০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা নেতানিয়াহুর

নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের দুই কক্ষের যৌথ সভায় ভাষণ দেন - ছবি : সংগৃহীত

মার্কিন কংগ্রেসের দুই কক্ষের যৌথ সভায় বুধবার এক জোরাল ভাষণে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধকে সমর্থন এবং আমেরিকান বিক্ষোভকারীদের নিন্দা করেছেন।

তার ভাষণ ডেমোক্র্যাট দলের অনেক শীর্ষ আইন প্রণেতা বর্জন করেন এবং হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ক্যাপিটল ভবনের চার পাশে সমবেত হয়ে যুদ্ধ এবং তার সৃষ্ট মানবিক সঙ্কটের নিন্দা করেন।

নেতানিয়াহু তার ভাষণে 'সম্পূর্ণ বিজয়' না অর্জন করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। যারা আশা করছিলেন যে ইসরাইলি নেতার যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় যুদ্ধ বিরতি এবং পণবন্দীদের মুক্তি সংক্রান্ত আলোচনায় অগ্রগতি হবে, তারা নেতানিয়াহুর ভাষণে হতাশ হয়েছেন।

প্রায় এক ঘণ্টা-ব্যাপী ভাষণের মাঝে আইনপ্রণেতারা যেমন হাততালিতে ফেটে পড়েছেন, তেমনি অনেক শীর্ষ ডেমোক্র্যাটিক নেতা চুপ করে বসে ছিলেন।

নেতানিয়াহু বলেন, হামাস এবং অন্যান্য ইরান-সমর্থিত গ্রুপের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের অভিন্ন স্বার্থ জড়িত আছে।

'আমেরিকা এবং ইসরাইলকে এক সাথে থাকতে হবে। আমরা যখন এক সাথে থাকি, তখন খুব সহজ একটা জিনিস ঘটেঃ আমরা জিতি, তারা হারে,' নেতানিয়াহু বলেন। হামাসের হাতে পণবন্দী ইসরাইলিদের সাথে সংহতি প্রকাশের জন্য তিনি তার জ্যাকেটে একটি হলুদ পিন পরেছিলেন।

বিক্ষোভ নিয়ে উপহাস

কিন্তু ইসরাইলি নেতা খুব শিগগিরই তার স্বরভঙ্গি বদলে ফেলেন। কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলের বাইরে চলমান বিক্ষোভের উদ্দেশ্যে হাত নাড়িয়ে তিনি যারা যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ক্যাম্পাসে এবং অন্যত্র বিক্ষোভ করছে, তাদের লক্ষ্য করে উপহাস করেন। তিনি তাদের ইসরাইলের শত্রুদের পক্ষের 'বোকা' বলে অভিহিত করেন।

হামাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া প্রাক্তন পণবন্দী এবং তাদের পরিবার হাউস চেম্বারে ভাষণ শুনছিলেন। নিরাপত্তা কর্মীরা পাবলিক গ্যালারি থেকে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে সরিয়ে দেয়, যারা দাঁড়িয়ে যুদ্ধ থামিয়ে পণবন্দীদের মুক্তির দাবি লেখা টি-শার্ট প্রদর্শন করছিলেন।

হাউস অফ রেপ্রেসেন্টেটিভস-এর একজন সদস্য, রাশিদা তলাইব যিনি কংগ্রেসের একমাত্র ফিলিস্তিনি-আমেরিকান, আরেক ধাপ এগিয়ে একটি সাইন তুলে ধরেন, যার একদিকে লেখা ছিল 'যুদ্ধাপরাধী' আর অন্য দিকে 'গণহত্যার অপরাধে অপরাধী।'

কংগ্রেসে নেতানিয়াহুর সমালোচকদের মধ্যে তলাইব অন্যতম। গত বছর গাজা যুদ্ধ নিয়ে মন্তব্যর কারণে তার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাস করা হয়। গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

অধিকৃত পশ্চিম তীরে তলাইবের আত্মীয়-স্বজন আছে এবং তিনি মিশিগানের যে এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন সেখানে অনেক ফিলিস্তিনি-আমেরিকান বাস করেন।

যুদ্ধ বন্ধ এবং বাকি জীবিত পণবন্দীদের মুক্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্র আরব দেশগুলো যে চেষ্টা করছে, নেতানিয়াহু তার কোনো উল্লেখ করেননি। গত বছর ৭ অক্টোবর হামাস দক্ষিণ ইসরাইলে হামলা চালিয়ে পণবন্দীদের ধরে নিয়ে যায়, যার ফলে যুদ্ধের শুরু হয়।

নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন যে আমেরিকায় যুদ্ধ-বিরোধী প্রতিবাদকারীরা উগ্রবাদীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, যে উগ্রবাদীরা তার ভাষায় ৭ অক্টোবরের হামলার সময় শিশুদের হত্যা করে।

'যে বিক্ষোভকারীরা তাদের সমর্থন করে, তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত,' তিনি বলেন।

রিপাবলিকান সমর্থন

নেতানিয়াহু, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়ে যে তিনি প্রায়ই রিপাবলিকান এবং রক্ষণশীলদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নাক গলান, তার বক্তব্য শুরু করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে প্রশংসা করে। কিন্তু তিনি এরপরই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর 'ইসরাইলের জন্য যতকিছু করার জন্য' প্রশংসার বন্যা বইয়ে দেন।

নেতানিয়াহুর বৃহস্পতিবার বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের সাথে বৈঠক করার কথা আছে। তারপর শুক্রবার ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে ট্রাম্পের সাথে দেখা করবেন।

মেরিল্যান্ড থেকে ডেমোক্র্যাট হাউস সদস্য জেমি রাস্কিন বলেন নেতানিয়াহুর ভাষণ ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের জন্য লেখা হয়েছিল।

'আমরা পণবন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধ বিরতি নিয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কোনো কথা শুনলাম না। আমরা শান্তি নিয়ে কিছু শুনলাম না। আমরা দুই রাষ্ট্র সমাধান, যেটা দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি, সেটা নিয়ে কিছু শুনলাম না,' তিনি বলেন।

ইসরাইলি সময় সন্ধ্যায় দেয়া ভাষণে নেতানিয়াহু নিজ দেশের দর্শকদের কথাও মাথায় রেখেছিলেন। নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা যুদ্ধের আগের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে। তিনি নিজেকে একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন, যাকে ইসরাইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সম্মান করে এবং ওয়াশিংটনের ক্ষমতার করিডোরে যিনি স্বাগত।

সেই কাজ এখন অনেক জটিল হয়ে গেছে, কারণ ইসরাইল এবং গাজা যুদ্ধ নিয়ে আমেরিকানরা এখন ক্রমশ বিভক্ত। গাজা যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় ইস্যু হিসেবে উঠে এসেছে।

কংগ্রেসের অনেকে তার বক্তব্য হাততালি দিয়ে, এবং হর্ষধ্বনি করে সমর্থন করে। কিন্তু শীর্ষ স্থানীয় ডেমোক্র্যাটদের অনেকে চুপ করে থাকেন এবং দাঁড়াতে অস্বীকার করেন।

বুধবার কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল স্টিলের তৈরি উঁচু বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। ক্যাপিটলের কাছে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করলে পুলিশ পেপার স্প্রে ব্যবহার করে। বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুকে 'যুদ্ধাপরাধী' বলে অভিহিত করে এবং গাজায় যুদ্ধ বিরতির আহবান জানায়।

ডেমোক্র্যাট সমর্থনে ভাটা

ক্যাপিটলের ভেতরে হাউস স্পিকার মাইক জনসন এবং রিপাবলিকান দলের অন্যান্য আইন প্রণেতা নেতানিয়াহুকে স্বাগত জানান, যারা হাউস চেম্বারে নেতানিয়াহুর ভাষণের আয়োজন করেন।

'আজকে এবং প্রতিদিন আমেরিকার উচিত ইসরায়েলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো,' জনসন বলেন। নেতানিয়াহুকে কংগ্রেসের দু’দল একযোগে দাঁড়িয়ে তুমুল হাততালি দিয়ে স্বাগত জানায়।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু নেতানিয়াহুর সফরের সময় সাধারণত যে উষ্ণতা থাকে, এবার রাজনৈতিক ঘটনাবলীর কারণে অনেক কম, যার মধ্যে রয়েছে ট্রাম্পকে হত্যার প্রচেষ্টা এবং দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সরে দাঁড়াবার সিদ্ধান্ত।

অনেক ডেমোক্র্যাট ইসরায়েলকে সমর্থন করে, কিন্তু নেতানিয়াহুর সমালোচক। তারা নেতানিয়াহুর ভাষণকে রিপাবলিকান দলের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে, যেখানে তারা নিজদের ইসরায়েলের সব চেয়ে অনুগত সমর্থক হিসেবে উপস্থাপন করছে।

অনুপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস, যিনি সিনেটেরও সভাপতি। হ্যারিস বলেন যে তাকে পূর্ব-নির্ধারিত একটি সভায় যেতে হয়েছে। রিপাবলিকান দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সেনেটর জে ডি ভ্যান্সও নির্বাচনী প্রচারণার ব্যস্ততার কথা বলে কংগ্রেসের সভায় আসেননি।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা

 


আরো সংবাদ



premium cement
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন : তাজুল ইসলাম চিফ প্রসিকিউটর আবুধাবির কারাগার থেকে দেশে ফিরেছেন ১৪ বীর কোনাবাড়ীতে কলেজছাত্রকে গুলি করে হত্যা : কনস্টেবল গ্রেফতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তগুলো যৌক্তিক : ফখরুল ‘একটি চক্র জামায়াত আমিরের বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে’ অস্ত্র জমা দেয়নি শামীম ওসমান ও গাজী পরিবার এবি পার্টির উপদেষ্টার পদ ছাড়লেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া নিয়ে বিতর্কে মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ আশুলিয়ায় শ্রমিক দলের সমাবেশে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৫ রূপগঞ্জে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা না দেয়া ডাক্তারদের সনদ বাতিলের দাবি ড্যাবের

সকল