আমাদের কিছুই নেই : হামলায় খাদ্যের সন্ধানে থাকা ফিলিস্তিনিরা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৮ মে ২০২৪, ১৭:২১
গাজা উপকূলের ১৬ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে তাঁবু টাঙিয়েছেন ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা। সৈকত ও এর আশপাশের ফাঁকা জায়গা, মাঠ এবং শহরের রাস্তাগুলো তাঁবুতে ছেয়ে গেছে। নালা খুঁড়ে তারা অস্থায়ী শৌচাগার নির্মাণ করেছে। পুরুষেরা খাবার ও পানির সন্ধান করছে। শিশুরা আবর্জনা ও ভবনের ধ্বংস্তুপের মধ্যে মায়ের জন্য রান্নার কাঠ জোগাড়ে ব্যস্ত।
তিন সপ্তাহ আগে রাফায় ইসরাইলের হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি দক্ষিণ গাজার এই শহর ছেড়ে পালিয়ে অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৮ মাসে তাদের বেশিরভাগই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
উপত্যকার সশস্ত্র শাসক গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূল করতে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় এই অঞ্চলটি কার্যত ধ্বংস হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের ভাষায় সেখানে ‘দুর্ভিক্ষ’ চলছে।
ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসঙ্ঘ ও অন্যান্য সহযোগিতা গোষ্ঠীর কাছে পাঠানো ত্রাণ সামগ্রীর পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। এমতাবস্থায় পরিবারকে পুনর্বাসিত করা ও খাদ্যের সন্ধানে মূলত নিজেরাই ছুটছে ফিলিস্তিনিরা।
স্ত্রী ও ছয় সন্তান নিয়ে তাঁবুতে থাকা মোহাম্মদ আবু রাদওয়ান নামের এক স্কুল শিক্ষক বলেন,‘পরিস্থিতি ভয়াবহ। এক তাঁবুতে অন্তত ২০ জন লোক বসবাস করছে। সেখানে বিশুদ্ধ পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই; আমাদের কিছুই নেই।
‘বারবার বাস্তুচ্যুত হওয়া, প্রিয়জনকে হারানো এসবের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকতে কেমন লাগে, তা আমি বোঝাতে পারব না। এগুলো মানসিকভাবে বিপর্যয়কর।’
গত ৬ মে রাফায় হামলা শুরুর পরপরই আবু রাদওয়ান সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। সেখানে তিনি যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তার কাছাকাছি ইসরাইলি বাহিনী বোমা বর্ষণ করছিল। সেসময় তিনিসহ ৪টি পরিবার মিলে ১ হাজার ডলার দিয়ে একটি গাধার গাড়ি ভাড়া করেন। তারপর জিনিসপত্র নিয়ে সেখান থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে খান ইউনিসের উপকণ্ঠে তাঁবু ফেলেন তারা। তাঁবু তৈরির আগে একরাত খোলা আকাশের নিচেও থাকতে হয় তাদের। তাঁবুর পাশে খুঁড়ে তারা শৌচাগার নির্মাণ করেছেন এবং এর চারপাশে পুরনো কম্বল ও কাপড় দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন।
মানবিক গোষ্ঠী মার্সি কর্পসের তথ্যানুযায়ী, পরিবারগুলোকে তাঁবুর জন্য কাঠ ও অন্যান্য সরঞ্জাম কিনে নিতে হয়। এগুলো কিনতে তাদের ৫০০ ডলার পর্যন্ত খরচ হয়ে যায়। এছাড়া দড়ি, পেরেক ও পরিবহন খরচ আলাদা।
জাতিসঙ্ঘ ও স্বেচ্ছাসেবকরা বলছে, সম্প্রতি গাজায় প্রবেশের সব পয়েন্ট দিয়ে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ট্রাক প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে ইসরাইল। এতে বাজারে ফল ও সবজির সরবরাহ বেড়েছে। একইসাথে দামও কিছুটা কমেছে।
তারপরও নিজ ভূমিতে শরণার্থীর জীবন কাটানো ফিলিস্তিনিদের অধিকাংশ সেগুলো কেনার সামর্থ্য রাখে না। গাজার অনেকেই কয়েক মাস ধরে তাদের বেতন পাচ্ছে না, এদিকে সঞ্চয়ও কমে আসছে। আবার ব্যাংকে যাদের টাকা আছে, তারা চাইলেও বেশিরভাগ সময় তা তুলতে পারছে না। হামলার পর থেকে ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের পরিমাণও কমে গেছে। টাকার জন্য অনেকেই কালোবাজারিদের শরণাপন্ন হচ্ছেন। সেখানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বের করতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিতে হয়।
জাতিসঙ্ঘ ও অন্যান্য সহযোগিতা গোষ্ঠীগুলোর কাছে থাকা বিনামূল্যের সামগ্রীর পরিমাণও সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেছে।
ওসিএইচএ-এর তথ্যানুসারে, রাফায় হামলার পর সেখানে জ্বালানি প্রবেশের পরিমাণ এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। এই সামান্য পরিমাণ থেকে আবার হাসপাতাল, বেকারি, জলের পাম্প ও ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোকে জ্বালানি দেওয়ার পর বাকিটুকু অন্য সব খাতে সমন্বয় করতে হচ্ছে।
রাফা থেকে পালিয়ে আসাদের বেশিরভাগই উপকূলীয় অঞ্চলের অনুর্বর উপত্যকা মুওয়াসিতে আশ্রয় নিয়েছে। ওই অঞ্চলটিকে মানবিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছে ইসরাইল।
সূত্র : ইউএনবি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা