মুসলিমবিদ্বেষী হান্টকার হাতে উঠছে নোবেল, ক্ষোভ-প্রতিবাদ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:৫৯, আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৫৮
বিতর্কীত নোবেল জয়ী পিটার হান্টকার নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। ২০১৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয়ী হান্টকা শনিবার রাতে সুইডিশ নোবেল অ্যাকাডেমিতে নোবেল বক্তৃতা দিয়েছেন। বসনিয়া ও কসভোয় মুসিলম গণহত্যার সমর্থন হান্টকা। মঙ্গলবার তার হাতে তুলে দেয়া হবে পুরস্কার। সেই অনুষ্ঠান বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের আরেক মুসলিম দেশ কসভোও।
১৯৯২-৯৫ সালের বসনিয়া যুদ্ধে মুসলিমদের ওপর চালানো গণহত্যার মূল হোতা বলকানের কসাই খ্যাত স্লবোডান মিলোসেভিকের সমর্থক হিসেবে পরিচিত এই হান্টকা। পুরস্কার জয়ী হিসেবে তার ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয় প্রতিবাদ। বসনিয়ার গণহত্যা অস্বীকার ও সার্বদের সাফাই গাওয়া এই অস্ট্রিয় সাহিত্যিক তার নোবেল বক্তৃতায়ও এই বিতর্ক নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি।
এছাড়া ১৯৯৮-৯৯ সালে কসভোর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও দেশটিতে মুসলমানদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা চালায় সার্বিয়া। হান্টকা সে সময়ও সার্বিয়ার পক্ষ নেন।
গতকাল তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী টুইটারে লিখেছেন, পিটার হ্যান্ডকাকে ২০১৯ সালের নোবেল পুরস্কার দেয়ার তীব্র নিন্দা জানানই। যিনি বসনিয়ার গণহত্যাকে অস্বীকার করেছে এবং গণহত্যার অপরাধী স্লোবোডান মিলোসোভিককে সমর্থন করেছেন। আমাদের বসনিয়ার ভাইদের হত্যায় সমর্থন দিয়েছেন এই হান্টকা। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিনও হান্টাকার হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার নিন্দা জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত কসভোর রাষ্ট্রদূত ভ্লোরা সিটাকু নোবেল কমিটির এই সিদ্ধান্তকে অপমানকর, ভ্রান্ত ও লজ্জাজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হান্টাকার বই ‘আ জার্নি টুন দ্য রিভার্স : জাস্টিস ফর সার্বিয়া’ নামক বইতে গণহত্যার ঘটনা গোপন করা হয়েছে। হান্টকা বরাবরই সার্বিয়ান সাবেক নেতা স্লোবোডান মিলোসেভিকের ভক্ত হিসেবে পরিচিত। যুদ্ধপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযুক্ত এই মিলোসেভিক বিচার চলাকালে ২০০৬ সালে মারা যান। জেলখানায় তাকে দেখতে গিয়েছিলেন হান্টকা। এছাড়া বিচার চলকালে তার পক্ষে প্রচারণাও চালান।
এছাড়া কসভো যুদ্ধ চলার সময় হান্টকা ‘স্ট্যান্ডআপ ইফ ইউ সাপোর্ট দা সার্বস’ নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন। যে প্রবন্ধে কসভোর মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালানো সার্বিয়াকে সমর্থন করা হয়েছে।
নোবলে জয়ী হান্টকা বলেন, বসনিয়ায় মুসলমানরাই নিজেদের হত্যা করেছে, আর তার দায় চাপানো হয়েছে সার্বিয়ার ঘাড়ে। তিনি বলেন, আমি কখনোই বিশ্বাস করবো না যে স্রেব্রেনিসায় সার্বরা গণহত্যা চালিয়েছে। অথচ সারা বিশ্ব জানে যে, স্রেব্রেনিসায় জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সামনেই গুলি করে হত্যা নির্বিচারে সার্বরা হত্যা করেছিল কয়েক হাজার মুসলমান পুরুষ-কিশোরকে।
আর ২০০৬ সালে মিলোসেভিকের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি, যুগোস্লাভিয়ার জন, সার্বিয়ার জন্য, স্লোবোদান মিলেসেভিকের জন্য।’
এদিকে হান্টকার হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার সময় অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন সুইডিশ অ্যাকাডেমির এক সদস্য। তিনি বলেন, তার হাতে নোবেল পুরস্কার তুলে দেয়ার অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া হবে নিজের সাথে প্রতারণা।
৭৭ বছর বয়সী হ্যান্ডকা পরিচিতি পেয়েছেন তার যৌথভাবে লেখা সিনেমা ‘উইংস অব ডিসায়া’র জন্য। এই সিনেমাতেও বসনিয়ার গণহত্যাকে সমর্থন করা হয়েছে। বসনিয়ানদের ওপর চালানো সার্বদের নৃসংসতাকে অস্বীকার করা হয়েছে।
গত অক্টোবরে নোবেল বিজয়ী হিসেবে হান্টকার নাম ঘোষণার পর থেকেই লেখক ও মানবাধিকার কর্মীদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ আসতে থাকে। নোবেল কমিটির দুই সদস্য এর প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া একজন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তার নোবেল পুরস্কার বাতিলের দাবিতে এক অনলাইট পিটিশনে ৬০ হাজারের বেশি লোক স্বাক্ষর করছে।
নোবেল কমিটির প্রধান আন্দ্রেস ওলসেন তাদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলেন, আমরা তার সাহিত্য কর্মকে বিচার করেছি। ব্যক্তিকে নয়।