তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপে এখনো ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
করোনার মাঝেও তামাক কোম্পানিকে প্রণোদনা দেয়া দুঃখজনক : সুশীল সমাজ- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ২৮ নভেম্বর ২০২০, ১৬:১৬
বাংলাদেশে আর্টিক্যাল ৫.৩ বাস্তবায়নের কিছুটা অগ্রগতি হলেও তা সন্তোষজনক নয়। ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক’ এ বাংলাদেশের প্রাপ্ত স্কোর ৬৮ অর্থাৎ বাংলাদেশ এখনো তামাক কোম্পানির শক্তিশালী হস্তক্ষেপে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে এক গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণায় বেরিয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে দেখা গেছে, দুইটি বহুজাতিক তামাক কোম্পানি করোনাকালীন লকডাউনের মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সিগারেট উৎপাদন, বিপণন, সরবরাহ এবং তামাকপাতা ক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিশেষ অনুমতি আদায় করে নেয়। সুশীল সমাজ বলছেন, কোভিডের মধ্যে অনেক তামাক কোম্পানিকে প্রণোদনার টাকা দেয়া হয়েছে, এটা হতে পারে না। চলমান কোভিড-১৯ মহামারিকে শতভাগ কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে তামাক কোম্পানিগুলো। মূলত সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক (সিএসআর) কর্মসূচির অজুহাতে তারা নীতি-নির্ধারক ও প্রশাসনের সাথে মিশে নানাবিধ ব্যবসায়িক সুবিধা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে।
ঢাকায় প্রকাশিত ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক : এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ বাস্তবায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশ ২০২০’ গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
অনলাইনভিত্তিক জুম সফটওয়্যারের মাধ্যমে শনিবার গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসস’র চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সাবেক সমন্বয়ক মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস।
ওয়েবিনার আলোচনায় অংশ নেন, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস বাংলাদেশ কান্ট্রি অ্যাডভাইজার মো: শফিকুল ইসলাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা: সৈয়দ মাহফুজুল হক, দি ইউনিয়নের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার সৈয়দ মাহবুবুল আলম, গ্রান্টস ম্যানেজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এম এ সালাম এবং নির্বাহী পরিচালক, প্রজ্ঞা, এবিএম জুবায়ের, অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স- আত্মা’র কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন। সঞ্চালনায় ছিলেন, এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স-আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ। গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কর্মসূচি প্রধান মো: হাসান শাহরিয়ার।
গবেষণার সুপারিশে আইন সংশোধন করে তামাক কোম্পানির সকল প্রকার সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক (সিএসআর) কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার প্রতি জোর তাগিদ প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে আর্টিক্যাল ৫.৩ প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা বিষয়ে সচেতন করতে সুপারিশ করা হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল না থাকায় তামাক কোম্পানিগুলো খুব সহজেই এসব মন্ত্রণালয়কে বিভ্রান্ত করতে পারে। যার নজির চলমান কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে দেখা গেছে। দুইটি বহুজাতিক তামাক কোম্পানি করোনাকালীন লকডাউনের মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সিগারেট উৎপাদন, বিপণন, সরবরাহ এবং তামাকপাতা ক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিশেষ অনুমতি আদায় করে নেয়। এই বিশেষ অনুমতি প্রত্যাহার এবং করোনা মহামারির সময়ে সাময়িকভাবে তামাক পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ ও বাজারজাতকরণ বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যা শেষ পর্যন্ত নাকচ হয়ে যায়। এছাড়াও তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ মোকাবেলায় একটি সহজ তামাক কর ও মূল্য নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন, তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার/বিনিয়োগ প্রত্যাহার, তামাক কোম্পানি এবং এর প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগের সকল তথ্য এবং নথি প্রকাশ, তামাক কোম্পানির সাথে যোগাযোগ বা আলোচনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ এর আলোকে আচরণবিধি চূড়ান্তকরণ এবং তামাক কোম্পানিকে প্রদত্ত সকল সুবিধা প্রত্যাহারসহ তামাক ব্যবসায় নতুন বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বলেন, তামাক অপরিহার্য পণ্য তবে শুধু মৃত্যুর জন্য, জীবনের জন্য নয়। এটি কোনোভাবেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তালিকায় থাকতে পারে না। বরং এটি সংবিধানের বাঁচার অধিকার সংক্রান্ত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।
তিনি বলেন, আমি ইতোমধ্যেই তামাকপণ্যকে এই তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য জাতীয় সংসদে বেসরকারি সদস্য বিল জমা দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, কোভিডের মধ্যে অনেক তামাক কোম্পানিকে প্রণোদনার টাকা দেয়া হয়েছে, এটা হতে পারে না।
মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, সরকার সম্প্রতি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমি আশা করবো, স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় নিজ মন্ত্রণালয় ছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রণালয় বিশেষ করে অর্থ, শিল্প, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালকে আর্টিক্যাল ৫.৩ প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা বিষয়ে সচেতন করবে। যাতে চলমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রক্রিয়াসহ সকল ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপমুক্ত থাকা যায়।
ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, কোভিড-১৯ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে তামাক ব্যবহার কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। এটা এমন একটা সমস্যা যার সমাধানে শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয় বরং সকল মন্ত্রণালয় মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা