চলতি বছর কার হাতে উঠবে শান্তিতে নোবেল?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:৪৪
শুরু হচ্ছে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা। কয়েক বছর ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, এক বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধ এবং সুদানে সঙ্ঘাতে লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুতির মাঝে চলতি বছর কার হাতে উঠবে নোবেল শান্তি পুরস্কার সেদিকে দৃষ্টি সবার।
আর কয়েক দিন পরেই ঘোষণা করা হবে ২০২৪ সালের নোবেলজয়ীদের নাম। বিশ্বের সবচেযে নন্দিত এই পুরস্কার কারা পাচ্ছেন সেদিকে সারাবিশ্বের মানুষের নজর থাকে৷ সবচেয়ে বেশি আগ্রহ থাকে শান্তিতে নোবলে নিয়ে।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির তালিকায় এর মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, চলতি বছরের তালিকায় সম্ভাব্য নামের মধ্যে সংস্থা হিসেবে রয়েছে ইউনাইটেড ন্যাশনস প্যালেস্টিনিয়ান রিফ্যুজি অ্যাজেন্সি। আছে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের নামও। আর ব্যক্তি হিসেবে যার নামটি বেশি শোনা যাচ্ছে তিনি হলেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
সংশ্লিষ্টদের বরাতে রয়টার্স অবশ্য একটি ভিন্ন কথাও বলছে। চলতি বছর নাকি বিস্ময়করভাবে শান্তিতে নোবেলজয়ী হিসেবে কারো নাম নাও ঘোষণা হতে পারে।
এদিকে রাশিয়ার আলেক্সি নাভালনির নাম উচ্চারিত হচ্ছে কারো কারো মুখে। কিন্তু সেটি সম্ভব নয়, কারণ কাউকে মরণোত্তর পুরস্কার দেয়ার রেওয়াজ নেই নোবেল কমিটির। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদোমির জেলেনস্কিকে নিয়ে আলোচনা থাকলেও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ।
তৃতীয় বছরে পড়া ইউক্রেনের যুদ্ধ কিংবা সুদানে এক কোটি মানুষের বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে নোবেল কমিটি এ বছর এমন কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে পারে যিনি বা যেই সংগঠন বিশ্বে মানবিক সঙ্কট কাটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এসব বিবেচনায় ইউনাইটেড ন্যাশনস প্যালেস্টিনিয়ান রিফ্যুজি অ্যাজেন্সি হতে পারে চলতি বছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের দাবিদার। গাজা যুদ্ধে সৃষ্ট মানবিক সঙ্কট কাটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে সংস্থাটি, এমনটাই মনে করেন অসলোর পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হেনরিক উরডাল।
তবে এই সংগঠনটিকে পুরস্কার দিলে বিষয়টি বিতর্কের জন্ম দিতে পারে বলে মনে করেন তিনি। ইসরাইলে ৭ অক্টোবরের হামলায় সংস্থাটির কেউ কেউ জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।
এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু দেশ সংগঠনটিতে অর্থায়ন বন্ধ করেছে। আগস্টে জাতিসঙ্ঘের এক অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্থাটির নয়জন সদস্য ওই হামলায় জড়িত থাকতে পারে।
নোবেল কমিটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৈরি হওয়া বিশ্ব্যব্যবস্থায় ওই সময়ে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক সংগঠন জাতিসঙ্ঘকে বিবেচনা করতে পারে। সেক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হতে পারেন চলতি বছরের শান্তিতে নোবেল জয়ী। একই সাথে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসও যৌথভাবে এই তালিকায় যুক্ত হতে পারে বলে মনে করেন শান্তি নোবেল বিষয়ের ইতাহাস বিশারদ আসলে স্ভিন।
রয়টার্সকে এই ইতিহাসবিদ বলেন, ‘গুতেরেস হলেন জাতিসঙ্ঘের সর্বোচ্চ প্রতীক। এবং ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের মূল দায়িত্ব হলো বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করা।’
এরইমধ্যে রাশিয়ায় হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস। তাছাড়া গাজায় যেন কোনোভাবেই জেনোসাইডের মতো ঘটনা না ঘটে সে বিষয়েও ইসরাইলকে সতর্ক করেছে।
বলা হচ্ছে, নোবেল কমিটি এমন সিদ্ধান্তও নিতে পারে যে চলতি বছর কেউই এই পুরস্কার পাবে না। নোবেল কমিটি যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সেটি হবে পাঁচ দশক পর এমন কোনো ঘটনা। সর্বশেষ ১৯৭২ সালে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নোবেল কমিটি।
স্টেকহোমে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটির প্রধান ড্যান স্মিথ বলেন, ‘চলতি বছর নোবেল পিস প্রাইজ কমিটি শান্তিতে পুরস্কার দেয়া বন্ধ রাখতে পারে। বরং তারা বলতে পারে যে এটি (পৃথিবী) একটি যুদ্ধে লিপ্ত গ্রহ।’
চলতি বছর শান্তি পুরস্কারের জন্য ২৮৬ জন ব্যক্তি ও সংস্থার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে জেলে বন্দী ইরানের নারী অধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মাদি নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
সূত্র : ডয়চে ভেলে