সুয়েজ খালের ঘটনায় কি শাস্তি পাচ্ছেন ভারতীয় নাবিকরা?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০১ এপ্রিল ২০২১, ১৭:০৯
বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান পথ সুয়েজ ক্যানালে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আটকে ছিল এভার গিভেন জাহাজ। গত সোমবার অবশেষে আবারো ভেসেছে জাহাজটি। কিন্তু ওই জাহাজের ২৫ জন ভারতীয় নাবিকের জন্য অপেক্ষা করছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
জাহাজটির আটকে থাকার কারণ জানতে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে মিশর কর্তৃপক্ষ।
বিশালাকার কার্গো জাহাজটি জাপানের মালিকানাধীন। এ জাহাজটি পানামার পতাকাবাহী এবং তাইওয়ানের ‘এভারগ্রিন’ কোম্পানি পরিচালনা করলেও জাহাজের ক্যাপ্টেন-নাবিক সবাই ছিলেন ভারতীয় নাগরিক।
বিবিসির দেয়া তথ্য মতে, সুয়েজ খালে জাহাজটি আটকে যাওয়ার পর ভারত সরকার তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে আশ্বস্ত করেছে নাবিকদের সুরক্ষার জন্য তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। তবে জাহাজের ক্যাপ্টেন বা নাবিকদের পরিচয় তারা এখনো প্রকাশ করেনি।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ওই ২৫ জন নাবিকের বেশির ভাগই ছিলেন তেলেঙ্গানা, কেরালা বা তামিলনাডু রাজ্যের বাসিন্দা। ক্যাপ্টেন নিজেও একজন দক্ষিণ ভারতীয়।
ভারতের শিপিং ইন্ডাস্ট্রি বা জাহাজ চলাচল শিল্পের সাথে যুক্তরা অনেকেই মনে করছেন, সুয়েজের ওই দুর্ঘটনার জেরে ভারতীয় নাবিকদের ফৌজদারি চার্জের মুখোমুখি হতে হবে।
ইতোমধ্যেই ওই ২৫ জন নাবিককে সুয়েজে ‘গৃহবন্দী’ রাখা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সুয়েজ ক্যানাল কর্তৃপক্ষের তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত তাদের দেশ ছাড়ার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ভারতে মার্চেন্ট নেভি অফিসারদের বৃহত্তম সংগঠন ‘দ্য মেরিটাইম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’র একটি পদস্থ সূত্র বিবিসিকে বলেন, ‘আসলে সুয়েজ ক্যানাল অথরিটির নিজস্ব কিছু আইনকানুন আছে, যা আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বা সমুদ্র আইনের চেয়েও অনেক বেশি কড়া।’
তিনি আরো বলেন, যেমন ধরুন, যখনই কোনো জাহাজ ওই ক্যানালে প্রবেশ করবে তার আগে থেকেই অথরিটির নিজস্ব দু’জন পাইলট জাহাজে উঠে দায়িত্ব নেবেন ও পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু তারপরও জাহাজ যদি কোনো দুর্ঘটনায় পড়ে সে ক্ষেত্রে তার দায় কিন্তু জাহাজের ক্যাপ্টেনের ওপরই বর্তাবে, ওই পাইলটদের ওপর নয়।’
ভারতের শিপিং ইন্ডাস্ট্রির তরফে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই কারণেই দুর্ঘটনার দায় শেষ পর্যন্ত ভারতীয় নাবিকদের ওপরেই পড়ার একটা আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ মার্চ সকালে এভার গিভেন যখন সুয়েজ খাল ধরে এগোচ্ছিল। তখন প্রবল ধুলাঝড় আর জোরালো বাতাসে জাহাজটির অভিমুখ বেঁকে যায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। পরে জাহাজটিকে খালের আড়াআড়িভাবে আটকে দেয়। এর পরিণতিতে প্রায় সাড়ে ৩০০ মালবাহী জাহাজ খালের দুদিকে আটকে পড়ে। অনেক জাহাজকে কেপ টাউন হয়ে পুরো আফ্রিকা ঘুরে ইউরোপের দিকে পাড়ি দিতে হয়।
এদিকে ভারতের ন্যাশনাল শিপিং বোর্ডের সদস্য ক্যাপ্টেন সঞ্জয় পরাশর জানাচ্ছেন, ‘ঠিক কীভাবে জাহাজটি ক্যানালকে আটকে দিলো তার তো তদন্ত হবেই। এটা সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এখানে ভারতীয় নাবিকদের দায় কতটা, জাহাজের ‘শিপ ভয়েজ ডেটা রেকর্ডার’ থেকে কথপোকথন শুনলেই তা পরিষ্কার হবে বলে মনে করি।’
দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাংবাদিক পি সুশীল রাও ওই জাহাজের ভারতীয় নাবিকদের নিয়ে খোঁজখবর রাখছেন প্রথম থেকেই। তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, ‘আমি যতদূর জানতে পারছি জাহাজটির জাপানি মালিকদের সাথে সুয়েজ ক্যানাল অথরিটির এই মুহূর্তে আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। ওই আলোচনা ফলপ্রসূ হলে এই সঙ্কট হয়তো সহজেই মিটে যাবে। এ ছাড়া ভারতীয় নাবিকরা হয়তো কড়া শাস্তি এড়াতে পারবেন। কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত হবে কি-না, তা অনেকগুলো ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করছে।’
এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই মুম্বাই-ভিত্তিক ‘ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব সিফেয়ারার্স অব ইন্ডিয়া’ এভারগিভেন জাহাজের সব ভারতীয় নাবিকের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে।
ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুলগনি সেরাং টুইট করেছেন, ‘আমি ওই নাবিকদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা সুস্থ আছেন, কিন্তু প্রচন্ড চাপের মুখে আছেন। তবে তারা এই বিপদে একা নন। যখনই দরকার হবে এবং যেভাবে দরকার হবে, আমরা তাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি।’
ওই নাবিকদের আইনি সুরক্ষা দেয়ার জন্য ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কূটনৈতিক চ্যানেলে অনানুষ্ঠানিকভাবে মিশরের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছে বলে বিবিসি জানতে পেরেছে।
সূত্র : বিবিসি