প্রক্লেমেশন না হলে বিপদ আছে : বিচারপতি আব্দুর রহমান
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৪৮
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমান বলেছেন, পৃথিবীর সব দেশেই বিপ্লবের পর বিপ্লবী পরিষদ হয়। সেই বিপ্লবী পরিষদ তার ক্ষমতা নেয় একটি প্রক্লেমেশনের মাধ্যমে। বিপ্লব কিন্তু সংবিধান মেনে হয় না। পৃথিবীতে যত বিপ্লব হয়েছে সেই বিপ্লব একটি নতুন লিগ্যাল অর্ডার তৈরি করেছে। সেই লিগ্যাল অর্ডারের যে ভিত্তি ভূমি, তা সমূলে গ্রহণ করতে হয় প্রক্লেমেশন অব রেভ্যুলেশনের মাধ্যমে। প্রক্লেমেশন অব রেভুলেশন সেই বিপ্লবী পরিষদকে ক্ষমতা দেয়। সেই প্রক্লেমেশনের পক্ষে থাকে সমস্ত জনগণ। কিন্তু এই প্রক্লেমেশনটা আমাদের এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এটা ঘোষণা না করায় যে কত বড় বিপদ রয়ে গেছে সেটা আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) এখনো খেয়াল করছেন না কেন? বর্তমান সংবিধান দিয়ে চলছেন আপনারা। সংবিধানের কোনো অস্তিত্ব নেই।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত : জুলাই ঘোষণাপত্র, গণপরিষদ ও সংবিধান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটির সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল উইং।
সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার প্রমুখ।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমান বলেন, ‘সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের বলে আপিল বিভাগ থেকে একটি মতামত নিয়েছেন। ১০৬-কি বলা হয়েছে? এমন আইনগত প্রশ্ন উত্থাপন হয়েছে যা রাষ্ট্রপতি মনে করছেন আপিল বিভাগ থেকে মতামত গ্রহণ করা আবশ্যক। বিপ্লব কি আইনের প্রশ্ন? যে সরকারকে আমরা ঝেটিয়ে বিদায় করেছি সেই বিপ্লব কি আইনের প্রশ্ন? তাহলে কিসের ভিত্তিতে আইনের এমন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে? যা ১০৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে মতামত দিতে হবে? ১০৬-এর কোনো ভিত্তি নেই।’
তিনি বলেন, ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে যারা ২১ বছর এসে ফেলে দিয়ে শত শত লোককে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন, তারা যদি আবার ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে কি আপনাদেরকে ফাঁসি দেবে না কি আদর করবে? ফাঁসিতে ঝুলাবে। ফাঁসিতে যাতে ঝুলাতে না পারে এটা আমাদের চিন্তা করতে হবে। ৮ আগস্ট থেকে সব কর্তৃপক্ষকে বলছি প্রক্লেমেশন করেন। না হলে বিপদ আছে। তাদের ধারণা ১০৬ অনুচ্ছেদ ভিত্তি। ১০৬ ভিত্তি ভূমি নয়। সুতরাং প্রক্লেমেশন হতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘একটা সরকার পরিবর্তন হয় কিভাবে? নিয়মিত এবং অনিয়মিত দু’ভাবে। নিয়মিত পরিবর্তন হলো নির্বাচনের মাধ্যমে। আর অনিয়মিত পরিবর্তন হয় তিনভাবে। আন্দোলন, অভ্যুত্থান ও বিপ্লব। আন্দোলন তখনই হয় যখন একটি সরকারকে পরিবর্তন করার জন্য বিরোধী দল ও জনগণ মিলে রাস্তায় আন্দোলন করে। সেই আন্দোলনকে সম্মান দেখিয়ে সরকার পদত্যাগ করে নির্বাচন দেয়। আরেকটি পরিবর্তনের উপায় হচ্ছে সামরিক অভ্যুত্থান। এটি বহুবার দেখেছি। আরেকটি হচ্ছে বিপ্লব। বিপ্লব হচ্ছে এমন একটি স্বৈারাচারকে হটানো। সমগ্র দেশের জনগণ যখন রাস্তায় নেমে এসে রক্তাক্ত অথবা অন্য কোনোভাবে একটা স্বৈরাচারকে টেনে নামায়, সেটাকে বলে বিপ্লব।’
গণপরিষদ নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে সাবেক এই বিচারপতি বলেন, ‘গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে তারা একটা সংবিধান তৈরি করবে। তখন একটি আইনগত ভিত্তি পেয়ে যাবেন। এই নির্বাচন কমিশন গণপরিষদ নির্বাচন করবে। পরে তারা জনগণের মতামত নিয়ে একটি সংবিধান তৈরি করবে। যে দিন সংবিধান গৃহীত হবে সেদিন গণপরিষদ একটা পার্লামেন্টে পরিণত হবে। নতুন করে নির্বাচন করতে হবে না। তাহলে প্রক্লেমেশনের মাধ্যমে আইনগত ভিত্তিটা পাব। এরপর গণপরিষদ নির্বাচন করব। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সংবিধান পাব। সংবিধানের মাধ্যমে একটি সংসদ পাব। সেই সংসদের মাধ্যমে সরকার গঠিত হবে। আর বর্তমান সরকার তখন বিদায় নেবে। কিন্তু আপনারা যে পথে হাটছেন তা অত্যন্ত বিপদজনক। সুতরাং এখনো সময় আছে ভূতাপূর্বভাবে প্রক্লেমেশনটি করেন কোনো অসুবিধা নেই।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সংবিধানে একজন ব্যক্তিকে জাতির পিতা ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা নতুন সংবিধানে ফাউন্ডিং ফাদার্স করতে চাই। আমরা এক ব্যক্তি থেকে সবার মাঝে ইতিহাস ভাগ করতে চাই। আমরা চাই, সরকার আমাদের ডিক্লারেশনকে প্রকাশ করবে। যদিও আমরা কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখছি না। খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা-এসব সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে থাকতে হবে। নতুন সংবিধানের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে। যারা সংবিধান রচনা করবে এবং আইন সভার দায়িত্ব নিবে। রাজনৈতিক দলগুলোর এ গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে কোনো আপত্তি থাকার কথা না। কারণ, দু’টি নির্বাচন একইসাথে হতে পারে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা