১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বেনি গ্যাঞ্জের পদত্যাগকে ‘ভুল’ বলছে ইসরাইল

বেনি গ্যাঞ্জের পদত্যাগকে ‘ভুল’ বলছে ইসরাইল - সংগৃহীত

ইসরাইলের যুদ্ধ-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য মধ্যপন্থী রাজনীতিবিদ বেনি গ্যাঞ্জের পদত্যাগকে ‘ভুল’ বলেছেন ইয়োভ গ্যালান্ট।

মঙ্গলবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন যে- তিনি বিশ্বাস করেন বিরোধী নেতা বেনি গ্যাঞ্জ ইসরাইলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা এবং জরুরি সরকার থেকে পদত্যাগ করে ‘ভুল’ করেছেন।

সোমবার গভীর রাতে একটি অতি-অর্থোডক্স নিয়োগ বিলের উপর ভোটের পরে গ্যালান্ট নেসেটের (ইসরাইলের পার্লামেন্ট) বাইরে জাতীয় ঐক্যের নেতা গ্যাঞ্জ সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন।

মন্ত্রীর বিদায়ের পর চাপের মুখে নেতানিয়াহু
যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার একমাত্র মধ্যপন্থী সদস্য পদত্যাগ করায় ইসরাইলের সরকার আরো চাপের মুখে পড়তে পারে। গাজায় সামরিক অভিযান ও হিজবুল্লাহর সাথে সংঘাতের মাঝে নেতানিয়াহু নতুন সমস্যার মুখে পড়লেন।

গাজায় চলমান সামরিক অভিযানকে কেন্দ্র করে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশে-বিদেশে প্রবল চাপের মুখে রয়েছেন। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে তার সরকারের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে।

২০২২ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে বিরোধী নেতা বেনি গ্যাঞ্জ যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থান অনেকটা জোরালো করেছিলেন। কিন্তু রোববার তিনি পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পদত্যগ করলেন।

উগ্র দক্ষিণপন্থী জোট সরকারের একমাত্র মধ্যপন্থী দলের প্রস্থান একাধিক সঙ্কটের সময়ে ইসরাইলে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এখনই সরকার পতনের আশঙ্কা না থাকলেও নেতানিয়াহুকে এবার জোটের কট্টরপন্থী সদস্যদের উপর আরো বেশি নির্ভর করতে হবে। ফলে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেশ আমেরিকার সাথে মনোমালিন্য আরো তীব্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নেতানিয়াহু নিজের সরকারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে মার্কিন প্রশাসনের অনেক চাপ উপেক্ষা করার চেষ্টা করে চলেছেন।

গাজায় বিতর্কিত সামরিক অভিযানের পাশাপাশি উত্তরে লেবানন সীমান্তের অপর প্রান্তে হিজবুল্লাহর সাথে আরো তীব্র সংঘাতের আশঙ্কা ইসরাইলে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। গাজায় এক সেনা অভিযানে হামাসের কাছ থেকে চারজন পণবন্দীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হলেও হামাসের কাছে এখনো অনেক পণবন্দী থেকে যাওয়ায় ইসরাইলে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে।

দেশের এমন সঙ্কটের সময় মন্ত্রিসভা থেকে বিদায়ের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডার ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গানটস।

ইসরাইলের একাধিক সামরিক কর্মকর্তার মতো তিনিও গাজায় সামরিক অভিযানের সমাপ্তির পর কোনো রাজনৈতিক সমাধান সূত্রের পরিকল্পনার অভাবের সমালোচনা করে আসছিলেন। ৮ জুনের মধ্যে তিনি নেতানিয়াহুর কাছে এক রাজনৈতিক সমাধান সূত্রের খসড়া দাবি করেছিলেন।

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে গ্যাঞ্জ বলেন, ‘নেতানিয়াহু আমাদের প্রকৃত জয়ের দিকে এগোনোর পথে বাধা সৃষ্টি করছেন। তাই ভারাক্রান্ত মনে আমাদের মন্ত্রিসভা ত্যাগ করতে হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, নেতানিয়াহু সরকারের পতন ঘটলে গ্যাঞ্জই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন বলে ইসরাইলের রাজনৈতিক মহলে মনে করা হচ্ছে। তিনি নেতানিয়াহুর উদ্দেশে চলতি বছরেই ইসরাইলে সাধারণ নির্বাচনের জন্য রাজি হওয়ার ডাক দিয়েছেন।

ইসরাইলে এমন রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেই সোমবার সে দেশে আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। তিনি গাজায় অস্ত্রবিরতির পরিকল্পনার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে চলেছেন।

নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক সঙ্কট ও হামাসের নীরবতার কারণে ওই পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে।
সূত্র : আল-জাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement