গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনায় রাষ্ট্রযন্ত্রের হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:০৭
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালনায় রাষ্ট্রযন্ত্রের হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ, একমাত্র জীবিত প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জনহিতকর দাতব্য ট্রাস্ট। আপনারা সবাই অবগত আছেন যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের যাত্রা এবং যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। যার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধাহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশী উদ্বাস্তু ও স্থানীয় জনগণকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা। এই ফিল্ড হাসপাতালের অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম এবং ডেপুটি ক্যাপ্টেন ছিলেন ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ ও ডা. আখতার। প্রতিষ্ঠার চার মাস পর যুদ্ধের সময় কয়েকজন তরুণ চিকিৎসক হাসপাতালে যোগ দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং ডা. এম এ মুবিন অন্যতম।’
তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল পরবর্তীতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তৎকালীন সরকার প্রধান এই প্রতিষ্ঠানকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামকরণ করেন এবং ৩০ একর জমি দান করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে যাদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তারা হলেন ডা. এম এ মুবিন (বর্তমানে যুক্তরাজ্য প্রবাসী), ডা. কাজী কামরুজ্জামান, ডা. এ টি এম জাফর উল্লাহ চৌধুরী (মরহুম), ডা. মো: আলতাফুর রহমান (লন্ডন প্রবাসী, গুরুতর অসুস্থ), ডা. বারকাত আলী চৌধুরী (প্রবাসী), বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. নাজিম উদ্দীন আহমেদ (জীবিত)। পরে ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭২ তারিখে চার সদস্যের সমন্বয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা করা জন্য চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দলিল সৃজন করা হয়। তারা হলেন ডা. এ টি এম জাফরুল্লাহ চৌধুরী (মরহুম, প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি), ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ (প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি), সাদেক খান (মরহুম, ট্রাস্টি), এম জাকারিয়া (মরহুম, ট্রাস্টি)। পরে ১৯৮০ সালে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট্রের প্রথম সম্পূরক নথি তৈরি করা হয় এবং দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। আশির দশকের শেষদিকে হঠাৎ এম জাকারিয়া অসুস্থ হয়ে গেলে ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী ও ডা. নাজিম উদ্দীন আহমেদ মানবিক কারণে এম জাকারিয়ার স্ত্রী অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা মায়াকে প্রধান নির্বাহী হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরীর একক সিদ্ধান্তে আমার অগোচরে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে এম জাকারিয়ার (ট্রাস্টি সদস্য) বাসভবনে গোপনে একটি কমিশন গঠন করে এবং অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা মায়া এবং ডা. কাশেম চৌধুরীকে (দীর্ঘ দিনের বেতনভুক্ত কর্মচারী) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য করেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জীবদ্দশায় ও কতিপয় দুষ্টচক্রের প্রভাবে এবং তার সম্মানের কারণে এই প্রতারণার প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। পরে ২০২৩ সালে ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করলে থলের বিড়াল বের হতে থাকে। বর্তমানে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্ট্রি ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ এই প্রতারণার বিরুদ্ধে একটি সিআর মামলা ও একটি দেওয়ানি মোকদ্দমা দায়ের করেন। যা আদালতে চলমান আছে। মামলা নং যথাক্রমে সিআর মামলা নং- ৩৭২/২৩ এবং দেওয়ানি মোকদ্দমা নং- ৭০২/২৩)।’
ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে কিছু স্বার্থান্বেষী ও প্রতারক চক্র রয়েছে, যারা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে লুটের স্বর্গরাজ্য পরিণত করেছে এবং তাদের নামে রয়েছে বহু দুর্নীতি ও জালিয়াতির মামলা (যেমন মিথ্যা দলিলের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিষ্ঠানের গাছ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেংকারী, জাল সনদ দাখিল করে ও শিক্ষাগত যোগ্যতার নামে মিথ্যা উপাধি ব্যবহার করে অর্থ প্রতারণা এবং আইসিইউ-এর নামে অনুদানের অর্থ তসরুপ)।’
ধারাবাহিকভাবে তিন দুষ্ট চক্রের দুনীতির তথ্য :
১। ক) ডা. মঞ্জুর কাদির আহম্মেদ (সাবেক প্রধান নিবাহী ও সমন্বয়ক, বর্তমানে সিনিয়র ডাইরেক্টর, কক্সবাজার অফিস)। তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নবীন মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন এবং অতি সুকৌশলে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরীকে অন্য পন্থায় (একান্ত ব্যক্তিগত বিধায় প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না) উদ্বুদ্ধ করে নিজ আয়ত্বের কব্জায় নিয়ে আসেন। যা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনেকেই অবহিত। তাহার নামে সুনির্দিষ্টভাবে পটুয়াখালীতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নামে জমি ক্রয়ের কথা বলে পাঁচ লাখ টাকারও বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। যে বিষয়ে আদালতে প্রতারণার মামলা চলমান রয়েছে।
খ) তিনি সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজে মিথ্যা সনদ দাখিল করে ফিজিওলজি ও পরবর্তীতে কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদের বিপরীতে প্রায় নয় লাখ টাকা বেতন/সন্মানি ভাতা উত্তোলন করেছেন। তাহার জাল সনদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ (বিএমডিসি) সরাসরি অভিযোগ দাখিল করেছেন।
গ) তিনি এক বেনিফিসিয়ারীর আইসিইউ-এর অনুদানের ৫০ লাখ টাকা ডা. মঞ্জুর কাদির আহমেদ ও ডা. রেজাউল হক এবং ডা. মুহিবুল্লাহ খন্দকারসহ আত্মসাৎ করেছেন।
ঘ) তিনি রিফিউজি কার্যক্রমের চার শতাংশ হতে ভাতাদি উত্তোলন করে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
ঙ) তাহার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট নারী কেলেংকারী রয়েছে।
২) ডা. মুহিব উল্লাহ খন্দকার সাবেক, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ। তিনি বিদেশী ছাত্র কোটার বিপরীত শিক্ষার্থী ভর্তি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এই দুষ্ট চক্রের পক্ষে সার্বিকভাবে সহায়তা করে যাচ্ছেন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা মায়া ও ডা. কাসেম চৌধুরী।
এই ট্রাস্টিগণ দুষ্ট চক্রকে রক্ষা করার জন্য অবৈধভাবে গণস্বাস্থ্যকে দখল করে একনায়কতন্ত্রের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে একমাত্র বৈধ প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. নাজিম উদ্দীন আহমেদকে ডা. মঞ্জুর কাদির আহম্মেদ, ডা. কাসেম চৌধুরী, ডা. কনা চৌধুরীদের নির্দেশে অপমান করে গত ২৪ আগস্ট যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে সাভার গণস্বাস্থ্য হতে বিতাড়িত হতে বাধ্য করেছেন।
ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি একমাত্র প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি হিসেবে ১ ডিসেম্বর চার সদস্য ডা. মনোয়ারা বেগম, প্রফেসর ড. মুহম্মদ নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, ডা. গোলাম রহমানকে নিয়ে নতুন ট্রাস্টি দলিল সম্পাদন করি এবং গত ১৭ ডিসেম্বর সকল ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের সমন্বয়ে সভা করতে গেলে পুনরায় একইভাবে বর্তমান সরকারের এক নারী উপদেষ্টার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ট্রাস্ট্রি সদস্যদেরকে বাধা প্রদান করেন, বিভিন্নভাবে ট্রাস্টি সদস্যদের হেনস্থা করেন এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে জোরপূর্বক বের করে দেন।’
তিনি দাবি করেন, ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এক এবং অভিন্ন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। এ প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের দুর্নীতিবাজের দায়িত্ব পালনের কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া ১৭ ডিসেম্বর ডা. মঞ্জুর কাদির আহম্মেদ, ডা. রেজাউল হক ও সন্ধ্যা রায়ের নেতৃত্বে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্যায় কার্যক্রমের প্রতিবাদ করা ৩০ বছর যাবত কর্মরত কর্মীদের বাসা থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয় এবং কিছু কর্মীকে শারিরীকভাবে হেনস্থা করেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই যে শিরিন হক (ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী), সরকারের একজন নারী উপদেষ্টা ও ডা. কনা চৌধুরী তারা কেউ বৈধ ট্রাস্টিবোর্ডের সদস্য নহে। অবৈধভাবে চর দখলের মতো এ সরকারের এক নারী উপদেষ্টার শক্তিতে বলিয়ান হয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্নীতি ও দুষ্ট চক্র রক্ষা করা। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মী কল্যাণ তহবিলের কোটি কোটি টাকা লুটপাট ও বিভিন্ন জমি বিক্রির পাঁয়তারা ও অনেক প্রকল্প বন্ধে এই দুষ্ট চক্র বদ্ধপরিকর।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী এমপি এ কে আজাদ গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস দখলের জন্য তার মালিকানাধীন মিডিয়া ও নিউজ পেপারের মাধ্যমে আমাকে ও নিবন্ধিত ট্রাস্টিদের নিয়ে মিথ্যা গুজব ও প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমল থেকে যা এখনো অব্যাহত আছে। এ কে আজাদ ও শিরিন হকের (ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী) যোগসাজশে মেডিক্যাল কলেজের কিছু সাবেক ডাক্তারদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে কিছু কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে তাদের তথাকথিত প্রোপাগান্ডা বাস্তবায়নের প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার যেখানে দুর্নীতিবাজ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সেখানে সরকারের একজন নারী উপদেষ্টার ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে এই ধরনের হস্তক্ষেপ সত্যিই দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। আমাদের কয়েকজন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিষ্ঠিত স্বপ্নের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা, একমাত্র জীবিত প্রতিষ্ঠাতা ও বৈধ নিবন্ধিত ট্রাস্টিদেরকে সসম্মানে সাধারণ মানুষের কল্যাণে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জনহিতকর দাতব্য ট্রাস্ট-এর কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে রাষ্ট্রযন্ত্রের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষন করছি।’
তিনি গণস্বাস্থ্যের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন। একইসাথে এ বিষয়ে সমাজের সচেতন নাগরিকসহ সাংবাদিক বন্ধুদের সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা