২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কেন ইসলামী ভাবধারার কবি হয়ে ওঠেছিলেন আল মাহমুদ

কবি আল মাহমুদ - সংগৃহীত

বাংলাদেশের কবি আল মাহমুদ শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ইন্তিকাল করেছেন। বেসরকারি হাসপাতাল ইবনে সিনা কর্তৃপক্ষ কবির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তিনি বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

১৯৩৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে আল মাহমুদের জন্ম। লেখালেখি শুরু করেন ৫০'র দশকে। কবি হিসেবে জনপ্রিয়তা পেতে তার খুব একটা সময় লাগেনি।

'সোনালী কাবিন' শব্দ দুটি উচ্চারণ করলেই যার নাম সামনে আসে, তিনি হচ্ছেন কবি আল মাহমুদ। গত ৫০ বছর ধরে বাংলা কবিতার জগতে আলোড়ন তুলেছেন এই কবি।

'সোনালী কাবিন' কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে সাহিত্যানুরাগীদের মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান এই কবি।

কবিতা, গল্প এবং উপন্যাস - সব শাখাতেই তার বিচরণ থাকলেও, আল মাহমুদ কবি হিসেবেই ব্যাপক পরিচিত।

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'লোক লোকান্তর' প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। কিন্তু কাব্যগ্রন্থ 'সোনালী কাবিন' আল মাহমুদকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যায়।

আল মাহমুদের কবিতা বাংলাদেশের অনেক কবিকে প্রভাবিত করেছিল। এদের মধ্যে কবি আসাদ চৌধুরী অন্যতম। আল মাহমুদের কবিতা শুধু তাকেই নয়, বহু পাঠককে প্রভাবিত করেছে।

বিবিসিকে আসাদ চৌধুরী বলেন " আমি অজস্র মুক্তিযোদ্ধাকে দেখেছি সোনালী কাবিন তাদের মুখস্থ"।

আল মাহমুদের কবিতার বিষয়বস্তুতে প্রথম দিকে গ্রামের জীবন, বামপন্থী চিন্তা-ধারা এবং নারী মুখ্য হয়ে উঠলেও পরবর্তীতে ইসলামী ভাবধারাও প্রবল হয়ে উঠে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আগে এবং পরে - এ সময়ের মাঝে তার মতাদর্শে ব্যাপক পরিবর্তন হয়। আল মাহমুদের কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের আগে বাম ধারা দেখা গেলেও ১৯৭৪ সালের পর থেকে তার কবিতায় ইসলামী ভাবধারাও লক্ষ্য করা যায়।

১৯৭২ সালে আল মাহমুদ তৎকালীন গণকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। যে পত্রিকাটির মালিকানা ছিল জাসদের এবং সেটি সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিল।

আল মাহমুদের সম্পাদনায় তখন গণকন্ঠ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি মনে করেন, আল মাহমুদ গণকন্ঠের সম্পাদক থাকলেও তার দলীয় কোনো পরিচয় ছিল না। রাজনৈতিক দল জাসদের প্রতি সহানুভূতি থাকলেও আল মাহমুদ কখনো সরাসরি রাজনীতিতে জড়াননি।

১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ির সামনে জাসদের উদ্যোগে ঘেরাও কর্মসূচীর ডাক দেয়া হয়। সেদিন রাতেই তৎকালীন গণকন্ঠের সম্পাদক আল মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয়।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, " জাসদ গণকন্ঠের মালিক ছিল বলে আল মাহমুদ ভিকটিম হলেন। এবং তিনি অনেক দিন বিনা বিচারে কারাগারে ছিলেন"।

মহিউদ্দিন আহমেদের বর্ণনায় জেল থেকে মুক্তি পাবার পর 'অন্যরকম এক আল মাহমুদের' দেখা মিলল। তখন আল মাহমুদের মধ্যে ইসলামী ধ্যান-ধারণা প্রবল হয়ে উঠে বলে উল্লেখ করেন মহিউদ্দিন আহমেদ।

আল মাহমুদ কবি হলেও তিনি নিজেকে রাজনৈতিক দর্শন থেকে দূরে রাখেননি। এনিয়ে তর্ক-বিতর্ক যাই থাকুক না কেন, কবি আসাদ চৌধুরী আল মাহমুদকে বিচার করেন তার লেখা এবং শিল্পের বিচারে।

শুরুর দিকে বামপন্থী চিন্তাধারার হলেও, সেখান থেকে সরে এসে আল মাহমুদ কেন ইসলামী ভাবধারার দিকে ঝুঁকলেন? ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।

আল মাহমুদ বলেছিলেন তিনি কখনো মার্কসবাদী ছিলেন না বরং তার চরিত্রে এক ধরনের দোদুল্যমানতা ছিল।

তিনি বিবিসিকে বলেছিলেন, " আমি যে পরিবারে জন্মেছি তারা সবাই ছিল খুবই ধর্মপ্রবণ লোক। কিভাবে যেন তাদের মধ্যেই যে রয়েছে সত্যিকারের পথের ঠিকানা এটা আমাকে দূর থেকে ইশারায় ডাকতো"।

আসাদ চৌধুরী বলেন, " বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক মুক্তিযোদ্ধার মতো তারও ক্ষোভ বেশি ছিল। এবং ক্ষোভের প্রকাশটা রাজনৈতিক আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। যেটা অনেকে পছন্দ করেননি। কিন্তু শিল্পীকে বিচার করতে হয় শিল্পের মাপকাঠিতে। আল মাহমুদকে বিচার করতে হবে তাঁর কবিতা দিয়ে"।

কবি হলেও আল মাহমুদ বিভিন্ন সময় সংবাদপত্রে কাজ করেছেন। কিন্তু বরাবরই তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন তাঁর কবিতাকে। লোক-লোকান্তর, কালের কলস, সোনালী কাবিন - একের পর এক কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন তিনি।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, " আল মাহমুদ সবসময় দাবি করতেন তিনি একজন কবি। তিনি কখনোই বলেননি যে তিনি একজন সম্পাদক"।

আহমেদ বলেন, আল মাহমুদ সব সময় চাইতেন তাকে তার কবিতা দিয়েই মূল্যায়ন করা হোক।

আহমেদ বলেন, " একবার মাহমুদ ভাই একটা কথা বলেছিলেন , যেটা এখনো আমার কানে ভাসে। সেটা হলো যে - আর কেউ কি আরেকটি সোনালী কাবিন লিখতে পেরেছে?"

আল মাহমুদের কবিতা বহু সাহিত্যানুরাগীর মনে আলোড়ন তুলেছিল।

১৯৫০ সালের পর বাংলা সাহিত্যে যত কবির আবির্ভাব হয়েছে, শিল্পমান এবং লেখার বিচারে বিশ্লেষকরা আল মাহমুদকে সন্দেহাতীতভাবে প্রথম সারিতেই রাখছেন।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
নাটোরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা জনগণের ভোটে নির্বাচিতদের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করব : ধর্ম উপদেষ্টা ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্টে ভাঙল ৭২ বছরের রেকর্ড তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে ৯ জন নিষিদ্ধ সিদ্ধিরগঞ্জে শেখ হাসিনাসহ ৬১ জনের নামে হত্যাচেষ্টা মামলা সাকিবের ২ উইকেট শিকারের ম্যাচে হারল বাংলা টাইগার্স ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও জামায়াত নেতারা মাথা নত করেননি : রফিকুল ইসলাম অ্যাটর্নি জেনারেল পদে এক নারীকে বেছে নিলেন ট্রাম্প গণহত্যার দায়ে আ.লীগের বিচার করতে হবে : অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন কাজে আসেনি কর্ণফুলী টানেল : উপদেষ্টা জুরাইনে রিকশাচালকদের অবরোধ, পুলিশের সাথে সংঘর্ষ

সকল