করোনায় আরো ১৫ হাজার মৃত্যু
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৮ জানুয়ারি ২০২১, ১০:২৪
বিশ্বে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮ কোটি ৮৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯৬৩। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা এখন কমপক্ষে ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৩০ জন; দুদিন আগেও যে সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৯০ হাজার ৮৭২।
মহামারীর শুরু থেকে বিশ্বের সব দেশ ও অঞ্চলের করোনা সংক্রমণের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস নামের একটি ওয়েবসাইট। তাদের সর্বশেষ তথ্য বলছে, আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা নাগাদ বিশ্বে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮ কোটি ৮৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯৬৩। একই সময় নাগাদ বিশ্বে করোনায় মোট মারা গেছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৩০ জন।
ওয়ার্ল্ডোমিটারসের সর্বশেষ তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ৩৬ লাখ ৬ হাজার ২৫২ জন।
বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ২১ লাখ ৩২ হাজার ৪৫। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ৩ লাখ ৭৪ হাজার ১২৪ জন।
ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৪ লাখ ১৪ হাজার ৪৪। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৬০৬।
ব্রাজিল আছে তৃতীয় অবস্থানে। ব্রাজিলে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭৯ লাখ ৬১ হাজার ৬৭৩। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ২ লাখ ৪৯৮ জন। তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। যুক্তরাজ্য পঞ্চম। ফ্রান্স ষষ্ঠ। তুরস্ক সপ্তম। ইতালি অষ্টম। স্পেন নবম। জার্মানি দশম। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৭তম।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
করোনা ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশ্ন ওঠে, ভাইরাসটি কি প্রাকৃতিক, না কি ল্যাবরেটরিতে তৈরি? যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ দাবি করে, চীন পরীক্ষাগারে ওই ভাইরাস তৈরি করেছে। উহানের একটি ল্যাবরেটরি থেকে কীভাবে ভাইরাসটি বাইরে চলে আসে, সে বিষয়েও নানা বিতর্কিত তথ্য সামনে আসতে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য বরাবরই চীনের পাশে দাঁড়িয়েছে। ভাইরাসটিকে প্রাকৃতিক বলেও দাবি করেছে তারা। বস্তুত, এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ডাব্লিউএইচও-র বিতর্কও হয়। ট্রাম্প তাদের অর্থায়ন বন্ধ করে দেন।
চীনে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যু হয় ২০২০ সালের জানুয়ারি। তবে তার ঘোষণা আসে ১১ জানুয়ারি। এর কয়েকদিন পরই, ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। পরে বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে।
করোনার প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চীনের বাইরে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটে ফিলিপাইনে।
১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট রোগের নামকরণ করে ‘কোভিড-১৯’। গত ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সর্বশেষ যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩১ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। এ নিয়ে দেশে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ হাজার ৭১৮ জনে। নতুন করে ১০০৭ জনের শরীরে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ১৯ হাজার ৯০৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
তার আগের দিন ১৭ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল অধিদপ্তর।
যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে মৃত্যুর রেকর্ড
জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হিসাবে করোনা আক্রান্ত হয়ে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। রোনাভাইরাসে সংক্রমণ এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও দেশটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। করোনা বিধিনিষেধের কারণে অনেক আমেরিকান সাধারণ জীবনযাপন করতে না পেরে হাঁপিয়ে উঠেছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনা বিধি মেনে চলার আহ্বান জানালেও অনেকেই তাতে সাড়া দিচ্ছেন না। এছাড়া দেশটিতে প্রত্যেকদিন গড়ে নতুন করে দুই লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
গত বছর নির্বাচনী ডামাডোল শুরুর পর থেকে এই মহামারী মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এমনকি জনস্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছিলেন মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট।
টোকিওতে জরুরি অবস্থা জারি
করোনাভাইরাসের দৈনিক সংক্রমণ রেকর্ড বৃদ্ধির পর জাপানের রাজধানী টোকিওতে মাসব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। করোনা মহামারি মোকাবিলায় জারিকৃত এই জরুরি অবস্থা আজ থেকে কার্যকর হবে বলে গতকাল জানিয়েছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা।
তিনি বলেছিলেন, দেশজুড়ে নতুন করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তারে জনগণের জীবন এবং অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। তবে জরুরি অবস্থার সময় যেসব করোনাবিধি কার্যকর করা হবে তা বিশ্বের অন্যান্য অংশের কঠোর লকডাউনের মতো হবে না। এমনকি গত বসন্তে দেশটির প্রথম দফার লকডাউনের মতো কঠোরও হবে না বলে জানান তিনি।
ভ্যাকসিন নিয়ে যত কথা
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন হালাল কিনা তা নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্কের অবসানে ফতোয়া জারি করছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী কর্তৃপক্ষ ইন্দোনেশীয় উলামা কাউন্সিল (এমইউআই)। চীনের তৈরি করোনাভাইরাসের একটি ভ্যাকসিনের গণহারে প্রয়োগ আগামী সপ্তাহে শুরুর আগে এমইউআই এই ফতোয়া জারি করতে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে দেশটির সর্বোচ্চ এই ধর্মীয় পরিষদ হামের টিকা হারাম ঘোষণা করে ফতোয়া জারি করেছিল।
এমইউআইয়ের হালাল খাদ্য ও ওষুধবিষয়ক কর্মকর্তা মুতি আরিনতাওয়াতি বলেছেন, ভ্যাকসিন হালাল নাকি হারাম সেবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে এমইউআই। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করছে ইন্দোনেশিয়া। অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনে একটি টিকার ওপর নির্ভর করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
ভ্যাকসিনবিরোধীরা কোনো ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এমইউআই কীভাবে এই পরিস্থিতি সামলায় সে পর্যন্ত অপেক্ষা করবে সরকার। ভ্যাকসিন নিতে জনগণের আগ্রহ তৈরি করতে দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো আগামী সপ্তাহে প্রথমে ভ্যাকসিন নেবেন।
বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে চরম আঘাত হানা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষায় অনেক ধনী দেশ ইতোমধ্যে নাগরিকদের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করেছে।
টিকার মহড়া শুরু করছে ভারত
চূড়ান্তভাবে টিকা প্রয়োগ শুরু আগে আজ থেকে মহড়ায় নামছে ভারত। দেশের ৭৩৬টি জেলাতেই হতে চলেছে এই মহড়া। প্রথমে যে ১ কোটি স্বাস্থ্য কর্মী ও ২ কোটি প্রথম সারিতে থাকা করোনাযোদ্ধাদের টিকা দেওয়া হবে, তাদের বিনামূল্যে তা দেওয়া হবে। এর জন্য ৪৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রণালয়। যার অর্থ, ব্যক্তি পিছু ১৬০ টাকা খরচ করা হচ্ছে। যে টাকার মধ্যে এক জন ব্যক্তির দু’টি টিকার ডোজের দাম ছাড়াও টিকার পরিবহন খরচ ও টিকা কেন্দ্রের পরিকাঠামোগত খরচ ধরা হয়েছে।