২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ মাঘ ১৪৩১, ২২ রজব ১৪৪৬
`

দেশে দেশে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের গুদাম

ফ্রান্সের একটি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কারখানা। - সংগৃহীত

বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও প্রাণহানির পর বিশ্বব্যাপী অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মজুদ ও গুদামজাতকরণ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সার উৎপাদন কিংবা খনিতে ব্যবহারযোগ্য বিস্ফোরক হিসেবে বিশ্বজুড়েই এর মজুত রয়েছে। কোন কোন জায়গায় কতদিন পর্যন্ত এই বিপজ্জনক দ্রব্যটি মজুত রাখা যেতে পারে, সে ব্যাপারে কিছু কড়াকড়ি নিয়ম রয়েছে। বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয় বলে এর অবস্থান সাধারণ গোপনই রাখা হয়।

ব্রিটেন
ব্রিটেনের লিঙ্কনশায়ার এলাকার ইমিনগ্রাম বন্দরসহ হাম্বারসাইড অঞ্চলের এক বিশাল জায়গা জুড়ে বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ রাখার ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

এসব গুদামের দায়িত্বে রয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড ব্রিটিশ পোর্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তারা বলছে, নিয়মকানুন মেনেই এগুলো রাখা হয়েছে এবং এগুলো নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রেও কঠোর বিধিনিষেধ পালন করা হয়।

ওদিকে, আরেক বন্দর নগরী পোর্টসমাউথের একটি প্রতিষ্ঠান অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট গুদামজাত করার একটি আবেদনপত্র প্রত্যাহার করেছে।

অস্ট্রেলিয়া
বৈরুত বিস্ফোরণের আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের নিউক্যাসল শহরের বাসিন্দারা শহরের কাছেই মজুদ করে রাখা বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবি করে আসছিলেন।

কিন্তু অরিকা নামে যে কোম্পানি খনি শিল্পে এই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরবরাহ করে তারা বলছে, অগ্নি-প্রতিরোধী ব্যবস্থার মধ্যে এগুলো রাখা হয়েছে।

সাউথ ওয়েলসের কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে যে প্রতিষ্ঠান, সেই সেফওয়ার্কস এসএ বলছে, রাজ্যের ১৭০টি নিরাপদ এবং নিয়ন্ত্রিত জায়গায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট গুদামজাত করে রাখা হয়েছে।

ভারত
দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে বড় শহর চেন্নাইয়ের বাইরের এক আবাসিক এলাকার ৭০০ মিটার দূরে এক গুদামে প্রায় ৭৪০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট রাখা আছে। কৃষিকাজে সার হিসেবে ব্যবহারের জন্য এই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আমদানি করা হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আমদানিকারক কোম্পানিটির মামলা চলছে।

সরকার অভিযোগ করছে, আমদানির কাছে মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে এই চালানের জন্য কাস্টমস ছাড়পত্র মেলেনি।

কিন্তু তদন্তে দেখা গিয়েছে যে আমদানিকারক কোম্পানিটি ‘অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি’ এবং খনি পরিচালনার সাথে সম্পর্কিত কিছু কোম্পানির কাছে এই অ্যামনোয়িাম নাইট্রেট বিক্রি করছে।

তামিলনাড়ু রাজ্যে ২০১৫ সালের বন্যায় এই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কিছু অংশ নষ্ট হয়ে যায়।

বাদবাকি ৬৯৭ টন নিলাম করে বিক্রি করে দেয়া হয় এবং তা প্রতিবেশী তেলেঙ্গানা রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।

ইয়েমেন
দক্ষিণাঞ্চলীয় এডেন বন্দরে বহু শিপিং কন্টেইনার ভর্তি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ রয়েছে, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশের পর ইয়েমেনের অ্যাটর্নি জেনারেল এ নিয়ে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।

সরকার বলছে, এই রাসায়নিক পদার্থ তিন বছর আগে আমদানি করা হয়েছিল এবং জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারের মিত্র সৌদি-নেতৃত্বাধীন বাহিনী এটি দখল করে।

এডেনের গভর্নর তারিক সালাম জানাচ্ছেন, ‘বন্দরে মোতায়েন রয়েছে যে বাহিনী তারাই এই বিপজ্জনক সামগ্রীর মজুদ রাখার দায়িত্ব নিয়েছে। এ মুহূর্তে সেখানে ৪ হাজার ৯০০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ১৩০টি কন্টেইনারে সংরক্ষণ করা রয়েছে।

তবে এডেন পোর্ট কর্পোরেশন জানিয়েছে, এসব কন্টেইনারে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নয়, ‘কৃষিকাজের জন্য জৈব সার’ রাখা আছে।

‘এগুলো বিস্ফোরক পদার্থ নয়, তেজস্ক্রিয় পদার্থও নয়।’

ইরাক
বৈরুতের ঘটনার পর ইরাকের সরকার বিমানবন্দর এবং নৌ-বন্দরে সংরক্ষিত সব ধরনের বিপজ্জনক সামগ্রী পর্যালোচনার আদেশ দেয় এবং জানতে পারে যে বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট গুদামজাত অবস্থায় আছে।

একজন সামরিক কর্মকর্তা টুইট করে জানান, ‘সামরিক ইঞ্জিনিয়ারিং অধিদফতর এসব চালান বাগদাদ বিমানবন্দর থেকে সরিয়ে এনে নিরাপদ স্থানে গুদামজাত করা হয়েছে।’
সূত্র: বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement