০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

শ্বশুর বাড়ি ঠাঁই হলো না শহীদ নূর আলমের স্ত্রী খাদিজার

- ছবি : বাসস

নূর আলম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে শহীদ হয়েছেন। ডান চোখে গুলি লেগেছিল তার। এদিকে বিয়ের প্রথম বছর না পেরুতেই খাদিজা হারালেন তার স্বামীকে। এমনকি শ্বশুর বাড়িতেও ঠাঁই হলো না তার। আর নবজাতক সন্তান বঞ্চিত হলো বাবার প্রথম স্নেহের পরশ থেকে।

চিকিৎসক জানিয়েছেন, নবজাতক আব্দুল খালেক হৃদরোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা। স্বামী হারানোর শোক আর সন্তানের অসুস্থতায় দিশেহারা এখন খাদিজা খাতুন (১৯)।

শহীদ নূর আলম (২২) কুড়িগ্রাম সদরের ভোগঙাঙ্গা ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক মো: আমীর হোসেন ও পোশাকশ্রমিক নূর বানু বেগম দম্পত্তির দুই ছেলের মধ্যে বড়। ছোট ছেলে নূর জামাল (১৪) পেশায় রাজমিস্ত্রী। নূর আলম স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন ঢাকার গাজীপুর চৌরাস্তা সংলগ্ন তেলিপাড়া গ্রামে।

গত ২০ জুলাই বাসা থেকে বের হয়ে কাজে যাওয়ার পথে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মিছিলের মধ্যে পড়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।

নূর আলমের স্ত্রী মোছা: খাদিজা খাতুন বলেন, ‘২০ জুলাই সকাল বেলা উঠে আমার স্বামী কাজের উদ্দেশ্যে বাহিরে যান। দুপুর ১টার দিকে লোকমুখে শুনি আমার স্বামী গুলিতে মারা গেছে। দৌড়ে গিয়ে দেখি আমার স্বামীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে হাসপাতালে যাই। হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে ওই দিন রাতেই স্বামীর লাশ নিয়ে গ্রামে চলে আসি।’

মোছা: খাদিজা খাতুন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মুন্সীপাড়ার কাচ্চির গ্রামের বাসিন্দা মো: নন্দু মিয়া (৬৫) ও সামিনা বেগম (৫৮) দম্পতির তৃতীয় সন্তান।

২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবরে নূর আলম ও খাদিজার বিয়ে হয়। তারপর থেকেই তারা ঢাকা-গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকার তেলিপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন। নূর আলমের মৃত্যুর দুই মাস পর ২২ সেপ্টেম্বর এই দম্পতির প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ ম্লান হয়ে গেছে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে। স্বামীর মৃত্যু শোকে দিশেহারা অন্তঃসত্ত্বা খাদিজা খাতুনের জায়গা হয়নি শ্বশুর বাড়িতেও।

নূর আলমের মৃত্যুর দেড় মাস পরে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়ই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন শ্বশুর-শাশুড়ি। হত দরিদ্র বৃদ্ধ বাবার একমাত্র ছেলে ঈমান আলী (১৪) নবম শ্রেণীর ছাত্র। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে। সেখানে নবজাতকসহ বিধবা মেয়ের বাড়ি ফিরে আসায় গভীর সঙ্কটে পড়েছেন তারা।

খাদিজা জানান, মামার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে বাবার বাড়িতে কোনোরকমে দিনাতিপাত করছেন। কোলের শিশুটিও অসুস্থ। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আল আমিন বলেছেন, শিশুটি হৃদরোগে আক্রান্ত।

দিশেহারা খাদিজা অভিযোগ করেন, নূর আলমের মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন থেকে যেসব অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে সবই নিয়েছে নূর আলমের বাবা মো: আমীর হোসেন। উপরন্তু এই টাকার ভাগ খাদিজা খাতুনকে দিতে হবে বলে তাকে শ্বশুর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

শোক ও উৎকণ্ঠায় দিশেহারা খাদিজা বলেন, স্বামী হারানোর শোক যে কী যার স্বামী হারিয়েছে সেই জানে। এত কিছুর মাঝে আমি আরো বড় আঘাত পেয়েছি আমার স্বামী মারা যাওয়ার ৪৪ দিনের মাথায় আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে বিনা কারণে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।

গর্ভাবস্থায় আমার শ্বশুর রাতের বেলা আমাকে হাত ধরে বের করে দেন। আমি পাশের বাড়িতে রাতে থেকে আমার বাবাকে ফোন দেই। পরের দিন বাবা গিয়ে আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর ছেলের জন্ম হয়েছে। তার বয়স ১৫ দিন হতে চললো। তবু ওরা আমার সন্তানের খোঁজ নিতে আসে নাই। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার শ্বশুরের কাছে আর্থিক সহযোগিতা আসছে। ওই সব সহযোগিতার টাকার খবর যাতে আমি না শুনি এ কারণে আমার শ্বশুর পরিকল্পিতভাবে আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে, বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। তার ওপর শিশু সন্তানের অসুস্থতায় কোথায় যাবো, কী করবো ভেবে পাই না। আমার ভবিষ্যৎ এখন নূর আলমের রেখে যাওয়া আমানত সন্তান আব্দুল খালেক। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়েও খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। আমি আমার ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। আমার সন্তানের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা ও সাহায্য প্রার্থনা করছি।’

নূর আলমের বাবা মো: আমীর হোসেন বলেন, ‘আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে নূর আলমকে হারিয়ে আমরা ভালো নেই। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা আসছে। এ পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা ৫০ হাজার টাকা, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ২ লাখ ৫ হাজার টাকা প্রদান করেছেন।’

এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে আশ্বাস ও সহযোগিতা পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

নূর আলমের স্ত্রী খাদিজা খাতুনের অভিযোগের ভিত্তিতে আমীর হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে পুনরায় যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার নাতি ও ছেলের বউ খাদিজা বর্তমানে ওর বাবার বাড়ি আছে। তার সাথে আমারা কোনো ঝগড়া বিবাদ করি নাই। সে নিজ ইচ্ছেয় ওর বাবার বাড়ি চলে গেছে। এলাকায় এসে খোঁজ নিতে পারেন।’

এ বিষয়ে ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: সাইদুর রহমান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মো: নূর আলম শহীদ হন। আমি তার পরিবারের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি। নূর আলমের স্ত্রীর সাথে তার মা-বাবার কোনো ঝগড়া বিবাদ হয়েছে কি না আমি জানি না। সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement
সেনাবাহিনীতে সৎ অফিসাররাই উচ্চতর পদোন্নতির দাবিদার : প্রধান উপদেষ্টা যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরাইলের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর বন্যার্তদের মাঝে ইউএই রেড ক্রিসেন্ট ও ইউএই এইডের ত্রাণ বিতরণ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযান গত ৫-৬ বছরে উপমহাদেশে অনেক বেশি আঞ্চলিক সংহতি দেখেছি : ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য টুকু বিদ্যুৎ বিভাগ ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব ববিতে ভর্তির চূড়ান্ত কার্যক্রম শুরু, ক্লাস ২১ অক্টোবর ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু বেলিজের ব্যক্তিগত দ্বীপে সাড়ে ৪ মিলিয়নে বাড়ি! ভারতের বিপক্ষে কেমন হতে পারে বাংলাদেশ একাদশ

সকল