পুলিশ দেখলেই কলিজা কাঁপে শহীদ সোহেল রানার মায়ের
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪২
‘এখন পুলিশ দেখলেই আমার কলিজা কাঁপে। এরাইতো মারছে আমার বাবারে। আমার বাবা নেই এখন আমার কী হবে। আমাকে একা রেখে আমার বাবাকে আল্লাহ নিয়ে গেছে। আমি কারো কাছে বিচার চাই না, আল্লাহর কাছে বিচার চাই। আল্লাহ এদের বিচার করবে। কই পাবো আমার ছেলেকে? আমার ছেলেতো আর মোবাইলে একটা কথাও কয় না। মা তুমি কি করো? আমার একটু অসুখ হলে ডাক্তারের কাছে ফোন দিয়ে বাড়িতে ডাক্তার পাঠাতো। এখন তো আর কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে না। আমি কেমন আছি, কি করছি।‘
এভাবেই কান্না জড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ সোহেল রানার বৃদ্ধা মা নুরজাহান (৬৫)।
শহীদ সোহেল রানা ১৯ জুলাই ঢাকার রামপুরা বেটার লাইফ হাসপাতালের সামনে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। ২৩ জুলাই বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
শহীদ সোহেল রানা (২৭) জেলার কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের মহিষবেড় এলাকার মরহুম জমির উদ্দিনের ছোট ছেলে। পেশায় তিনি মাইক্রোবাসচালক ছিলেন। তিনি রামপুরার মৌলভীরটেক এলাকায় বাস করতেন।
ছয় ভাই বোনের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন সোহেল রানা। তার বড় ভাই খোকন মিয়া (৩৬) সৌদি আরব প্রবাসী। এছাড়া তার শাহনাজ (৩১), শাবানা (২৯), রোজিনা (২৫) ও মরজিনা (২১) নামে চার বোন রয়েছে। সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের শহীদের তালিকায় এক নম্বরে সোহেল রানার নাম রয়েছে।
ছোট বোন রোজিনা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মতো ভাই হয় না। সব সময় আমাদের খোঁজ-খবর নিত। আম্মা অসুস্থ হলেই ফোনে আমাকে জানাতো। বলতো তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও, গিয়ে মায়ের সেবা-যত্ন করো। এই চার-পাঁচ মাসে এখনতো আর কেউ ফোনও দেয় না, কেউ বলেও না, আমার ভাইয়ের মতো কাউকে আমি দেখিও না। আমাদের কে আছে? কার কাছে যাবো? এক ভাই আছেন। উনি তো প্রবাসী। আমার ভাইকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই।‘
তিনি জানান, ‘তারা বিএনপির পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা এবং জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এক লাখ টাকার অনুদান পেয়েছেন। তবে সরকারের কাছ থেকে এখনো কোনো অনুদান তারা পাননি।‘
তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে দাবি জানাই আমার ভাইয়ের সঠিক মর্যাদা দেয়া হোক।‘
চাচতো ভাই মো: আশিক বলেন, ১৯ জুলাই সোহেল ভাই গ্যারেজে গিয়ে গাড়ি রাখে। জোহরের নামাজ পড়ে রাস্তায় বের হন। এ সময় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছিল। হঠাৎ পিছন দিক থেকে সোহেল ভাইয়ের মাথায় একটি গুলি লাগে। এতে তার মাথার মগজ বের হয়ে যায়। তাকে স্থানীরা উদ্ধার করে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ জুলাই সোহেল ভাইয়ের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরে লাশ আনতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। লাশ পুলিশ দিতে চাচ্ছিল না। অনেকের হাত-পায়ে ধরে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। পারিবারিকভাবে আমদের পরিবারের সবাই বিএনপির সমর্থক। এখন যদি সরকার সোহেল রানা ভাইয়ের পরিবারের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে তার বৃদ্ধা মা কোথায় যাবেন?
এলাকাবাসী আব্দুল করিম বলেন, ‘এভাবে ছাত্রদের ওপর গুলি করে মানুষ মারার আমি নিন্দা জানাই। যারা সোহেল রানা ও ছাত্র-জনতা হত্যার সাথে জড়িত তাদের কঠিন বিচার চাই আমরা।’
সূত্র : বাসস
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা