পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানী আজহারুল ইসলামের বায়োগ্রাফি ‘ট্যুর দ্য সিএমপি’
- রাবি সংবাদদাতা
- ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৪৯
বিশিষ্ট পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানী, আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চিটাগাংয়ের (আইআইইউসি) প্রাক্তন ভিসি, এমেরিটাস অধ্যাপক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক অধ্যাপক ড. এ কে এম আজহারুল ইসলামের বায়োগ্রাফিমূলক সংবর্ধনা গ্রন্থ ‘ট্যুর দ্য সিএমপি’ (কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্স) সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
মূলত পদার্থবিজ্ঞানীর জন্য ওডে আখ্যায়িত দ্বিভাষিক এই গ্রন্থটিতে নোবেল বিজয়ী লেখকসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা অধ্যাপক ও দেশি-বিদেশি বিখ্যাত গবেষকদের লেখায় উঠে এসেছে অধ্যাপক আজহারুল ইসলামের ৭২ বছরের জীবনে পদার্থবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে করা গবেষণা, লেখা ও চিন্তা-চেতনার বিভিন্ন দিক।
সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের শেষের দিকে অধ্যাপক আজহারুল ইসলামের সম্মানে তার ৭২ বছর বয়সে পৌঁছানোর প্রাক্কালে নিদর্শনস্বরূপ দ্বিভাষিক ভলিউম ‘ট্যুর দ্য সিএমপি’ বইটি প্রকাশ করা হয়। প্রায় সাড়ে তিনশ’ পৃষ্ঠার এই বইটিতে আজহারুল ইসলামকে নিয়ে লেখা নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক আব্দুস সালামের (১৯৭২) পত্র, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, জার্মান, সুইডেন ও চীনের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক ও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। যাতে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা, ল্যাব, বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত তার প্রবন্ধ, পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে তার গবেষণা কার্যক্রমসহ ৭২ বছরের জীবনের ঘটনাক্রম সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে ।
অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম এখন পর্যন্ত ২১১টি গবেষণা পাবলিকেশন, ৭৫টি প্রবন্ধ ও ১৫টি বই লিখেছেন। তিনি ২০২ জন এমফিল, পিএইচডি ও এমএসসি গবেষকের গবেষণা তত্ত্বাবধান করেছেন। পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে রেডিওতে অনুষ্ঠান পরিচালনাসহ টিভি সাক্ষাৎকার এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা তার প্রবন্ধ প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া বিশ্বজুড়ে চলমান বিভিন্ন সন্ত্রাসী আক্রমণ নিয়ে লেখা ‘Bedevilled World’ বই ব্যাপক আলোচিত ও প্রসংশিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দেশে ও দেশের বাইরে ১৬টি পুরস্কারে ভুষিত হয়েছেন তিনি।
পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক আজহারুল ইসলামের জন্ম ১৯৪৬ সালের ২ নভেম্বর বগুড়া জেলায়। তার সহধর্মিনী অধ্যাপক ড. শামসুন্নাহার ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক। এছাড়া তার দুই কন্যাসন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ড. রায়হানা শামস ইসলামও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও ছোট মেয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষক।
বইটি সম্পাদনা করেছেন তারই সহকর্মী অধ্যাপক এস এম হাবিবুর রহমান, এম দেলোয়ার হোসেন, এফ নজরুল ইসলাম ও ফাহমিদা পারভিন। চারশত টাকা (১০ মার্কিন ডলার) মূল্যের এই বইটি বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
প্রফেসর আজহারুল ইসলাম আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত বাংলাদেশের পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি ১৯৬৮-১৯৭৭ পর্যন্ত লন্ডনে পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে দীর্ঘ সময় কাজ করেন। ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভের জন্য লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপরিচিত ইম্পেরিয়াল কলেজ (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি) কাজ করেন এবং পরে সেখানে তিনি পোস্ট-ডক্টোরাল অ্যাসাইনমেন্টের জন্য প্রায় এক বছর অবস্থান করেন। এর পরেই তিনি দেশে ফিরে আসেন। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত পিএইচডি বহিরাগত পরীক্ষক ভাইভা শেষে তাকে তার বিভাগে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু এই সুযোগ পাওয়ার পরও তিনি বিদেশে অবস্থান করেননি।
১৯৭৭ সালে তিনি তার গবেষণা ক্ষেত্র পরিবর্তন করে কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্স-এ কাজ শুরু করেন। ১৯৮৩ সালের প্রথম দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ডিজিটাল সুবিধা পাওয়া না গেলেও তিনি নিজ উদ্যোগে একটি গবেষণা ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য থেকে গবেষণা কাজের সহায়তার জন্য পর্যাপ্ত ই-রিসোর্স সহজলভ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত নিজ অর্থায়নে তিনটি সর্বাধুনিক গবেষণা পত্রিকা সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। ল্যাবকে আরও অধিক কম্পিউটিং, ইন্টারনেট সুবিধা এবং অন-লাইন জার্নাল দ্বারা সজ্জিত করা হয়। এখানে তিনি স্নাতকোত্তর গবেষক ছাত্রদের সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন - যাদের মধ্যে পরে কয়েকজন তার গ্রুপ-সদস্য হন।
প্রফেসর ইসলাম সুযোগ পাওয়ার পরও বিদেশে থাকার পরিবর্তে বাংলাদেশে থেকেই গবেষণা করে গেছেন। তিনি তার নির্দেশনা/শিক্ষণ/গবেষণার মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি প্রজন্মকে প্রভাবিত করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ‘কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্স গ্রুপের’ একশ’রও বেশি স্নাতকোত্তর গবেষণা-শিক্ষার্থী।
‘ট্যুর দ্য সিএমপি’ আসলে প্রফেসর ইসলামের নেতৃত্বে সিএমপি বা কনডেন্সড ম্যাটার পদার্থবিজ্ঞানের কার্যক্রম ও ঘটনার একটি রেকর্ড। গ্রন্থের একটি অংশ নিউক্লিয়ার ও কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্সে অধ্যাপক ইসলাম (ও গ্রুপের সদস্যদের) গুরুত্বপূর্ণ কিছু গবেষণা-নিবন্ধের রিপ্রিন্ট রয়েছে। ভলিউমের অন্যান্য অংশে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ এবং মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে; এছাড়া রয়েছে কবিতা, চিঠি এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য। ফলে এই গ্রন্থে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্সের স্থায়ী প্রভাব রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা