ব্যায়াম করুন, সুস্থ থাকুন
- ডা: আকমান আলী
- ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৪০, আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:০১
ব্যায়াম আমাদের সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। এ জন্য ব্যায়াম সম্পর্কে সবারই ধারণা থাকা দরকার। কোন ব্যায়ামে কী উপকার পাওয়া যায়- তা জানা থাকাটা জরুরি।
ব্যায়াম চার প্রকার-
১. অ্যারোবিক ব্যায়াম- হাঁটা, জগিং, সিঁড়িতে ওঠা, টেনিস খেলা, নাচানাচি, বাইক চালানো, গার্ডেনিং, সাঁতার কাটা। এ ধরনের ব্যায়াম আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস ও হার্টরেট বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্ত চলাচল বাড়ে ও ফুসফুস সুস্থ থাকে এবং ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে।
২. শক্তি- এ ধরনের ব্যায়াম শরীরের হাড় ও মাংসপেশি শক্ত করতে সহায়তা করে। যেমন- হালকা ওজন তোলা, জিমে ব্যান্ড ও মেশিন ব্যবহার শক্তি গঠনে সহায়তা করে।
৩. নমনিয়তা - শরীরের বিভিন্ন অংশ সঙ্কোচন-প্রসারণ করা ও যোগব্যায়াম করা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া।
৪. ভারসাম্য - বেশি বয়সে হঠাৎ পড়ে যাওয়া রোধ করে। যেমন- এক পায়ে দাঁড়ানো, গোড়ালি পায়ের আঙুলে ভর করে হাঁটা।
ব্যায়ামের উপকারিতা
ব্যায়াম করলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং ভালো ঘুম হয়। ব্যায়াম বন্ধ করলে হার্ট ও মাংসের শক্তি কমে যায়। HDL কোলেস্টেরল কমে যায়। সাথে সাথে রক্তচাপ ও শরীরের চর্বি বৃদ্ধি পায়। ফলে ডায়াবেটিস ও হার্টের অসুখ হতে পারে।
১. ব্যায়াম সুখের অনুভূতি বৃদ্ধি করে। মুডের উন্নতি হয়, সাথে সাথে মানসিক অবসাদ, উদ্বিগ্ন অবস্থা ও মনের চাপ দূর করে।
২. শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। অলসতা শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে স্থূলতা আনে। মানুষের শরীর তিনভাবে শক্তি ব্যবহার করে- খাদ্য হজমে, শরীরের কার্যাবলি যেমন- হার্টবিট ও শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া বেশি বেশি ক্যালরি ব্যয় হয়।
৩. ব্যায়াম শরীরের মাংসপেশি ও হাড় বিনির্মাণ এবং স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তা ছাড়া শরীরের হাড় ক্ষয়রোধে ভূমিকা রাখে।
৪. ব্যায়াম শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে। ক্লান্তিভাব দূর করে।
৫. ক্রনিক রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমায়। অর্থাৎ শারীরিক ব্যায়াম না করলে ক্রনিক রোগ হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তা ছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত শরীর বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৬. মধ্যম মানের ব্যায়াম করলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তৈরি হয় এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ফলে ত্বককে সুরক্ষা দেয় এবং শরীরে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
৭. ব্যায়াম ব্রেনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং স্মরণশক্তি ও চিন্তাশক্তিকে সুরক্ষা দেয়।
৮. ব্যায়াম করলে রিলাক্স হওয়া যায়। ফলে দিনে সব কাজ উৎফুল্ল ও আনন্দের সাথে করা যায়।
৯. ক্রনিক ব্যথার জন্য ব্যায়াম করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।
নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে কিছু হরমোন তৈরি হয়, যা আমাদের মনে আনন্দ ও প্রশান্তি আনয়ন করে এবং ভালো ঘুম হয়। বর্তমানে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার ব্যায়াম অনেক রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট এবং সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যায়াম শরীরের জন্য উপকারী।
বয়স বাড়লে শরীরের মধ্যে যে ৯ পরিবর্তন ঘটে
বয়স বেড়ে যাওয়া নিয়ে নারী পুরুষ সবার মধ্যেই কম-বেশি উৎকণ্ঠা রয়েছে। বয়স তো আটকানো যায় না। কিন্তু বয়স বাড়ার গতি যদি একটু কমিয়ে দেয়া যায়, অথবা শরীরে বয়সের ছাপ যাতে দেরিতে আসে, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের নানা ধরণের গবেষণাও রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, শরীরবৃত্তীয় নয়টি উপসর্গের মাধ্যমে বোঝা যায় যে আপনার বয়স হচ্ছে। স্পেনের বিজ্ঞানী ম্যানুয়েল সেরানো সেই দলে রয়েছেন।
তিনি বলছেন, একেকজন মানুষের বয়স বাড়ার লক্ষণ একেক রকম, কিন্তু সবারই তো বয়স বাড়ছেই।
গবেষণায় তারা দেখেছেন, মানুষসহ যেকোন স্তন্যপায়ী প্রাণীর বয়স বাড়ার লক্ষণ প্রায় একই, অর্থাৎ যে সব শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে তা প্রায় একই রকম।
১. ডিএনএ ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে
আমাদের ডিএনএ শরীরের ভেতরকার কোষগুলোর মধ্যে প্রবাহিত এক ধরণের জেনেটিক কোড। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর মধ্যে ভুল হবার সুযোগ বাড়ে।
সেই ভুলগুলো শরীরের কোষের মধ্যে জমা হতে থাকে। এ সময়ে জেনেটিক স্থায়িত্ব কমে যায়, যে কারণে স্টেম সেলের কার্যকারিতা কমে যায়।
২. ক্রোমোজোম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়
আমরা যদি ডিএনএকে একটা সুতার মত ধরি, তাহলে সেটির মাথায় একটি ক্যাপ বা ঢাকনা থাকে যা আমাদের ক্রোমোজোমসমূহকে রক্ষা করে।
এটা অনেকটা জুতোর ফিতার মাথা যেমন প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো থাকে তেমন হয়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ঢাকনাগুলো আলগা হয়ে যেতে থাকে, ফলে আমাদের ক্রোমোজোমসমূহের কোন সুরক্ষা থাকে না।
মানে হলো তখন সেগুলো নিজেদের প্রতিলিপি বানাতে ভুল করে থাকে। সন্তান উৎপাদন প্রক্রিয়া তখন কিছুটা জটিল হয়ে পড়ে।
৩. কোষের আচরণ বদলে যায়
আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে ডিএনএ এক্সপ্রেশন নামে একটি প্রক্রিয়া আছে, যেখানে একটি কোষের মধ্যে থাকা হাজারো জিন নির্ধারণ করে ঐ কোষের কার্যক্ষমতা, অর্থাৎ ঐ নির্দিষ্ট কোষটি শরীরের ত্বক হিসেবে কাজ করবে না মস্তিষ্ক হিসেবে আচরণ করবে।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এবং জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে সেই কোষের আচরণ বদলে যেতে শুরু করে।
৪. কোষ নবায়নের সক্ষমতা হারিয়ে যায়
ক্ষয় হয়ে যাওয়া কোষের পরিমাণ যাতে না বাড়ে, সেজন্য আমাদের শরীরের ক্রমাগত নতুন কোষ তৈরির ক্ষমতা আছে।
কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সেসব দক্ষতা কমে যায়। তখন কোষসমূহ অপ্রয়োজনীয় অথবা বিষাক্ত প্রোটিন জমাতে শুরু করে, যেগুলো চোখের ছানি, আলঝেইমার বা পারকিনসন্স রোগের কারণ হয়ে ওঠে।
৫. কোষের পরিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ হারায়
সময়ের সাথে সাথে শরীরের কোষসমূহ চর্বি বা চিনি জাতীয় উপাদানকে প্রসেস বা পরিপাক করার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।
এজন্য বয়স বাড়ার পর বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়াবেটিস হবার শঙ্কা বাড়ে, আর সেটি সারা পৃথিবীতেই একটি সাধারণ রোগ।।
৬. মাইটোকন্ড্রিয়া কাজ বন্ধ করে দেয়
মাইটোকন্ড্রিয়া শরীরের কোষে শক্তি যোগান দেয়, কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। আর মাইটোকন্ড্রিয়া যখন ঠিকমত কাজ করতে পারে না, সেটা ডিএনএ'র জন্য খারাপ।
তবে, কিছু গবেষণা বলছে, মাইটোকন্ড্রিয়ার কর্মদক্ষতা যদি নতুন করে বাড়ানো যায়, তাহলে সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর আয়ু বাড়ানো সম্ভব হবে।
৭. কোষ ভৌতিক হয়ে যায়
কোন কোষ যখন বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন সেটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু কাজ বন্ধ করলেই কোষের মৃত্যু হয় না।
এই কোষগুলো তখন ভৌতিক কোষে পরিণত হয়।
এবং নিজের চারপাশের কোষগুলোকেও জোম্বি বা ভৌতিক কোষে পরিণত হতে সাহায্য করে। এর ফলে শরীরে জ্বালাপোড়ার মত উপসর্গ দেখা দেয়।
৮. স্টেম সেলের শক্তি কমে যায়
বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমে যায়, যে কারণে তার পুনরুৎপাদনের ক্ষমতা কমে যায়।
কিন্তু বিজ্ঞনীরা দেখেছেন, স্টেম সেলের এই শক্তি কমে যাওয়া ঠেকানো গেলে বয়স বাড়ার গতি কমিয়ে দেয়া যেত।
৯. নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় কোষ
শরীরের মধ্যে সারাক্ষণই কোষেরা নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই যোগাযোগ কমতে থাকে।
এর ফলে শরীরে জ্বালাপোড়া, কথাবার্তা বলতে সমস্যা হতে পারে। এর ফলে শরীরের সতর্ক একটা ভাব হারিয়ে যেতে থাকে।
বয়স বাড়া যদিও একটি স্বাভাবিক এবং অনিবার্য প্রক্রিয়া।
বিজ্ঞানীরা বলছেন স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল বা জীবনযাপন পদ্ধতির মাধ্যমে বয়স বাড়ার গতিকে হয়তো কিছুটা দূরে রাখা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা