৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
প্রকৃতি-মানুষের অশ্রুগাথা

আলোকচিত্রে জলবায়ু সহনশীলতার সাহসী গল্প

- ছবি : নয়া দিগন্ত

আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। ঝরছে বৃষ্টি, বইছে ঝড়ো হাওয়া। সেই বারিধারার মাঝে উত্তাল নদীর ঢেউ ফেরিয়ে ছুটে চলেছে যাত্রীবাহী নৌকা। পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বৃষ্টি থেকে রক্ষা চেষ্টা উপকূলের মানুষের।

সম্পদ, স্বপ্ন সবকিছু তলিয়ে রয়েছে। বিস্তীর্ণ ডুবন্ত জনপদ। যতদূর চোখ যায় বসতভিটার কোনো অস্তিত্ব নেই। বিধ্বস্ত হয়েছে ঘর-বাড়ি, দুমড়েমুচড়ে আছে টিনের বেড়া। দেবে গেছে রাস্তা।

নদীর অতল গহ্বরে বিলীন হয়ে গেছে সব। ভাঙনের শেষ সীমানায় দাঁড়িয়ে এক নারীর মুখাবয়বে শূন্য দৃষ্টি।

উত্তরের জনপদ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় জলবায়ু সঙ্কটে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সংগ্রামী জীবনযাত্রা নিয়ে এমন অনেক আলোচিত্র শোভা পাচ্ছে রাজধানীর গুলশান-তেজগাঁও লিঙ্ক রোডের আলোকিতে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের বন্যা সহনশীলতা কর্মসূচির আওতায় জলবায়ু সঙ্কটের মধ্যে প্রতিরোধের গল্প তুলে ধরে 'সার্জিং হোপ: স্টোরিজ অব ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স' শীর্ষক তিন দিনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে গতকাল বুধবার। প্রদর্শনীর অংশীদার গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে)।

যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসা ভিটেমাটি হঠাৎ করেই নদীগর্ভে বিলীন হওয়া অথবা বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ে সব হারিয়ে উদ্বাস্তু হওয়া মানুষগুলোর জীবনের কথা ফুটে উঠেছে এই প্রদর্শনীতে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাণ-প্রকৃতিতে পরিবর্তন, মানুষের জীবনযাপন, পরিবেশ-জীববৈচিত্র্যে প্রভাব ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ গ্রামীণ জীবনের নাভিশ্বাস দশা শোভা পাচ্ছে দেয়ালজুড়ে। ছবিতে উঠে এসেছে অপরিকল্পিত নগরায়ণের চিত্র। বঞ্চনায় সামাজিক বৈষম্যের প্রতিদিনের কোনো আটপৌরে দৃশ্যতো আছেই। আবার গা শিউরে ওঠা দৃশ্যের মধ্যেও আছে জীবনের জয়গানের অনন্য কোনো বার্তা।

প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন সুইডেন দূতাবাসের প্রথম সচিব নায়োকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রোম, আয়ারল্যান্ডের সম্মানিত কনসাল মাসুদ জামিল খান এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত ড. ইফতেখার চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দূতাবাস, দাতা সংস্থা, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, শিক্ষাবিদরা অংশ নেন। দর্শনার্থীরা জলবায়ু সংকটের মোকাবিলায় সাহসী মানুষদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম প্রত্যক্ষ করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জলবায়ু সঙ্কটের অগ্রভাগে থাকা জনগোষ্ঠীর জীবনকে দর্শনার্থীদের আরও কাছাকাছি নিয়ে যেতে একটি ফটোবুক উন্মোচন করা হয়। বিশিষ্ট আলোকচিত্রী সৈকত মজুমদার ছবিগুলো তোলেন।

কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মনিশ কুমার আগরওয়াল উদ্যোগটির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এসব ছবি শুধুমাত্র ছবি নয়, এগুলো আশা, সহনশীলতা এবং পরিবর্তনের শক্তিশালী গল্প। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা মানুষের অবিরাম সংগ্রাম এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তাদের অসীম সাহসকে তুলে ধরতে চেয়েছি। জুরিখ ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স অ্যালায়েন্সের অংশ হিসেবে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের বন্যা সহনশীলতা কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এই কর্মসূচি বন্যাপ্রবণ এলাকার সংকটাপন্ন মানুষদের দুর্যোগের বিরুদ্ধে প্রস্তুত হওয়া এবং ক্ষতি কাটিয়ে উঠার সক্ষমতা তৈরি করছে। প্রদর্শনীটি শেষ হবে আগামীকাল শুক্রবার। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement