বাবা চকলেট, চিপস নিয়ে আসবেন, এমন আশা নিয়েই দিন কাটছে শিশু হুমায়রার
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:১০
আমার আব্বু ঘুম থেকে ওঠে না কেন? আব্বু কবে আসবে? এতো ঘুমায় কেন? ঘুম থেকে উঠলে আব্বু চলে আসবে, আমার জন্য চকলেট চিপস নিয়ে আসবে, এমন আশা নিয়ে প্রতিটি দিন পার করছে ছোট্ট শিশু ছয় বছরের হুমায়রা আক্তার।
কুমিল্লায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ মিলন মিয়ার একমাত্র সন্তান হুমায়রা। সে স্থানীয় খান্নাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
শহীদ মিলন মিয়া (৩২) কুমিল্লার নাঙ্গলকোট পৌরসভার খান্নাপাড়া এলাকার কবিরাজ বাড়ির বাসিন্দা। বাবা মো: নূর ইসলাম (৬৫) একজন সিএনজিচালক। মা নুরুনন্নেছা (৫৬) গৃহিণী।
শহীদ মিলন মিয়ার স্ত্রী খালেদা আক্তার (২৬) ও একমাত্র সন্তান হুমায়ারা আক্তার।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট কুমিল্লার নাঙ্গলকোট পৌর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রেল স্টেশন এলাকায় যোগ দেন মিলন। সেখানে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে পিটিয়ে আহত করে। পরে আহতাবস্থায় তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর নেয়া হয় নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে। সেখান থেকে পাঠানো হয় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই সময়ে আর্থিক সঙ্কটের কারণে ঢাকায় না নিয়ে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে দু’দিন আইসিওতে থাকার পর ৭ আগস্ট তিনি মারা যান।
দু’ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে মিলন পঞ্চম। সবার বড় বোন মর্জিনা আক্তার (৩৮), দ্বিতীয় বোন আসমা আক্তার (৩৬), তৃতীয় বোন রাবেয়া আক্তার (৩৪)। চতুর্থ ভাই মামুন মিয়া (৩৩) বিবাহিত। সে পেশায় একজন সিএনজিচালক। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন শহীদ মিলন। মিলনের পরের বোন ফজিলোতুননেছা (১৮) বিবাহিত ও সবার ছোট বোন আকলিমা আক্তার (১৫) স্থানীয় শ্রীকান্ত মাদরাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী।
শহীদ মিলন মিয়ার বাবা নূর ইসলাম বলেন, ‘আমার দু’ছেলে ও পাঁচ মেয়ের বড় সংসার। আমি ও আমার দু’ছেলে সিএনজি চালিয়ে সংসার চালাতাম। আমার ছেলে মিলনকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পিটিয়ে ও মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে। ছেলেটির একটি মাত্র মেয়ে ও স্ত্রী আজ অসহায়।’
তিনি জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লাখ টাকা এবং মুরাদনগরে একটি অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার কাছ থেকে দু’লাখ টাকা অনুদান পাওয়ার কথা জানান।
মা নুরুনন্নেছা বলেন, ‘আমার ছেলেটাকে তারা পিটিয়ে হত্যা করেছে। সে আহতাবস্থায় বাসায় আসে। আমি তার কাছে গেলে সে মা ডাকতে চেষ্টা করেও পারেনি। মুখ দিয়ে কথা বের হয়নি। মা বলে কিছু একটা বলতে চেয়েছিল। তার শেষ কথাটা আমার আর শোনা হলো না।’
শহীদ মিলন মিয়ার স্ত্রী খালেদা আক্তার বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট আমার স্বামী আন্দোলনে গেলে তাকে আওয়ামী লীগেরকর্মীরা পিটিয়ে ও মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে মারাত্মক আহত করে। আহতাবস্থায় বাসায় আসে। কিন্তু কোন কথা বলতে পারেনি। পরে বিভিন্ন হাসপাতালের পর কুমিল্লা ট্রমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিওতে ৭ আগস্ট মারা যায়।
তিনি আরো বলেন, ‘আমার বাবা নেই, স্বামীও মারা গেছে। একমাত্র সন্তান শিশু হুমায়রাই আমার একমাত্র অবলম্বন। শ্বশুর বাড়ির ও আমার বাবার বাড়ি সবাই নিম্ন-আয়ের মানুষ। দিন আনে দিন খায়। তারা কেউই আমার ভরণ-পোষণ চালানোর মতো অবস্থায় নেই। আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিল মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করবে। আমি আমার মেয়েটাকে লেখাপড়া করাতে চাই। স্বামীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই। সেজন্য সরকার বা বিত্তবানদের সহযোগিতা চাই। তাছাড়া ছোট্ট একটা চাকরি পেলেও কোনো রকম জীবনটা বাঁচাইতে পারতাম। নয়তো পথে বসতে হবে।’
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আল আমিন সরকার বলেন, ‘সরকারি যেকোনো সহযোগিতা আগে শহীদ মিলন মিয়ার পরিবারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়া হবে। এছাড়া তার মেয়ের লেখাপড়ার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সূত্র : বাসস
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা