২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দফায় দফায় অভিযানে কমেছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব

দফায় দফায় অভিযানে কমেছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব - ছবি : সংগৃহীত

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল খুঁজে বের করে সেখানে ওষুধ প্রয়োগের সুফল পাচ্ছে নগরবাসী। দফায় দফায় চিরুনি অভিযানের ফলে গত বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সর্বশেষ অভিযানে মাত্র দশমিক ৫৩ ভাগ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। দক্ষিণ সিটির অভিযানেও কম সংখ্যক বাড়িতে এডিসের উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপে গত বছর এ সময়ে দুই সিটির ১১টি ওয়ার্ডে এডিসের উপস্থিতি বেশি থাকলেও এবার মাত্র তিনটি ওয়ার্ডে এডিসের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। হাসপাতালেও বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক কম। এতে জনসাধারণের মধ্যেও ডেঙ্গুর আশঙ্কা কমে এসেছে।

গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকায় এবার আগেভাগেই প্রস্তুতি নেয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। বছরব্যাপী সমন্বিত মশক নিধন পরিকল্পনা নেয়া হয়। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উত্তর সিটি করপোরেশন খাল, জলাশয়-নর্দমা পরিষ্কারের পাশাপাশি দফায় দফায় এডিস মশার প্রজনন স্থল খুঁজতে অভিযান পরিচালনা করে। প্রথম দফা ১৬ মে থেকে ২০ মে পাঁচ দিনব্যাপী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তারা। এতে নয় হাজার ৪৬৩টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৮৭টি বাড়িতে এডিসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

যা অভিযানকৃত মোট বাড়ির এক দশমিক ৯৮ ভাগ। এরপর ৬ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত নয় দিনব্যাপী বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে ডিএনসিসি। এ সময়ে এক লাখ ৩৪ হাজার ১৩৫টি বাড়ি ও স্থাপনায় অভিযান চালিয়ে এক হাজার ৬০১টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। যা মোট বাড়ি ও স্থাপনার এক দশমিক ১৯ শতাংশ। এরপর গত ৪ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত আরেক দফা ১০ দিনব্যাপী অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে এক লাখ ৩০ হাজার ৯৭৮ টি বাড়ি পরিদর্শন করে মাত্র ৮৯৮টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। যা মোট অভিযানকৃত স্থাপনার শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ। সর্বশেষ ৮ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত ১০ দিনের অভিযানে মোট এক লাখ ৩০ হাজার ৯৭৪টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে মোট ৬৯১টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। যা মোট স্থাপনার মাত্র শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ।

ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি অভিযান চলাকালে সম্ভাব্য এডিস মশার সব প্রজনন স্থলে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করে কীটনাশক ছিটানো হয়। এ সময় জনসাধারণকে আরো বেশি সতর্ক থাকতে বলা হয়। এ কারণে মানুষও বেশ সচেতন হয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ি, প্রতিষ্ঠানে এডিস মশার উপস্থিতি কমছে। এ ছাড়া অভিযানকালে জরিমানা আদায়ও মশার প্রজনন স্থল কমতে সহায়তা করেছে। ডিএনসিসির চার দফা অভিযানে মোট ৫৮ লাখ ১৬ হাজার ৮১০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

ডেঙ্গু দমনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি) বছরব্যাপী সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়েছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খাল ও নালা পরিষ্কার, পুকুরে মাছ ও হাঁস অবমুক্ত করা এবং মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ প্রয়োগের সময় ও লোকবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বশেষ ডিএসসিসি গত ১৬ আগস্ট থেকে মশা নিয়ন্ত্রণে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রথম দিনে ২২টি স্থাপনা পরিদর্শন করে মাত্র একটিতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পায় মোবাইল টিম। দ্বিতীয় দিনে ১০৩টি স্থাপনা পরিদর্শন করে ৫টিতে এডিসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তৃতীয় দিনে ৭১টি স্থাপনা পরিদর্শন করে চারটিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। চতুর্থ দিনে ৮৪ স্থাপনা পরিদর্শন করে মাত্র চারটিতে এডিসের উপস্থিতি মেলে। সর্বশেষ গতকাল পঞ্চম দিনে ৯০টি স্থাপনা পরিদর্শন করে ৬টিতে এডিস মশার প্রজনন স্থল পাওয়া যায়। অভিযানকালে যেসব স্থাপনায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যায় তাদের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা ও আর্থিক জরিমানা আদায় করা হয়।

অভিযান প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, বছরব্যাপী মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সবার সহযোগিতায় আমরা সফলতা পাচ্ছি, ঢাকাবাসী সুফল পাচ্ছে। ফলে ঢাকা দক্ষিণে মশার প্রকোপ নেই বললেই চলে। আমরা আশা করব, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও নির্মাণাধীন ভবনের মালিকরা নিজেরা সচেতন হয়ে, স্বপ্রণোদিতভাবে তাদের নিজেদের এলাকাগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ মশকনিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন, যাতে করে তাদেরকে আর জরিমানা দিতে না হয়। তাহলে আমরা সম্পূর্ণরূপে মশাবাহিত রোগ- ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ইত্যাদি নির্মূল করতে পারব।


আরো সংবাদ



premium cement