২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ শাবান ১৪৪৬
`

সন্দেহজনক প্রকাশনায় পদোন্নতির আয়োজন চলছে বিএসএমএমইউতে

সন্দেহজনক প্রকাশনায় পদোন্নতির আয়োজন চলছে বিএসএমএমইউতে - ছবি : সংগৃহীত

সন্দেহজনক প্রকাশনায় পদোন্নতির আয়োজন চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। আগামী বুধবার অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেট সভায় পদোন্নতি হতে যাচ্ছে বলে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে।

বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য চিকিৎসকদের সাথে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন যে চিকিৎসক তিনিও একই রকম বঞ্চিত ছিলেন। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর পদোন্নতি পেতে যাওয়া চিকিৎসক তার প্রভাব খাটিয়ে সন্দেহজনক প্রকাশনা দিয়েই পদোন্নতির ব্যবস্থা করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ। তিনি বিএসএমইউ’র অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: এরফানুল হক সিদ্দিকী।

জানা গেছে, সরকার পরিবর্তনের পর পরই বঞ্চিত চিকিৎসকদের যে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হয় তিনিও তাদের একজন ছিলেন। সহকারী অধ্যাপক হলেও তিনি এখন সহযোগী অধ্যাপক পদের দাবিদার। কিন্তু সহযোগী অধ্যাপক হতে হলে যে কয়টি বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা লাগে ডা: এরফানুল হক সিদ্দিকীর তা ছিল না। সে কারণে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের কাছে ‘তিনি নির্যাতিত ছিলেন’ এই কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রোমার্জনা পত্র দাখিল করে ছিলেন যেন, ‘তাকে মার্জনা করে পদোন্নতি দেয়া হয়।’ হঠাৎ করে কয়েক দিন আগে সেই প্রোমার্জনা পত্রটি তিনি আরেকটি চিঠির মাধ্যমে প্রত্যাহার করে নেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রোমার্জনা পত্রটি অফিসিয়ালি প্রত্যাহার করে নেয়ার সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ‘তার ৯টি প্রকাশনা’ আছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানান এবং জমা দেন।

জানা গেছে, এই ৯টি প্রকাশনার মধ্যে তিনি ৪টির ‘ফার্স্ট অথর’ বা প্রথম লেখক তিনি এবং বাকি ৫টি’র সহঅথর বা সহ লেখক। প্রোমার্জনা পত্র প্রত্যাহারের পর পরই তার প্রকাশনা আছে জানানো হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: এরফানুল হক সিদ্দিকীর কাছে জানতে চাইলে গতকাল সোমবার তিনি জানান, ‘এগুলোর আগের পাবলিকেশন।’ এর বাইরে তিনি বলেন, ‘তিনি রোগী দেখছেন, অফিসে এসে এ ব্যাপারে কথা বলুন।’

বিষয়টি নিয়ে বিশ্বদ্যিালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা: মো: নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, ‘ডা: এরফানুল হক সিদ্দিকী যে প্রকাশনা জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী সহযোগী অধ্যাপক হতে ঠিক আছে।’ ‘ডা: এরফানুল হক সিদ্দিকী কেন এই প্রকাশনাগুলো আগে জমা দেননি?’ এ প্রশ্ন করা হলে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো: নজরুল ইসলাম জানান, ডা: এরফানুল হক সিদ্দিকী বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়েছেন যে- তিনি (ডা. সিদ্দিকী) তার প্রকাশনাগুলো সম্বন্ধে আগে জানতেন না, এগুলো তার খোঁজে ছিল না’। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী ডা: এরফানুল হক সিদ্দিকী তার প্রকাশনাগুলোর খোঁজ রাখতেন না। সরকার পরিবর্তনের পর এগুলো তিনি জানতে পেরেছেন।

ডা: এরফানুল হক সিদ্দিকী প্রোমার্জনা চিঠি প্রত্যাহারের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি প্রকাশনা জমা দিয়েছেন। এই ৯টির সবই অনলাইন বা প্রিন্ট কপি, কোনো অরিজিনাল কপি জমা দেননি বলেও জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, যার প্রকাশনা ছাপা হয় তিনি অবশ্যই জানবেন। যে জার্নাল কর্তৃপক্ষ লেখা ছাপায় তারা ফার্ষ্ট অথরের সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলেই ছাপান এবং লেখাটি ছাপা হলে ‘অন্যান্য অথর না জানলেও ফার্স্ট অথর অবশ্যই জানবেন।’

জমা দেয়া প্রকাশনা থেকে জানা গেছে, তার প্রকাশনাগুলোর মধ্যে একটি প্রকাশনা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষক সমিতির। বাকি ৮টির মধ্যে ৭টি ‘স্কলার্স জার্নাল অব এ্যাপ্লাইড মেডিকেল সায়েন্স (এসজেএএমএস) নামক জার্নালের। বাকি একটি প্রকাশনা এসএএস জার্নাল অব সার্জারি (এসএএসজেএস) জার্নালের।

জানা গেছে, এই জার্নালগুলো ভারত থেকে প্রকাশিত হয় এবং এই জার্নালগুলোর কোনোটাই পাবমেড বা স্কুপাসের সহযোগী নয়। যে জার্নালগুলো পাবমেড বা স্কুপাসের সহযোগী নয়, সেগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবেই সন্দেহের চোখেই দেখা হয়ে থাকে।


আরো সংবাদ



premium cement