পাশ্চাত্যের প্রভাব অবসানে চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে মুসলিমবিশ্ব
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:২৮
ভূরাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বিশ্ব-পরিস্থিতির নতুন দিগন্তে চীনের নেতৃত্বশীল ভূমিকা ও অবদানের সাথে মুসলিম বিশ্বের বহুমুখী ও আরো কার্যকর সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিশেষজ্ঞদের উদ্যোগে গ্রহণ করা হয়েছে ‘চায়না-মুসলিম ওয়ার্ল্ড কো-অপারেশন রিসার্চ : সিএমডব্লিউসিআর’ শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদি একটি গবেষণা প্রকল্প।গত ২৮ নভেম্বর মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত হয়েছে এর আনুষ্ঠানিক পরিচিতি ও সূচনা পর্ব।
বিশ্বব্যবস্থার আসন্ন নতুন দিগন্তে চীন ও মুসলিমবিশ্বের মধ্যে অধিকতর যোগাযোগ ও কার্যকর সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিনিময়ের লক্ষ্যে চীনের বেইজিংস্থ চায়না ইসলামিক এসোসিয়েশন (সিআইএ), মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালায়া (ইউএম), ওআইসির স্টাডি গ্রুপ ওআইসিএসজিসহ বিভিন্ন দেশের কয়েকটি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ও মুসলিমবিশ্বের একদল খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের অংশগ্রহণে এই প্রকল্পের মূল উদ্যেক্তা হচ্ছে কুয়ালালামপুরস্থ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক মুসলিম ওয়ার্ল্ড রিসার্চ সেন্টার (এমডব্লিউআরসি)।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে উচ্চতর গবেষণাসহ সভা, সেমিনার, সম্মেলন, আয়োজন ও জার্নাল, গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
আনুষ্ঠানিক পরিচিতি ও সূচনা পর্ব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ওআইসি স্টাডি গ্রুপের চেয়ারম্যান তান সিরি সৈয়দ হামিদ আলবার, মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ইকোনমিক ফাউন্ডেশনের (ডব্লিউআইএফ) বর্তমান মহাসচিব তান সিরি আহমদ বিন ফুজি, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার সাবেক রেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ আরাবি আইদিদ, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মুসলিম ইউনিটির (আইআইএমইউ) পরিচালক অধ্যাপক ড. ওয়ালিদ ফিকরি (মিসর), আইআইইউএমের উপ-পরিচালক, অধ্যাপক ড. তাহির আল মেসাবি (তিউনেসিয়া),ইউনিভার্সিটি মালায়ার ইসলামের ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রোসলান এম নূর (মালয়েশিয়া), আইআইইউএমের রাজনীতি বিভঅগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. এম মনিরুজ্জামান (বাংলাদেশ), কুয়ালামপুরে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা কমোডর ইবরার ইসহাক, কুয়ালামপুরে ইরানি কালচারাল কাউন্সিলর ড. ওরাই কারিমি, আইআইইউএম, ইসতাকের সাবেক রিসার্চ ফেলো ড. ওমর মিং (চীন),আইআইইউএমের রিসার্চ ফেলো ড. হাবীবুল্লাহ গালিব (বাংলাদেশ), এমডব্লিউআরসির ফেলো ড. এম আসদাদুর রহমান, এনটিভি মালয়েশিয়ার কে এইচ হান্নান, সিএমডব্লিউসিআরের প্রকল্প প্রধান ও এমডব্লিউআরসির প্রেসিডেন্ট ড. ইশারফ হোসেন।
মধ্যাহ্নভোজের পর ‘চায়না-মুসলিম ওয়ার্ল্ড কো-অপারেশন রিসার্চ : সিএমডব্লিউসিআর’ শীর্ষক প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক পরিচিতি ও সূচনা পর্বে বিশিষ্ট গবেষক ড.মনিরুজ্জামান বলেন,গত দুই দশকে বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনৈতিক দৃশ্যপটে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। রাজনৈতিকভাবে বলা যায়, ষোল শতক থেকে বিশ শতক পর্যন্ত উপনিবেশ, সাম্রাজ্যবাদ ও পরমাণু শক্তির মাধ্যমে বিশ্বরাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তারকারী ঐতিহ্যবাহী পাশ্চাত্যের শক্তি ক্ষয়ে আসছে। অর্থনৈতিকভাবে বলা যায়, ওই একই পাশ্চাত্য বৈশ্বিক উৎপাদন ও অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র হিসেবে তার অবস্থান খুইয়ে ফেলেছে।
তিনি বলেন, পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রাধান্যে এই অবক্ষয়ের সাথে ভারসাম্য বিধান করেছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকে প্রাচ্যের উত্থান। প্রাচ্যের উত্থানের নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। সার্বিকভাবে বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে সরে আসছে। আর এর ফলে বিশ্ব-ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে।
ড. মনিরুজ্জামান বলেন, চীনা সভ্যতা মুসলিমবিশ্বের কাছে কখনোই অপরিচিত ছিল না। প্রাচীন আরব প্রবাদে জ্ঞানের সন্ধানে চীনে যেতেও বলা হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, অন্তত জ্ঞানের ক্ষেত্রে হলেও চীনের সাথে ঘনিষ্ঠতর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
অন্যান্য বক্তা বলেন, চীনের বর্তমান অর্থনৈতিক উত্তরণ সম্ভবত নানাভাবে বৈশ্বিক পরিচালনাগত ইস্যু ও অর্থনীতিকে আলোড়িত করতে যাচ্ছে। চীনের উন্নয়ন বহুমাত্রিক। আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ চীন রাজনৈতিক শক্তির কেন্দ্রবিন্দু পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে সরিয়ে এনে সভ্যতাগত পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
চীন তার অর্থনৈতিক, সামরিক ও রূপকল্পগত বিকাশের জন্য বিশ্বজুড়ে তেলসম্পদে সমৃদ্ধ দেশগুলোর ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করবে। অন্য দিকে মুসলিমবিশ্বও তাদের ওপর থাকা পাশ্চাত্যের প্রভাব অবসানের জন্য সম্ভবত চীনের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলবে।
সভায় মুসলিমবিশ্বে চীনের উত্থানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া ইতিবাচকভাবে উপস্থাপনের প্রয়াস নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সিএমডব্লিউসিআরের প্রকল্প প্রধান ও এমডব্লিউআরসির প্রেসিডেন্ট ড. ইশারফ হোসেন অতিথিদের স্বাগত জানান এবং প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও চলমান কর্মসূচি সম্পর্কে ধারণা দেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি