মার্কিন বিমানবাহী রণতরীতে আবারো হাউছিদের হামলার দাবি

ইয়েমেনের হাউছি যোদ্ধারা মার্কিন বিমানবাহী রণতরীতে হামলাসহ ছয়টি অপরাশেন সম্পন্ন করার দাবি করেছে। লোহিত সাগর, ভারত মহাসাগরে এসব হামলা চালানো হয় বলে জানানো হয়েছে।

ইরান-সমর্থিত হাউছিদের সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেন, তারা একটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরী, একটি মার্কিন ডেস্ট্রোয়ার এবং তিনটি জাহাজকে টার্গেট করেছে।

ইয়েমেনের বেশিভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী হাউছি মিলিশিয়ারা গাজায় ইসরাইলি হামলার জবাবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এসব হামলা চালাচ্ছে।

সারি শনিবার বলেন, তারা উত্তর লোহিত সাগরে আমেরিকান বিমানবাহী রণতরী আইসেনহাওয়ারের ওপর হামলা ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন দিয়ে চালিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ওই রণতরীটির ওপর এটি ছিল দ্বিতীয় হামলা।

তিনি আরো বলেন, তাদের অন্যান্য অভিযানের মধ্যে ছিল একটি মার্কিন ডেস্ট্রোয়ার এবঙ আনলিয়ানি জাহাজের (তেলবাহী ট্যাঙ্কার) ওপর। এছাড়া মাইনা জাহাজের ওপর লোহিত সাগর এবং আরব সাগরে দুবার হামলা করা হয়।
তিনি বলেন, এছাড়া আলোরাইক জাহাজের ওপর হামলা করা হয়। এই হামলা চালানো হয় ভারত মহাসাগরে।

বাইডেনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ‘ইতিবাচক’ : হামাস
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় অতি ঘনবসতিপূর্ণ রাফা শহরে অভিযান না চালাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই অবস্থায় অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে গতকাল শুক্রবার ইসরাইলের ওই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ঘোষণা করলেন বাইডেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে ‘ইতিবাচক’ বিবেচনা করছে হামাস।
আজ শনিবার এএফপি জানায়, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নিতে হামাসের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের আহ্বান জানানোর পর শুক্রবার সন্ধ্যায় হামাস একটি বিবৃতি দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা, গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার এবং এই উপত্যকার পুনর্গঠন ও বন্দী বিনিময়’ নিয়ে বাইডেনের বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে দেখছে তারা।
ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের কথা ঘোষণাকালে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রায় আট মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি টানার আহ্বান জানান।

তবে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বাইডেনের শান্তি আলোচনা শুরুর আহ্বানে নেতিবাচক মনোভাব দেখান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, হামাসের গাজা শাসন করা ও ইসরাইলের জন্য হুমকি হয়ে ওঠার ক্ষমতা নিঃশেষ না করা পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহরে অভিযান না চালাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এই অবস্থায় অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে গতকাল ইসরায়েলের ওই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ঘোষণা করলেন বাইডেন।

স্থানীয় সময় শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এই আহ্বান জানান বাইডেন।
তিনি বলেছেন, ‘এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় এসেছে’।

তিন পর্যায়ের নতুন এই প্রস্তাবে গাজায় পুরোপুরি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের সুযোগ রয়েছে জানিয়ে হামাসের উদ্দেশ্যে বাইডেন বলেন, ‘হামাস সবসময় বলে থাকে, তারা যুদ্ধবিরতি চায়। এখন হামাসের সামনে প্রমাণ করার সুযোগ এসেছে তারা আসলেই এটা চায় কি না।’
বিবিসি জানায়, বাইডেনের প্রস্তাবটি তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার কথা বলা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে। এই সময়ে গাজার সব জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের তুলে নেওয়া হবে।

যুদ্ধবিরতির সময় হামাস ‘নির্দিষ্ট সংখ্যক’ পণবন্দীকে মুক্তি দেবে। তাদের মধ্যে নারী, বয়স্ক ব্যক্তি এবং আহত জিম্মিরা থাকবেন। এর বিনিময়ে ইসরায়েলে বন্দি থাকা কয়েকশ’ মানুষকে মুক্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া হামাসের হাতে পণবন্দী অবস্থায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে হবে।

গাজার সব এলাকায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িঘরে ফিরতে সুযোগ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাড়ানো হবে। গাজায় প্রতিদিন মানবিক সহায়তাবাহী ৬ শ’ ট্রাক ঢুকতে দেয়া হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজাবাসীর জন্য হাজারো সাময়িক আবাসনের ব্যবস্থা করবে।

ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা অব্যাহত থাকবে। যদি আলোচনা সফল হয়, তাহলে পরবর্তী পর্যায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করা হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে জীবিত পণবন্দীদের মুক্তি দেবে হামাস। তাদের মধ্যে পণবন্দী পুরুষ সেনারাও থাকবেন। সেই সঙ্গে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর সর্বশেষ সেনাকেও সরিয়ে নেয়া হবে। যুদ্ধবিরতিকে ‘স্থায়ীভাবে শত্রুতা বন্ধে’ উন্নীত করা হবে।

তৃতীয় পর্যায়ে পণবন্দী ফেরানোর প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ করা হবে। গাজার জন্য বড় ধরণের একটি ‘পুনর্গঠন পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন শুরু করা হবে। এর আওতায় মার্কিন ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজা উপত্যকায় বাড়ি, বিদ্যালয় ও হাসপাতাল পুনর্নিমাণ করা হবে।

হামাসের প্রতি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়া ও গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আহ্বানের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালিনা বেয়ারবক।

সূত্র : টাইমস অব ইসরাইল ও এএফপি