২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সেই লিভারদাতা মাকে রিলিজ দেয়া হচ্ছে

-

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রথমবারের মতো লিভার ট্রান্সপ্লান্টের (প্রতিস্থাপন) ঘটনায় লিভারদাতা মাকে রিলিজ দেয়া হচ্ছে।

আজ শনিবার দুপুর ১টার দিকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভিসি অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া এ কথা জানান।

জানা গেছে, আজকে লিভার গ্রহীতা নিজের হাতে খাচ্ছেন। তার মা ছেলেকে দেখতে এসেছে বেশ কয়েকবার। রোগী চা পান করেছেন। গতকাল মোবাইলে ক্রিকেট খেলা দেখেছেন।

গত ২৪ জুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ২০ বছরের যুবক সিরাজুল ইসলামের লিভার (যকৃত অথবা বহুল প্রচলিত কলিজা) প্রতিস্থাপন করেছেন সার্জনরা। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগকে সহায়তা করেছে হেপাটোবিলিয়ারি ও প্যানক্রিয়েটিক বিভাগ। এটাই দেশে প্রথম বারের মতো সফল লিভার প্রতিস্থাপন।

সিরাজুল ইসলামকে মূলত গত ছয় মাস থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ চিকিৎসা দিয়ে আসছে এবং তাকে ট্রান্সপ্লান্টের জন্য তৈরি করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের বাবা পেশায় আদালতের পেশকার।

চিকিৎসকেরা জানান, তিনি সিরাজুল ইসলামকে ভারতে নিয়ে গিয়েছিলেন ট্রান্সপ্লান্টের জন্য; কিন্তু সেখানে থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, ওষুধ, হাসপাতালের বিল মিলে এক কোটি টাকা লাগে। এত টাকা পেশকার বাবার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয় বলে তিনি ছেলেকে চিকিৎসা না করিয়েই দেশে নিয়ে আসেন। পরে তারা বঙ্গবন্ধুতে আসেন চিকিৎসার জন্য। উদ্দেশ্য ছিল ছেলেকে যত দিন বাঁচিয়ে রাখা যায়।

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তারা অনেক দিন লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার জন্য নিজেদের তৈরি করছিলেন। এই সুযোগে তারা সিরাজুল ইসলামের বাবা-মাকে ডেকে বিনা মূল্যে ট্রান্সপ্লান্টের কথা জানালে তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবে রাজি হন। এর মধ্যে সিরাজুল ইসলামের মা-ও রাজি হন ছেলেকে তার নিজের লিভারের সামান্য দান করতে। এভাবে গত ২৪ জুন সকাল থেকে একটানা ১৮ ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করে সিরাজুল ইসলামের লিভার সফলতার সাথে প্রতিস্থাপন করেন বলে জানান হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুলফিকার রহমান খান।

এর আগে বারডেমে একটি লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এরপর বারডেমের এ বিষয়ে আর কোনো তৎপরতা ছিল না। তারও আগে ল্যাব এইড হাসপাতাল এ ব্যাপারে একটি লিভার প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বারডেম ও ল্যাব এইড ছাড়াও টার্শিয়ারি সেবা দেয় এমন কয়েকটি বেসরকারি তারকা হাসপাতালও চেষ্টা করে আসছে লিভার প্রতিস্থাপনে কিন্তু সফলতা আসেনি।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ লিভার প্রতিস্থাপনটি করা হয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। অনেক টাকার ব্যাপার ছাড়াও লিভার প্রতিস্থাপন খুবই জটিল একটি অস্ত্রোপচার। লিভার নষ্ট হয়ে গেলে রক্ত ও অন্যান্য কিছুর সাথে ‘ম্যাচ’ করলেই অন্যের লিভার থেকে নির্দিষ্ট কিছু অংশ কেটে গ্রহীতার নষ্ট হয়ে যাওয়া লিভারে প্রতিস্থাপন করা হয়। এরপর কয়েকদিন চিকিৎসকদের নিবিড় তত্বাবধানে থাকতে হয় লিভারদাতা ও গ্রহীতাকে। লিভারদাতার কাটা অংশটি কিছুদিন পর আবার আগের মতো হয়ে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement