১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১০ রজব ১৪৪৬
`

বিয়ের আনন্দকে ম্লাণ করে লিজা ফিরে এলেন লাশ হয়ে

- ছবি : বাসস

বাড়ির উঠোনে বাজার কথা ছিল বিয়ের বাজনা। সেই মতো শুরু হয়েছিল প্রস্তুতিও। অথচ বিয়ের সেই আনন্দকে ম্লাণ করে লিজা আক্তার (১৯) ফিরে এলেন লাশ হয়ে। জুলাই-আগস্টের উত্তাল দিনগুলোতে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের মধ্যে লিজা আক্তার একজন।

লিজা ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাড়ির দিনমজুর মো: জয়নাল সিকদারের (৬০) মেয়ে। রাজধানী ঢাকার শান্তিনগরে ১২ তলা ভবনের সাত তলার একটি ফ্ল্যাটে গৃহকর্মীর কাজ করতেন।

ঢাকাতে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গত ১৮ জুলাই দুপুরের পর গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান তিনি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে ঢাকায় সহিংসতায় ভোলার বিভিন্ন পরিবারের ৪৬ জন শহীদ হয়েছেন।

প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, এ তালিকায় আরো শহীদের নাম যুক্ত হতে পারে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকাতে সহিংসতায় ভোলার যারা নিহত হয়েছেন, এদের মধ্যে পাঁচজন শিক্ষার্থী। বাকিরা সবাই জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু সহিংসতায় প্রাণ দিতে হয়েছে তাদের। গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ স্বাভাবিক হলেও কিছুতেই শোক কাটছে না নিহতদের পরিবারের। লিজা আক্তারের পরিবারেও চলছে একই অবস্থা।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ওই দিন গোলাগুলির শব্দ শুনে বাসার বেলকনিতে দাঁড়িয়েছিলেন লিজা। এ সময় হঠাৎ করেই তিনি গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ জুলাই তার মৃত্যু হয়।

অভাব অনটনের সংসারে অনেকটা বাধ্য হয়েই আট বছর আগে গৃহকর্মীর কাজে লিজাকে ঢাকাতে পাঠান তার মা-বাবা। ঢাকার শান্তিনগর এলাকায় যে বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন সে বাসার মালিক ভালো মনের হওয়ায় বাড়িতে তেমন আসা হতো না লিজার। দুই-এক বছর পর পর গ্রামের বাড়িতে আসতেন তিনি। পাঁচ বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে লিজা ছিলেন চতুর্থ। মেয়ের বয়স বেড়ে যাওয়ায় বাবা-মা মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য পাত্র দেখা শুরু করেন। মেয়েকে বাড়িতে চলে আসতে বলেছিলেন মা ইয়ানুর বেগম। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য ঘর মেরামতও করিয়েছেন।

লিজা মাকে বলেছিলেন, তিনি একজনের কাছে বিকেল বেলা কোরআন শরীফ পড়া শিখছেন। তার কোরআন শরীফ পড়া শেষ হতে আর দুই-তিন মাস সময় লাগবে। এরপর বাড়িতে চলে আসবেন। লিজা আক্তার বাড়ি ফিরলেন। তবে লাশ হয়ে।

লিজা আক্তারের বড় বোন সালমা বেগম জানান, পরিবারের অভাবের কারণে ছোটবেলায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে শান্তিনগরের একটি বাসায় সে গৃহপরিচারিকার কাজ করতো। লিজার বিয়ের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে প্রস্ততিও নেয়া হয়েছিল। ঋণ নিয়ে নতুন করে ঘরের কাজ করানো হয়। পাত্রও দেখছিলেন তারা। কিন্তু লিজা কোরআন শরীফ পড়া শেষ হওয়ার জন্য সে সময় গ্রামের বাড়িতে আসেননি।

গত ১৮ জুলাই লিজা আক্তার মহররমের রোজা রেখেছিলেন। বিকেলে শিক্ষিকার কাছে বাসায় কোরআন শরীফ পড়ছিলেন। এ সময় বাইরে গোলাগুলির আওয়াজ পেয়ে ফ্ল্যাটের বারান্দায় উঁকি দিয়ে বাইরে তাকাতেই একটি গুলি এসে তার বুকে লাগে। সাথে সাথে তিনি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন।

দ্রুত তাকে কাকরাইলের আরোরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপাচার করে গুলি বের করেন চিকিৎসক। কিন্তু আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ জুলাই বিকেলে তিনি মারা যান। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়ি ভোলার পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

লিজা আক্তারের চিকিৎসা ও লাশ দাফন করা পর্যন্ত সকল খরচ বাসার মালিকই বহন করেছেন।

লিজা আক্তারের বাবা মো: জয়নাল সিকদার জানান, মেয়ে মারা যাওয়ার পর সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় সাচড়া ইউনিয়ন জামায়াত ইসলামী নেতা মাওলানা আব্দুল হাই অনুদান দেয়ার জন্যে তাকে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে একটি সভা করে তাদের হাতে দুই লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন। এরপর ৪ সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় তিনি একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ঢাকাতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। এখনো তার সেই অসুস্থতা কাটেনি।

এদিকে লিজার পরিবারের জন্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ভোলার জেলা প্রশাসক মো: আজাদ জাহান বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদ কিংবা আহত সকল পরিবারকে সহযোগিতা করা ও তাদের আগামী পথচলা নিশ্চিতে সরকার ওয়াদাবদ্ধ।

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিংয়ে নিষিদ্ধ সাকিব আবারো চুয়াডাঙ্গায় ডিজিটাল স্ক্রিনে ভেসে উঠল ‘ছাত্রলীগ ভয়ংকর রূপে ফিরবে’ পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বিদেশী আইনজীবী নিয়োগ করবে সরকার : গভর্নর ‘দেশ পুনর্গঠনে সব অঞ্চলের অংশগ্রহণ ও সাম্যতা নিশ্চিত করতে হবে’ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের উপর চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান নাহিদের ডেঙ্গুতে আরো ১ জনের মৃত্যু গাজায় বেঁচে থাকা ‘ক্রমশ অসম্ভব’ হয়ে উঠছে : অ্যামনেস্টি ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুপারিশ ও প্রস্তাবনা জমা দেবে শ্রম সংস্কার কমিশন ঘোড়ার আগে গাড়ি, কাজের কথা নয় বাংলাদেশের প্রতি ভারতের বৈরিতা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার শীতার্ত প্রতিবন্ধীদের মধ্যে কম্বল বিতরণ

সকল