১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

কে এই হামাস নেতা মোহাম্মদ দেইফ, তার মৃত্যুতে কিভাবে বদলাবে গাজা যুদ্ধের সমীকরণ

হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ - ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফকে লক্ষ্যবস্তু করার দাবি করে শনিবার খান ইউনিসে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯০ জন নিহত এবং অন্তত ৩০০ জন আহত হয়েছে বল জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

নিহতদের মধ্যে মোহাম্মদ দেইফ ছিলেন কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবি, তিনি ও হামাসের দ্বিতীয় কমান্ডার রাফা সালামাকে লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়।

এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেছেন, শুধু এই দুজন নয়, হামাসের সব নেতাকে হত্যা করাই ইসরাইলের লক্ষ্য।

কে এই মোহাম্মদ দেইফ
মোহাম্মদ দেইফ ১৯৯০-এর দশকে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডসের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এই ইউনিটটির নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও তাকে দায়ী করে আসছে ইসরাইল।

বেশ কয়েক বছর ধরে ইসরাইলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষে রয়েছেন মোহাম্মদ দেইফ। অতীতে ইসরাইলের একাধিক হত্যাচেষ্টা থেকে রক্ষা পেয়েছেন তিনি। এমনকি ইসরাইলের হামলায় তিনি বর্তমানে পঙ্গু বলে ধারণা করা হয়।

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন হামাসের এই শীর্ষস্থানীয় নেতা। এমনকি ইন্টারনেটেও তার খুব বেশি ছবি নেই।

৭ অক্টোবর সকালে ‘আল আকসা বন্যা’ নামের ওই অভিযানের ঘোষণা দিয়ে দেইফের একটি বিরল ভয়েস রেকর্ড প্রকাশ করে হামাস।

সিনওয়ারের মতো তিনিও ১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে হামাস গঠনের পরপরই এতে যোগ দেন বলে ধারণা করা হয়।

১৯৮৯ সালে ফিলিস্তিনের প্রথম ইন্তিফাদা বা গণজাগরণের সময় ইসরাইলি বাহিনী দেইফকে গ্রেফতার করে। অবশ্য পরে তাকে ছেড়েও দেয়।

২০০২ সালে কাসসাম ব্রিগেডের তৎকালীন প্রধান ইসরাইলি হামলায় নিহত হলে তার স্থলাভিষিক্ত হন দেইফ। তিনি গাজাজুড়ে মাটির নিচ দিয়ে অসংখ্য সুড়ঙ্গ নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নায়ক ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া আত্মঘাতী বোমা হামলাসহ বহু ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিককে হত্যার পরিকল্পনার জন্য তাকে দায়ী করে ইসরাইল।

ছাড়া পাওয়ার পর থেকে দেইফ একেবারে পর্দার আড়ালে চলে গেছেন। তার চেহারা, এমনকি তিনি সুস্থ আছেন কি না, তাও ফিলিস্তিনিদের বেশির ভাগের কাছেই অজানা।

কয়েকটি মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, অতীতে ইসরাইলের হামলায় আহত হওয়ার পর থেকে তিনি হুইল চেয়ার ব্যবহার করেন। আবার অনেকে বলেছে, তিনি হাঁটতে পারেন।

আরবিতে তার নাম ‘দেইফ’ এর অর্থ ‘অতিথি’, যা তার ঘন ঘন স্থান পরিবর্তনের সাথে সার্থক।

মে মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি করিম খান ঘোষণা করেন, তিনি দেইফ, সিনওয়ার ও হামাসের নির্বাসিত সর্বোচ্চ নেতা ইসমাইল হানিয়ার গ্রেফতার চান। একইসাথে সেসময় নেতানিয়াহু ও ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তেরও গ্রেফতার চান তিনি।

দেইফের ওপর হামলা যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কী প্রভাব ফেলবে
দেইফকে হত্যা করতে পারলে নিঃসন্দেহে ইসরাইলের জন্য তা সর্বোচ্চ বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হবে। অন্যদিকে, হামাসের জন্য তা হবে ব্যাপক মানসিক পরাজয়।

শনিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামাসের সব নেতাকে হত্যার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। নেতাদের হত্যা করে গোষ্ঠীটির ওপর চাপ বাড়ানো হলে তা যুদ্ধবিরতিতে সহায়ক হবে।’

তাই দেইফকে হত্যা করতে পারলে নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি আলোচনায় আরো ইতিবাচক হতে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

নেতানিয়াহু এর আগেই বলেছেন, ইসরাইল যুদ্ধে তার লক্ষ্য (হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা) অর্জন না করা পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ শেষ করবেন না।

তবে, দেইফ হত্যাকাণ্ড যুদ্ধবিরতি আলোচনা থেকে হামাসকে সরিয়ে দিতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ এই নেতার মৃত্যু তাদের যুদ্ধবিরতির আলোচনার পরিবর্তে প্রতিহিংসার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

এ বিষয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষক খালেদ আল-গিন্দি বলেন, ‘ইসরাইলিদের জন্য এটি তাদের বিজয়ের আখ্যান হতে পারে, যা তারা গত নয় মাস ধরে মরিয়া হয়ে তাড়া করে চলেছে।’

তবে তা হামাসের অবস্থানকে শক্ত করবে বলে মনে করেন আল-গিন্দি।

‘এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেয়া হামাসের জন্য আত্মসমর্পণেরই সামিল বলে বিবেচিত হবে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে ঢুকে হামাসের হামলায় দেশটির অন্তত ১ হাজার ২০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। সে সময় ২৫০ ইসরাইলিকে পণবন্দী করে নিয়ে যায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন- হামাস। ওই ঘটনার পর থেকে গাজায় অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী।

ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ৩৮ হাজার ৩০০’র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সূত্র : এপি/ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement

সকল