শামীমা বেগম কি আর কখনো ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পাবেন?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২৩:১০
লন্ডন থেকে পালিয়ে ইসলামিক স্টেটের সাথে যোগ দিতে সিরিয়ায় যাওয়া তরুণী শামীমা বেগমের আপাতত ব্রিটেনে ফেরা হচ্ছে না যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
বর্তমানে ২১ বছর বয়সী শামীমা বেগম তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য যুক্তরাজ্যে ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে ব্রিটেনে এসে আপিল করার সুযোগ দেয়া হবে না বলে রায় দিয়েছে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট।
বিবিসির সংবাদদাতা ডমিনিক কাসচিয়ানি বলছেন, শামীমা বেগম চেয়েছিলেন তার কৃতকর্মের জন্য তাকে যেন ক্ষমা করা হয়। কিন্তু তিনি যা পেলেন তা হলো : তার দু'বছরব্যাপী আইন লড়াই এখন কার্যত চলে গেল হিমাগারে, এবং এর ফাঁদে আটকা পড়ে গেলেন তিনি।
তার সামনে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, তিনি আর কখনো ব্রিটেনে ফিরে আসতে পারবেন কিনা, এবং তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফেরত পাবেন কিনা।
নাগরিকত্বের মামলার এক বিচিত্র পরিণতি
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শামীমা বেগম ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন এলাকা থেকে আরো দুজন স্কুলছাত্রীসহ যুক্তরাজ্য ত্যাগ করে তুরস্ক হয়ে সিরিয়া চলে যান, এবং ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর সাথে যোগ দেন।
তখন শামীমা বেগমের বয়স ছিল ১৫। সেখানে তিনি একজন ডাচ জিহাদিকে বিয়ে করেন। তাদের তিনটি সন্তান হয় তবে তারা সবাই শিশু বয়সেই মারা যায়।
শামীমা বেগম এখন উত্তর সিরিয়ায় সশস্ত্র রক্ষীর প্রহরাধীন একটি শিবিরে বাস করছেন।
যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার জন্য শামীমার আইনী লড়াই
২০১৯ সালের প্রথম দিকে লন্ডনের দৈনিক দি টাইমসের একজন সাংবাদিক সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে শামীমা বেগমের খোঁজ পান।
ওই সাংবাদিকের মাধ্যমে শামীমা বেগম ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন যে তাকে যেন ব্রিটেনে ফেরত আসতে দেয়া হয়।
সে অনুমতি না দিয়ে সরকার তার নাগরিকত্ব বাতিল করে।
ওই সময় শামীমা বেগমের মা বাংলাদেশী এ কারণে তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় চাইতে পারেন এমন কথা বলা হয়েছিল।
শামীমা বেগম কি রাষ্ট্রবিহীন নাকি বাংলাদেশের নাগরিকত্বে দাবিদার?
যুক্তরাজ্যের অবশ্য আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে যে তাকে দেখতে হবে নাগরিকত্ব বাতিলের ফলে কেউ রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বেন কিনা।
শামীমা বেগমের ক্ষেত্রে কোন কোন আইনবিদ যুক্তি দিয়েছেন যে তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হরণ করা হলে তিনি রাষ্ট্রবিহীন হয়ে পড়বেন কারণ তার অন্য আর কোন দেশের নাগরিকত্ব নেই। তাই তার নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ হয়তো আদালতে টিকবে না।
কিন্তু ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ট্রাইবুনাল রুল জারি করে যে, শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল আইনসম্মত কারণ তার মায়ের জন্মসূত্রে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। যুক্তরাজ্যের কয়েকজন আইনজীবীও বিবিসিকে একথা বলেছেন।
অবশ্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করে না, এবং তাকে সেদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে এক বিবৃতিতে বলেছিল যে শামীমা বেগমকে একজন বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে যা সঠিক নয় এবং এ জন্য তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
বিবৃতিতে বলা হয়, শামীমা বেগম কখনো বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব চাননি এবং কখনো বাংলাদেশে আসেনওনি।
শামীমা বেগম নিজেও বিবিসির কুয়েন্টিন সমারভিলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তার মাত্র একটি দেশেরই নাগরিকত্ব আছে এবং তা যুক্তরাজ্যের।
‘আমার জন্ম বাংলাদেশে নয়, আমি সেদেশ কখনো দেখিনি, এবং আমি ঠিকমত বাংলা বলতেও পারিনা। তাই তারা কিভাবে দাবি করতে পারে যে আমি বাংলাদেশের নাগরিক?’ বলেছিলেন তিনি।
তাহলে শামীমা বেগমের ভাগ্যে কী আছে?
বিবিসির আইন ও স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংবাদদাতা ডমিনিক কাসচিয়ানি বলছেন, আদালত রায় দিয়েছে যে শামীমা বেগম সশরীরে ব্রিটেনে এসে তার নাগরিকত্ব বাতিলের মামলা লড়তে পারবেন না।
দেখা গেছে যুক্তরাজ্যে ঢোকার অধিকার হারিয়েছেন এমন অনেকেই বাইরে থেকে আপিলে অংশ নিতে পেরেছেন। কিন্তু যেহেতু শামীমা বেগম অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় একটি সশস্ত্র প্রহরাধীন শিবিরে আছেন তাই তার আইনজীবীরাও তার সাথে দেখা করতে পারবেন না।
এ জন্য যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত বলছে, পুরো মামলাটি তাই এখন বন্ধ রাখতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না শামীমা বেগম এতে অংশ নেবার একটা উপায় বের করতে পারেন।
ডমিনিক কাসচিয়ানি বলছেন, এমন হতে পারে যে তা হয়তো কখনোই সম্ভব হবে না।
সূত্র : বিবিসি