সব কিছু চালু হবার পর ‘স্বাস্থ্যবিধি’ অনুসরণে ঢিলেঢালা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৭ জুন ২০২০, ২৩:১৬, আপডেট: ০৭ জুন ২০২০, ২৩:১৫
বাংলাদেশে গত রোববার থেকে গণ-পরিবহনসহ সব ধরণের সরকারি-বেসরকারি অফিস চালু হয়েছিল। কিন্তু সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি, বিশেষ করে সামাজিক দূরত্ব রেখে কাজ করার নিয়ম অনেক জায়গাতেই মেনে চলা হচ্ছে না। অফিস, দোকান, বাজার কিংবা গণ-পরিবহন সব খানেই একই পরিস্থিতি। তবে করোনাভাইরাস নিয়ে শঙ্কা আর দ্বিধার কারণে নেহায়েত জরুরি প্রয়োজন না হলে মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন না।
এদিকে, আন্তঃজেলা পরিবহন ও বিমান চলাচলে অনেক ক্ষেত্রেই প্রত্যাশামত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না বলে বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সরকারি-বেসরকারি অফিসে ও রাস্তায় ঢিলেঢালা ‘স্বাস্থ্যবিধি’ অনুসরণ
ঢাকার মতিঝিল, তেজগাঁও, মহাখালী এবং গুলশানের বেশিরভাগ অফিসের বাইরে থেকে দেখা যায়, ঢোকার মুখেই ব্লিচিং পাউডারে ভেজানো পাপোষ, শরীরের তাপমাত্রা মেপে ভেতরে ঢোকানো, এবং হাতে স্যানিটাইজার মেখে কর্মীদের ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে।
কোন কোন প্রতিষ্ঠানে জীবাণুনাশক টানেলের ব্যবস্থাও রয়েছে, তবে সেগুলো মূলত বহুজাতিক বা আন্তর্জাতিক সংস্থার অফিস। তবে, সরকারি অফিস ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রবেশমুখে সুরক্ষায় অতটা কড়াকড়ি দেখা যায়নি, সেই সাথে ব্যাংকে ঢোকার জন্য গ্রাহকদের সারিতেও সামাজিক দূরত্ব মানার ব্যাপারেও যেন গরজ ছিল কম।
রাস্তায় নামা লোকের ভিড় মূলত অফিস কেন্দ্রিক,ফলে শহরের শপিং মলগুলো খুললেও সেখানে একেবারেই ভিড় নেই।
ঢাকার একটি প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের কর্মী মোহসিনা সুরভী, সাধারণ ছুটির এক সপ্তাহ পরেও নিজের অফিসের সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট নন।
‘আমাদের অফিসটা কর্মীর তুলনায় একটু ‘কনজেস্টেড’, যে কারণে রোস্টার করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও অফিসের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সব সময় সম্ভব হয় না।
‘আবার অফিসের যে লিফট, সেখানেও অনেক মানুষই আসা-যাওয়া করে, প্লাস যে গার্ড লিফট অপারেটর করে তার নিরাপত্তারও কোন বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, কিন্তু তার সংস্পর্শে তো অনেক মানুষ আসে রোজ। ফলে মনের মধ্যে সব সময়ই ভয় থেকে যাচ্ছে।’
পরিবহন খাতে কী অবস্থা
ঢাকার মধ্যে চলাচল করা গণপরিবহনের মালিক ও শ্রমিকেরা বলছেন, বাস চালু হলেও যাত্রী সংখ্যা খুবই কম। সেই সাথে চালক সংকটের কারণে বাসও নামানো হয়েছে কম।
মিরপুর ১২ নম্বর থেকে সদরঘাট পর্যন্ত যায় বিহঙ্গ পরিবহন, এর একজন সুপারভাইজার মোঃ বশিরউদ্দিন বলছিলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবার পরেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
‘আমাদের ৪৫ আসনের বাসে আমরা সর্বোচ্চ ২২জন যাত্রী নেব, এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু আমরা যাত্রী পাই ৮জন, ১০জন বা পিকের টাইমে সর্বোচ্চ ১৫ জন।’
‘আরেক সমস্যা হলো, লক-ডাউনের টাইমে অনেক ড্রাইভার ও হেল্পার ফল বিক্রি, ডিম বিক্রি এমন অন্য পেশায় চলে গেছে, অনেকে গ্রামে চলে গেছে। যে কারণে এখন ড্রাইভারেরও সংকট আছে, সব গাড়ি (বাস) নামানো যায় নাই রাস্তায়।’
এদিকে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাসেও যাত্রী সংখ্যা অনেক কমে গেছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন সংস্থার মালিক-শ্রমিকেরা।
গাবতলি ও মহাখালী বাস টার্মিনালের কয়েকটি পরিবহন সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যাত্রী কমে যাওয়ার কারণে বাসের ট্রিপ সংখ্যা কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিমানেও যাত্রী কম
যাত্রী কমেছে বিমান সংস্থাগুলোতেও। যাত্রী স্বল্পতার কারণে অভ্যন্তরীণ রুটে গত সাত দিনের মধ্যে পাঁচদিনই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়।
বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বলেন, যাত্রী স্বল্পতার কারণে সোমবার পর্যন্ত বিমানে সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
‘আমরা প্রথম দিন সাতটি ফ্লাইট অপারেটর করেছি-সৈয়দপুর, সিলেট ও চট্টগ্রামে। এর পরদিন ছয়টা এবং পরেরদিন চারটা করে ফ্লাইট শিডিউল করা হয়, কিন্তু আমরা টিকেট বুকিং এর হার পর্যালোচনা করে দেখেছি, সেটা খুব একটা সন্তোষজনক নয়, ফলে ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।’
তবে বাংলাদেশ বিমানের মত যাত্রী স্বল্পতায় ফ্লাইট বাতিল করতে হয়নি অন্য বেসরকারি সংস্থাকে। এখনো নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কেউ ভ্রমণ করছেন না। তবে স্বাভাবিক সময়ের মত যাত্রী সংখ্যা হতে এখনো বেশ কিছুদিন সময় বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা