামাজিক মাধ্যমের একটি পোস্ট। যা পড়ে বিচলিত হয়ে তিনি নিজেই শুরু করেন এক তদন্ত। তার তদন্তে বেরিয়ে আসে যৌন হয়রানির অসংখ্য অভিযোগ। যা কয়েক দশক আগে থেকে শুরু করে অতি সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত চলছিল।
আমি প্রথম যোগ ব্যায়াম বা ইয়োগার সাথে পরিচিত হই যখন আমার বয়স ২০-এর কোঠার মাঝামাঝি। তখন থেকেই এটি আমার জীবনের একটা বড় অংশ হয়ে যায়।
আমি যেখানে থাকতাম- সেখানকার স্থানীয় শিভানন্দা সেন্টারে আমি শুধু ক্লাসই নিতাম না, সেখানে রান্না করতাম, পরিষ্কার করার কাজও করতাম।
আমার জীবনের প্রতিটি দিকে শিভানন্দার শিক্ষার প্রভাব পড়েছিল।
আমি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আমার ফোনে একটা নোটিফিকেশন পাই। এটা ছিল শিভানন্দার ফেসবুক পাতায় একজন নারীর দেয়া পোস্টের ব্যাপারে।
জুলি সল্টার নামের ওই নারী পোস্টে লিখেছেন, শিভানন্দার অত্যন্ত সম্মানিত পরলোকগত প্রতিষ্ঠাতা স্বামী বিষ্ণুদেবানন্দ তার ওপর তিন বছর ধরে যৌন অত্যাচার চালিয়েছিলেন।
এ ঘটনা ঘটেছিল কানাডায়, শিভানন্দার হেডকোয়ার্টার্সে।
তিনি আরো লিখেন, কয়েক দশক পরে তিনি সাহস সঞ্চয় করে এ ঘটনার কথা শিভানন্দার ম্যানেজমেন্ট বোর্ডকে জানান। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া ছিল নীরবতা থেকে শুরু করে আমাকে চুপ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা পর্যন্ত সবই। এর পর থেকে আমি এ পর্যন্ত ১৪ জন নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছি, যারা অভিযোগ করেছেন যে শিভানন্দার প্রশিক্ষকরা তাদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন।
তাদের অনেকেই একথা তাদের পরিবার বা বন্ধুদের বলেননি, প্রকাশ করা তো দূরের কথা।
শিভানন্দার একজন সাবেক নারী কর্মচারীর সাথেও আমার কথা হয়। তিনি বলেছেন যে প্রতিষ্ঠানের বোর্ড এ ব্যাপারে তার উদ্বেগকে আমলে নেয়নি।
আমার তদন্তে বের হয়ে এসেছে- কীভাবে আমার প্রাণপ্রিয় এই প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ক্ষমতা ও প্রভাবকে ব্যবহার করে নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে।
আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে দক্ষিণ ভারতের কেরালায় আমার প্রথম শিভানন্দার আশ্রমে যাওয়ার কথা। এখানেই ২০১৪ সালে আমি একজন ইয়োগা শিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেই।
ঘরের দেয়ালে ছিল স্বামী বিষ্ণুদেবানন্দের এক বিশাল ছবি, শিভানন্দার পরলোকগত প্রতিষ্ঠাতা। তার প্রশিক্ষণের প্রভাব ছিল এমনই যে অনেকে দুনিয়াদারি ছেড়ে দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের জন্যই তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
তখন আমি জীবনের এক কঠিন সময় পার করছিলাম। কিন্তু তখন শিভানন্দা আমাকে শান্তি দিয়েছিল।
ইয়োগার বিভিন্ন আসন করে আমি শারীরিক শক্তি পাচ্ছিলাম, আবার শিভানন্দার নীতি, ইতিবাচক চিন্তা এবং ধ্যান থেকে আমি পাচ্ছিলাম আত্মার শান্তি।
আমি ২০১৫ সালে এমন একজনকে বিয়ে করি যিনি লন্ডন থাকতেন। সেখানে গিয়ে আমার কেমন লাগবে এই দুর্ভাবনার মধ্যে আমি জানতে পারলাম আমাদের বাড়ির অদূরেই পাটনি এলাকায় শিভানন্দার একটি কেন্দ্র আছে।
আমার স্বামী ঠাট্টা করে বলতেন, আমার প্রথম প্রেম তার সাথে নয়, বরং ওই কেন্দ্রের সাথে।
জুলি সল্টারের ফেসবুক পোস্টটির দু'মাস পর শিভানন্দার দুজন বোর্ড সদস্য ইউরোপ থেকে লন্ডনে এলেন- পাটনির স্টাফদের সাথে কথা বলতে।
আমার মাথায় যে সব প্রশ্ন ঘুরছিল, ভেবেছিলাম তারা অন্তত এর কিছু প্রশ্নের জবাব দেবেন। কিন্তু তাদের উত্তর ছিল খুবই অস্পষ্ট, এবং প্রশ্নোত্তর পর্বের সময় মনে হলো, তারা গা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আমি বুঝলাম, আমাকে জুলির সাথে কথা বলতে হবে।
জুলির আদি বাড়ি নিউজিল্যাণ্ডে। মাত্র ২০ বছর বয়সে ইসরাইলে বেড়াতে গিয়ে তিনি প্রথম শিভানন্দার কথা জানতে পারেন। খুব দ্রুতই এর সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি এবং ১৯৭৮ সালে কানাডায় এর হেডকোয়ার্টারে যোগ দিলেন তিনি। তখন স্বামী বিষ্ণুদেবানন্দ সেখানেই থাকতেন।
জুলিকে বলা হলো তার ব্যক্তিগত সহকারী হওয়ার জন্য। তিনি একে একটা সম্মানজনক প্রস্তাব হিসেবেই নিলেন। কিন্তু তার দৈনিক কাজের সূচি ছিল অত্যন্ত কঠোর।
তাকে ভোর ৫টায় উঠতে হতো, কাজ করতে হতো প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত, এবং সপ্তাহের সাত দিনই কাজ। এ জন্য তাকে কোনো বেতনও দেয়া হতো না।
তিনি বলছেন, স্বামী বিষ্ণুদেবানন্দের মেজাজমর্জি কখন কেমন তা অনুমান করা যেতো না। তিনি প্রায়ই জুলির উদ্দেশ্যে চিৎকার করতেন। ফলে আমার সহ্যের সীমাও ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিল। এর পর একদিন ঘটনা আরো গুরুতর মোড় নিলো।
একদিন জুলি বিষ্ণুদেবানন্দের বাড়িতে কাজ করছিলেন। তিনি দেখলেন- গুরু শুয়ে শুয়ে ভক্তিমূলক গান শুনছেন।
তিনি জুলিকে এসে তার পাশে শুতে বললেন। জুলি বললেন, তিনি বুঝতে পারছেন না যে স্বামী বিষ্ণুদেবানন্দ কী চাইছেন।
তিনি বললেন, ‘তন্ত্র ইয়োগা।’ এটি এমন একধরনের ইয়োগা যার সাথে আধ্যাত্মিক যৌন মিলনের সম্পর্ক আছে। তবে সাধারণভাবে এর মানে হলো দেহকে গভীরভাবে শিথিল করে দেয়ার মধ্যে দিয়ে আধ্যাত্মিক আলোকপ্রাপ্ত হওয়া।
যদিও জুলি বলছেন, বিষ্ণুদেবানন্দ একবারই মাত্র এ বিষয়টির কথা বলেছিলেন একটি বক্তৃতার সময়।
জুলি বললেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছি না। এর পর, যদিও আমার পুরো শরীর ও মন বলছে ‘না না’, কিন্তু তবু আমি শুয়ে পড়লাম। এর পর যৌন সংসর্গ ঘটলো। এর পর আমি আবার নিচের তলায় নেমে এলাম, কাজ করতে থাকলাম, গভীর লজ্জা, ক্ষোভ, অপরাধবোধ নিয়ে নিজেকে নিজে দোষ দিতে থাকলাম।’’
জুলি বলছেন, তাকে বিভিন্ন যৌন ক্রিয়ায় বাধ্য করা হয়েছিল, যৌন মিলন পর্যন্ত। এটা চলেছিল তিন বছর ধরে।
গুরু-শিষ্য সম্পর্ককে ইয়োগায় বলা হয় গুরু-শিষ্য পরম্পরা। এই সম্পর্কের না-বলা নিয়ম হলো গুরুর ইচ্ছার কাছে শিষ্যকে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে।
জুলি এখন মনে করেন, বিষ্ণুদেবানন্দের কার্যকলাপ ধর্ষণ বলে বিবেচিত হতে পারে।
জুলি বলছেন, গুরুর ক্ষমতার তুলনায় তার অবস্থান ছিল দুর্বল- তাই তার এটা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
জুলি বলেন, আমি তখন আমার অতীত জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন, পরিবার থেকে অনেক দূরে পৃথিবীর আরেক প্রান্তে থাকি। তা ছাড়া আমি আর্থিকভাবেও তখন এ প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম।
জুলি ফেসবুকে পোস্টটি দেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তারা এতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছিলেন, বিষ্ণুদেবানন্দ তাদের ওপরও যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন।
তাদের একজন- পামেলা বললেন, ১৯৭৮ সালে লন্ডনের উইণ্ডসর দুর্গে এক অবকাশ যাপনের সময় বিষ্ণুদেবানন্দ তাকে ধর্ষণ করেছিলেন। এ সময় তিনি গভীর তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ‘শবাসনে’ অর্থাৎ লাশের মতো ভঙ্গীতে শুয়েছিলেন।
অপর জনের নাম লুসিল।
তিনি বলেন, ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি ক্যানাডার আশ্রমে বিষ্ণুদেবানন্দ তাকে তিন বার ধর্ষণ করেছিলেন।
লুসিল বলছেন, প্রথম দুই বার তিনি একে ‘তান্ত্রিক ইয়োগা’ বলে ধরে নিয়ে একে মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয়বার বিষ্ণুদেবানন্দ তাকে অর্থ দিয়েছিলেন। তার তখন নিজেকে ‘বেশ্যার মতো মনে হয়েছিল।’
বিষ্ণুদেবানন্দের মৃত্যুর পরও এসব ঘটনা ঘটছে
বিষ্ণুদেবানন্দ মারা যান ১৯৯৩ সালে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাওয়ার মতো মনোবল গড়ে তুলতে জুলির আরো ছয় বছর লেগেছিল।
তিনি চাইছেন যে তার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি তার মতো আরো অনেককে এই মর্মযন্ত্রণা থেকে রক্ষা করতে চান।
কারণ আমি আবিষ্কার করেছি যে বিষ্ণুদেবানন্দ মারা গেলেও তার প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন বন্ধ হয়নি।
জুলির ফেসবুক পোস্টটি একটি দরজা খুলে দিয়েছিল।
এদের একজন এখনো এ প্রতিষ্ঠানে সক্রিয় বলে বিবিসি বিশ্বাস করে, যদিও শিভানন্দা এটা অস্বীকার করেছে।
মেরি নামে একজন (তার আসল নাম নয়) বলছেন, একজন শিক্ষক বেশ কয়েক বছর ধরে তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। এটা যখন যৌন সম্পর্কের রূপ নিতে থাকে তখন তিনি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন, কিন্তু তার এটা মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না।
এ দিকে এক বছরেরও বেশি সময় তাদের কোনো যৌন সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু হঠাৎ এক দিন তিনি কোনো আমন্ত্রণ ছাড়াই মেরির ঘরে ঢুকে একটিও কথা না বলে তার সাথে যৌনক্রিয়া শুরু করেন। ব্যাপারটা শেষ হওয়ার পরও তিনি কোনো কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যান।
আরেক জন হলেন ক্যাথরিন (আসল নাম নয়) বলছেন, ১৯৮০-এর দশকে যখন তার বয়স যখন মাত্র ১২ তখন তিনি ক্যানাডায় শিভানন্দার একটি শিশুদের ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিলেন।
সেই একই শিক্ষক তখন তার দিকে যৌন আগ্রহ দেখাতে থাকেন। তিনি প্রথম দিকে ক্যাথরিনের শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতেন। যা কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে। এর পর ১৭ বছর বয়সে ক্যাথরিন এক দিন ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় এই শিক্ষক তার ওপর যৌন আক্রমণ চালান। সেদিনই তিনি এ প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যান।
আরেকজন অভিযোগকারী বলেছেন, ২০১৯ সালেও এ ব্যক্তি তার ওপর যৌন আক্রমণ চালিয়েছেন।
আমরা এই লোকটির সাথে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে তাকে প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ দেই। কিন্তু তিনি অভিযোগগুলোর জবাব দিতে ব্যর্থ হন।
তিনি এখনো এ প্রতিষ্ঠানের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত বলে বিবিসি মনে করে, যদিও শিভানন্দা এটা অস্বীকার করে বলেছে, তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
কিন্তু বিবিসি খবর পেয়েছে যে এখনো শিভানন্দার ভারতীয় আশ্রমগুলোর সাথে তিনি জড়িত আছেন।
স্বামী মহাদেবানন্দ
আরেকজন শিক্ষকের নাম মরিৎসিও ফিনোচ্চি। তিনি ‘স্বামী মহাদেবানন্দ’ নামে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে যৌন আক্রমণের অভিযোগ এনেছেন এমন আটজন নারীর সাথে আমি কথা বলেছি।
তাদের একজন ওয়েন্ডি। তিনি অভিযোগ করেন, এক দিন সকালে মহাদেবানন্দ তাকে তার প্রাতরাশ ও কিছু ইমেইল নিয়ে তার বেডরুমে আসতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর তিনি ওয়েন্ডির হাত ধরে ফেলেন এবং তার ওপর স্বমেহন করেন।
ওয়েন্ডি বলছেন, কোনো নারী এসব নিয়ে শিভানন্দার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করতে গেলে তারা এসব ঘটনাকে ‘গুরুর কৃপা’ বলে বর্ণনা করেন। তাদের বলা হয়- ‘আসলে আপনাকে মূল্যবান কিছু প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।’
মহাদেবানন্দের সাথে এ ব্যাপারে আমরা যোগাযোগ করে তার প্রতিক্রিয়া চাইলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
তবে শিভানন্দার সদস্যদের একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে যার নাম প্রজেক্ট সত্য। এর আইনজীবীর কাছে পাঠানো এক ইমেইলে স্বামী মহাদেবানন্দ তার ‘দুষ্কর্মের’ জন্য দুঃখ প্রকাশ করে প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি চেষ্টা করবেন যেন আর কখনো এমন না ঘটে।
তিনি বলছেন, সেই বোর্ড সদস্যটি হচ্ছেন স্বামী মহাদেবানন্দ। তার বিরুদ্ধেও যে যৌন অত্যাচারের অভিযোগ আছে তা তখন জুলি জানতেন না।
এরকম চারজন বোর্ড সদস্যকে জুলি তার অভিযোগ জানান। তবে ট্রাস্টিরা এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা হওয়ার কথা অস্বীকার করেন। মহাদেবানন্দের এক ইমেইল বার্তা বিবিসি দেখেছে যাতে তিনি জুলির সাথে ‘অনানুষ্ঠানিক’ সাক্ষাতের কথা নিশ্চিত করেন, এবং বলেন ওই সাক্ষাতের পর অভিযোগগুলোর কথা সবারই জানা ছিল। ইবিএমের সাথে জুলির আর্থিক সহায়তা পাওয়ার ব্যাপারেও কথা হয়, যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি। পরে জুলি আইনজীবীর মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
এর পর শিভানন্দা তার সদস্য ও অতিথিদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির কিছু প্রটোকল বাস্তবায়ন শুরু করে।
আমাদের তদন্তে দেখা গেছে, মহাদেবানন্দের যৌন অসদাচরণের ব্যাপারে বোর্ড ১৯৯৯ সাল থেকেই জানতো - কারণ তিনি নিজেই তা স্বীকার করেছিলেন।
ওয়েন্ডি যখন তার ঘটনাটি কানাডার হেডকোয়ার্টার্সে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানান, তখন তিনি খুব বেশি অবাক হননি।
তিনি তাকে এ নিয়ে ভাবতে নিষেধ করে বলেন, স্বামী মহাদেবানন্দের জন্য কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ।
ওয়েন্ডি বলছেন, তখন তার জানা ছিল না যে কানাডায় এ ঘটনা যৌন অপরাধ বলে বিবেচিত হবে এবং ঘটনাটি পুলিশের কাছে নিয়ে যাওয়া যেত।
ইবিএম শেষ পর্যন্ত মহাদেবানন্দের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ১৩ বছর পর। এবং এর পর, তাদের মাসিক ম্যাগাজিনে ঘোষণা করা হয় যে মহাদেবানন্দ অবসর নিয়েছেন।
এই রিটায়ারমেন্টের সুযোগসুবিধার অর্থায়ন ইবিএমই করছে তা স্বীকার করে নিয়ে মহাদেবানন্দ যে সেবা দিয়েছেন- তার জন্য তাকে ধন্যবাদ দেয় বোর্ড।
প্রজেক্ট সত্য-র আইনজীবী ক্যারল মার্শাসিন বলছেন, তিনি ২৫ থেকে ৩০ জন নারীর সাথে কথা বলেছেন। যারা শিভানন্দার স্টাফদের বিরুদ্ধে যৌন আক্রমণের অভিযোগ আনেন। তার মতে প্রতিটি অভিযোগই ছিল ‘বিশ্বাসযোগ্য।’
ইবিএম এ ব্যাপারে সাক্ষাতকার দিতে রাজি হয়নি, তবে তারা একটি বিবৃতি দিয়েছে।
এতে বলা হয়, ট্রাস্টি বোর্ড অভিযোগকারীদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছে, এবং তারা কোনো অত্যাচার বা অসদাচরণ বরদাস্ত করবে না। এতে অতীতে সংঘটিত ঘটনাবলীর জন্য দুঃখপ্রকাশ করা হয়।
আরো বলা হয়, শিভানন্দা এসব অভিযোগের ব্যাপারে একটি স্বাধীন তদন্ত শুরু করেছে, নিরাপদ পরিবেশ রক্ষার জন্য নীতি প্রণয়ন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে, এবং যে কোনো অভিযোগ জানানোর জন্য গোপন রিপোর্টিংয়ের ব্যবস্থা করেছে।
আমি জানি যে আমার তদন্তের সময় যারা কথা বলেছে তারা সবাই পশ্চিমা নারী। কিন্তু ভারতীয়রাও এরকম নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। যা অনেকে ইমেইল করে জানিয়েছেন।
কিন্তু তারা এতই ভীত যে তারা এ ব্যাপারে আমার সাথে কথা বলতে চাননি।
সূত্র : বিবিসি