বেদের মেয়ে ওয়াতেদীনার স্বপ্ন
- শাহেদ মতিউর রহমান
- ০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:৪৮, আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:৩৮
বাবা সাপুড়ে, মেয়ে কলেজের মেধাবী ছাত্রী। হাইস্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে সে এখন কলেজে পড়ছে। উচ্চ শিক্ষার ব্রত নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় সাভারের বেদে পল্লীর ওয়াহেদীনা। নিজ সম্প্রদায়ের মাঝেই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে চায় সে। কুসংস্কার আর গোঁড়ামি থেকে নিজ সম্প্রদায়ের লোকজনকে মুক্ত করে তাদের মধ্যে শিক্ষার আলো বিলাতে এখন থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করছে ওয়াহেদীনা।
সাভারের পোড়াবাড়ির বেদে পল্লীর মধ্যভাগে ছোট অমরপুর জেটিতে (মহল্লায়) তাদের বাড়ি। বাবা অহিদুল ইসলাম। সারা বছরই সাপ ধরা আর সাপ খেলা দেখানো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন অহিদুল। চষে বেড়ান দেশের এ জেলা থেকে ওই জেলা। এটাই তার পেশা। বাপ-দাদার আদি পেশা এই সাপ খেলা দেখানো ছাড়া অন্য কোনো কাজও তার জানা নেই। লোকে কে কী বলল এতে তার কিছুই যায়-আসে না। তবে সাপুড়ে পেশাটাই যেন তার কাছে সবচেয়ে সম্মানের।
অহিদুলের এক ছেলে আর দুই মেয়ের মধ্যে ওয়াহেদীনা দ্বিতীয়। শৈশবে স্থানীয় বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাইমারি পাঠের ইতি টেনে ভর্তি হয়েছিল বেদে পল্লীর বাইরে গিয়ে সাভারের আড়াপাড়ার স্বর্ণকলী আদর্শ বিদ্যালয়ে। ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রেখে ওয়াহেদীনা ভর্তি হয়েছে সাভার মডেল কলেজে। ব্যবসা শিক্ষা শাখায় এইচএসসিতে প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী হিসেবে কলেজের সবার কাছেই একনামে পরিচিত সে।
নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে ওয়াহেদীনা জানায়, বাবার সাপুড়ে পেশার বিষয়টি শিক্ষক ও সহপাঠীদের কাছে গোপন রাখতেই সে চেষ্টা করে। ক্লাসে শিক্ষকেরা কেউ বাবার পেশা জানতে চাইলে সে বলে তার বাবা ব্যবসা করেন। কিন্তু ব্যবসার ধরন জিজ্ঞেস করলে তখন সে সঠিক তথ্যটিই জানায়।
ওয়াহেদীনার প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন নামের বেদেদের এক সর্দার জানান, বেদে পল্লীর শিশুদের অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করতে হয়। কারণ বেদেরা সাধারণত সারা বছরই দেশের বিভিন্ন জেলায় সফর করে থাকেন। সাপ খেলা দেখানো, সাপ ধরা কিংবা ঝাঁড়ফুঁকের ব্যবসা নিয়েই তারা ব্যস্ত থাকেন। বেশির ভাগ বেদেই তাদের সন্তানদের সাথে নিয়ে যান। ফলে কোনো একস্থানে স্থায়ীভাবে না থাকার কারণে বেদেদের সন্তানরা সুষ্ঠুভাবে পড়ালেখা করতে পারে না। আবার অনেক বেদে বাবা মা তাদের সন্তানদের তাদের এই একই পেশায় প্রশিক্ষণ দিয়ে জীবন-জীবিকার পথ করে দিতে চান। সন্তানদের পড়ালেখায় তারা আগ্রহ দেখান কম।
ওয়াহেদীনার বিষয়ে এই বেদে সর্দার আরো জানান, ওয়াহেদীনা ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। সে আমার পাশের বাড়িরই সন্তান। ওর বাবা বাড়িতে থেকে ওকে আরো বেশি সময় দিলে ওয়াহেদীনা পড়ালেখায় হয়তো আরো ভালো করতে পারত।
বেদে পল্লীর ছোট অমরপুর, বড় অমরপুর, কাঞ্চলপুর ও পোড়াবাড়ি এলাকার বয়ষ্ক লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল, এখানকার শিশুদের পড়ালেখার হার খুবই কম। চরম দারিদ্র্য আর অসচেতনতার কারণে সাপুড়ে পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের স্কুলে দিতে আগ্রহী নয়। বাস্তব কারণেই বাপ-দাদার পেশা হিসেবে তারা নিজেদের সন্তানদেরও একই পেশায় রাখতে চান। তবে আগের তুলনায় পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে বলেও জানান তারা। স্কুলে ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে। বেদেদের লেখাপড়ার প্রতিও ঝোঁক বাড়ছে।