২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নিজের কণ্ঠস্বর নিয়ে এই তথ্যগুলো জানলে চমকে যাবেন

কণ্ঠনালী যত লম্বা হয় ধ্বনি তত নিচু হয় - সংগৃহীত

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই একেবারে স্বতন্ত্র আর আলাদা কণ্ঠস্বর নিয়ে জন্মায়। জন্ম থেকেই মানবশরীরে পাওয়া বিস্ময়কর এ যন্ত্রটি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেছে বিবিসি। দেখুন কী জানা গেছে সেই গবেষণায়; জানলে চমকে যাবেন।

১. মায়ের গর্ভে থাকতেই আপনার স্বর পেয়েছে নিজের ভাষার নিজস্ব স্বরভঙ্গী :

জন্মের আগেই, মায়ের গর্ভে থাকার সময়ই শিশু শিখে যায় তার মা-বাবার কথা বলার নিজস্ব স্বরভঙ্গি বা একসেন্ট। বিবিসি জানাচ্ছে, একেক ভাষার একেক রকম যে কথার টান আছে সেটির প্রকাশ ঘটে নবজাতকের কান্নার মধ্যেও।

গবেষকরা একদল ফরাসি ও জার্মান নবজাতককে গবেষণা করে পেয়েছে যে, এই শিশুদের কান্নার ধরণের মাঝেও রয়েছে তাদের ভাষার নিজস্ব টান! গবেষকরা এমনকি এটিও দাবি করেছেন যে, নবজাতকের কান্নার ধরণ দেখেই বলে দেয়া যাবে শিশুটি পৃথিবীর কোন অঞ্চলের।

২. আপনার স্বর-বক্সের ধ্বনিটি যেমন করে বাজে :

বুকের খাঁচা থেকেই স্বর-ধ্বনির শুরু। তারপর গলা, ঠোঁট, চোয়াল, জিহ্বা সহ আরো কিছু প্রয়োজনীয় প্রত্যঙ্গের সহায়তা নিয়ে মানুষ কথা বলে। এভাবে অনেক ধাপ পেরিয়ে আপনার স্বর স্বতন্ত্র হয়ে বেজে ওঠে।

৩. কেন স্বর গভীরতর হয়?

পুরুষের কণ্ঠস্বর তার কৈশোরে ভেঙে পুরুষালী হয়ে উঠে। আর পুরুষের গলায় যে বাইরের দিকে বেরোনো চোখা মতন একটি অংশ আছে সেটিকে ডাকা হয় 'এডাম্স এপল'।

মুখ থেকে গলার অভ্যন্তরে থাকা স্বর-বক্সের যেই দূরত্ব সেটি সাধারণত একটু দীর্ঘ হয় আর এই অংশটুকুকে ডাকা হয় ভোকাল ট্র্যাক্ট বা কণ্ঠনালী।

কণ্ঠনালী যত লম্বা হয় ধ্বনি তত নিচু হয়। তাই পুরুষের স্বর হয় গভীর। আর নারীদের মেনোপজের সময় তাদের স্বরে বদল আসে। তখনই তাদের স্বরের তীক্ষ্ণতাও কমে আসে।

৪. মানুষ যাকে পছন্দ করে তার বলার ভঙ্গি অনুকরন করে :

আপনি যদি কাউকে খুব পছন্দ করেন বা যদি কারো প্রতি আপনার পছন্দের মাত্রা বাড়তে থাকে তাহলে নিজে থেকেই তার কথার ধরণ অনুকরণ করেন।

যেমন, কোনো পুরুষ যদি কোনো নারীকে খুব ভালোবাসে তবে সেই নারীর সাথে কথা বলার সময় কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই সে উঁচু পিচে কথা বলার চেষ্টা করে।

৫. বয়স হলে স্বর দুর্বল হয়ে আসে :

যত বয়স হতে থাকে ততই ভোকাল কর্ড বা স্বরতন্ত্র দুর্বল হতে থাকে। ফলে, বাতাসের উপরে নিয়ন্ত্রণ কমে আসতে থাকে। এজন্যই বয়স্করা দীর্ঘ বাক্য বলতে গিয়ে দম ফুরিয়ে আসে। আর এ বয়সে মাসলগুলো দুর্বল হয়ে বলে স্বরের তীক্ষ্ণতা বেড়ে যায়।

৬. শরীরের তুলনায় স্বরের বয়স বাড়ে ধীরে :

মানুষের কণ্ঠস্বর শুনে তার বয়স অনুমান করার চেষ্টা করেছেন কখনো? বিবিসি বলছে, গবেষণায় তারা দেখেছে যে, মানুষের শরীর যত দ্রুত বুড়ো হয়, স্বর তত দ্রুত বুড়িয়ে যায় না। তাই, মানুষের বয়সের তুলনায় তার স্বর সাধারণত কম বয়সী শোনায়।

৭. নিজের কণ্ঠস্বরকে সাবলীল রাখতে করণীয় :

নিজের স্বরকে সাবলীল আর সুন্দর রাখতে আপনি কিছু সাধারণ ব্যায়াম করতে পারেন। যেমন- যে কোনো একটি শব্দ, ধরা যাক বাংলায়, 'আহামরী' শব্দটি আপনি নিলেন।

এই শব্দটিকে টেনে-টেনে লম্বা করে জোরে জোরে উচ্চারণ করুন। যেমন- আ-আআআআআআ-হা-আআআআআ-ম-অঅঅঅ-রি-ইইইইই। এভাবে একেবারে দম ফুরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত সশব্দে উচ্চারণ করুন। এরকম কয়েকবার করুন।

 

কানে কিছু ঢুকে গেলে কী করবেন?

প্রফেসর ডা: এম আলমগীর চৌধুরী

শিশুদের সহজাত একটা প্রবণতা আছে, ছোট ছোট কোনো জিনিস নিয়ে খেলার সময় নাক, কান বা মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া। বড়দের একটা অভ্যাস আছে কোনো কিছু দিয়ে (যেমন- কটনবাড, মুরগির পালক, ম্যাচের কাঠি) কান খোঁচানো। এতে করে খোঁচানোর সময় কাঠি ভেঙে বা কটনবাডের কটন কানে রয়ে যেতে পারে। তাই সাবধান হওয়া উচিত।

কী কী জিনিস কানে ঢুকতে পারে?

১. কটনবাড বা তুলার অংশ
২. ম্যাচের কাঠি, পুঁতির দানা, বল বিয়ারিং
৩. পেনসিলের শিস
৪. পাখি বা মুরগির পালক
৫. শস্যদানা- চাল, ধান, ফলের বীজ, মুড়ি, চিঁড়া ইত্যাদি
৬. রাবার, কাগজ, ফোম, ছোট ছোট খেলনার অংশ, আরো কত কী?
৭. অনেক সময় জীবন্ত পোকামাকড় যেমন- মশা, মাছি, আস্ত তেলাপোকা, পিঁপড়া ইত্যাদি কানের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।

উপসর্গ :

১. কানে প্রচণ্ড অস্বস্তি হওয়া
২. কানে ব্যথা 
৩. কানে কম শুনতে পাওয়া
৪. জীবন্ত পোকামাকড় কানে ঢুকে গেলে ভীষণ বিরক্তি এমনি ভয়ের উদ্রেক হতে পারে।

চিকিৎসা : কানে যেকোনো কিছু ঢুকে গেলে উপযুক্ত চিকিৎসা হলো- এটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বের করে ফেলা। অবশ্যই এটার জন্য নাক, কান, গলা বিভাগ সম্পন্ন হাসপাতাল অথবা ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

কানে জীবন্ত পোকা ঢুকে গেলে আগে অলিভঅয়েল দিতে হবে, যাতে করে এটি মারা যায় তারপর বের করতে হবে। বাসায় অনভিজ্ঞ হাতে অযথা খোঁচাখুঁচি করবেন না বা অদক্ষ কাউকে দিয়ে বের করার চেষ্টা করবেন না।

শিশুরা ভয়ে কান্না বা নড়াচড়া করলে এবং অসহযোগিতা করলে জোরপূর্বক বের করার চেষ্টা না করে, সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে হাসপাতালে নিয়ে বের করাই উত্তম।

বের না করলে বা অদক্ষ হাতে চেষ্টা করার জটিলতা :

১. বহিঃকর্ণে আঘাত লাগা এবং তা থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া
২. কানের পর্দা ফেটে যাওয়া
৩. মধ্যকর্ণের ভেতরে থাকা ছোট অস্থিগুলোতে আঘাত লাগা
৪. সর্বোপরি মানবদেহের মূল্যবান পাঁচটি অঙ্গের একটি হলো কান, যার শ্রবণশক্তি কমেও যেতে পারে।

মানসম্পন্ন কোম্পানির তৈরি খেলনার প্যাকেটের গায়ে বয়সসীমা লেখা থাকে। আরো লেখা থাকে, এ খেলনায় ছোট পার্টস আছে এবং তা তিন বছরের নিচে শিশুদের ব্যবহারের জন্য নয়। বয়স্কদের উচিত সচেতন থাকা, অযথা যেকোনো কিছু দিয়ে কান না খোঁচানো এবং ছোটদের ছোট ছোট খেলনা দিয়ে খেলতে না দেয়া। এর পরও কানে কিছু ঢুকলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া এবং উপযুক্ত পরামর্শ গ্রহণ করা।


আরো সংবাদ



premium cement