ঐতিহ্য নিয়ে টিকে আছে ঘোড়ার গাড়ি
- আরিফ হোসাইন
- ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৩, আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪
আধুনিকতার তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যেও এখনো টিকে আছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি। সদরঘাটে কলেজিয়েট স্কুলের সামনে থেকে গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজার পর্যন্ত অন্যান্য গাড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে এখনো চলছে প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি। অবশ্য, যান্ত্রিক যানবাহনের ভিড়ে ঘোড়ার গাড়ি এবং সেইসাথে এর যাত্রীও কমে গেছে।
নবাবি শাসনামলে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন ছিলো বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। পরে ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এখন নবাবি ও জমিদারি শাসন না থাকলেও পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের সাথেই মিশে আছে এ গাড়ি। স্থানীয়দের কাছে টমটম নামেই পরিচিত এই ঘোড়ার গাড়ি।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই গাড়ি। যানজট এবং অন্য অনেক প্রতিকূলতা সামাল দিয়ে একটি গাড়ি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ছয়বার সদরঘাট-গুলিস্তান রুটে যাওয়া-আসা করতে পারে। একটি টমটম গাড়িতে সর্বোচ্চ ১৫ জন যাত্রী বসতে পারে। ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা করে নেয়া হয়। তবে বিশেষ দিনগুলোতে প্রত্যেক যাত্রীর ভাড়া হয়ে যায় ৫০ টাকা।
গাড়ির কোচয়ান রেদোয়ান বলেন, ছয় বছর ধরে গুলিস্তান রুটে টমটম চালাই। এই গাড়ি ঢাকাইয়াদের ঐতিহ্য। আগে নিত্যদিন যাতায়াত করলেও এখন মানুষ শখ করে বেশি ওঠেন। এই রুট ছাড়াও মানুষের বিয়ে ও বিভিন্ন উৎসবে টমটম ভাড়া নেয়া হয়। আগে রাস্তায় ৩৫টি গাড়ি ছিল। এখন এ লাইনে আছে মাত্র ২৫টি। রিকশা, মোটরসাইকেল বাড়ায় এখন মানুষ আর উঠতে চায় না। আগে দিনে ট্রিপও ছিল বেশি। জ্যামের কারণে কমে গেছে।
টমটমের মালিক সোহেল হোসাইন বলেন, ঘোড়ার গাড়ি ঢাকার ঐতিহ্য। ঘোড়ার সঠিক পরিচর্যা করা এখন কষ্টকর হচ্ছে। ভুসি, ঘাস অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর দাম বাড়ায় খরচ অনেক বেড়েছে। গাড়ির সংখ্যা বাড়ায় রাস্তায় জ্যাম বেড়েছে। কম আয়ের বিপরীতে বেশি হচ্ছে খরচ। এই পেশায় লেগে থাকতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে কোচোয়ান-হেল্পারসহ সংশ্লিষ্ট সবার। এসব কারণে বর্তমানে ২০-২৫টি ঘোড়ার গাড়ি সারাদিনে এই রুটে চলাচল করে।
ইব্রাহীম নামে এক যাত্রী বলেন, ঘোড়ার গাড়িতে এই প্রথম উঠেছি। তিন বন্ধু নারায়নগঞ্জ থেকে সদরঘাট ঘুরতে এসেছি। ঘোড়ার গাড়ি দেখেই উঠে পড়েছি। রূপকথার বইয়ে জেনেছি রাজা-বাদশার বাহন ঘোড়ার গাড়ি। প্রথম ঘোড়ার গাড়িতে উঠলাম, কী যে ভালো লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
এই গাড়ির যাত্রী কাজী হামিদ বলেন, ঢাকাইয়া না হলেও যখনই সদরঘাট আসি ঘোড়ার গাড়িতে করেই আসা হয়। বাসে এখান থেকে গুলিস্তান ভাড়া ১০ টাকা। ঘোড়ার গাড়িতে ৩০ টাকা ভাড়া হলেও এতে যাতায়াত করি। এটায় একটা ভালো লাগা কাজ করে। এ ঐতিহ্য টিকে থাকুক বহু বছর।