হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার বর্ণনা দিলেন প্রেসিডেন্ট রইসির সফরসঙ্গী
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৫ মে ২০২৪, ১২:২১
ইরানের প্রেসিডেন্টের দফতর প্রধান গোলাম হোসাইন ইসমায়িলি পূর্ব আজারবাইজানে নিহত আয়াতুল্লাহ রইসির শেষ সফরে তার সাথে গিয়েছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট রইসির ওই প্রাদেশিক সফর এবং তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, আমরা ১৯ মে (৩০ উর্দিবেহেশত) রোববার সকাল ৬টায় তেহরান থেকে তাব্রিজের উদ্দেশে রওনা হই। সকাল ৭:১০ মিনিটে আমরা তাব্রিজে অবতরণ করি। পরিষ্কার আবহাওয়ার মধ্যেই আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলাম।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের প্রধান বলেন, আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের সাথে আমাদের যৌথ কর্মসূচি ছিল বাঁধ উদ্বোধন করা। সেই কাজ সেরে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সাথে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে একটি কূটনৈতিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে জোহরের নামাজ আদায় করি আমরা। এ সময় গ্রামের বেশ কিছু মানুষ ওই নামাজ খানাতেই তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করতে আসে। এলাকার লোকজনের সাথে প্রেসিডেন্ট রইসির সর্বশেষ সাক্ষাত অনুষ্ঠানটি ঠিকঠাকমতোই শেষ হয়। এরপর আমরা সম্পূর্ণ পরিষ্কার আবহাওয়ার মধ্যেই হেলিকপ্টারে চড়ে তাব্রিজের উদ্দেশে রওনা হয়ে যাই। আকাশ একেবারেই পরিষ্কার ছিল।
আধা ঘণ্টার মতো আমরা এভাবেই যাচ্ছিলাম। এরপর এক খণ্ড মেঘের মতো কিছু একটা দেখা গেল।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয় প্রধান বলেন, হেলিকপ্টারগুলো মেঘের স্তরের উচ্চতায় কিংবা মেঘের স্তর থেকে কিছুটা কম উচ্চতায় উড়ছিল। নিহত ক্যাপ্টেন মুস্তাফাভি ছিলেন রইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির পাইলট এবং আমাদের সাথে যাওয়া হেলিকপ্টার গ্রুপের কমান্ডার। তিনি ওই মেঘ দেখে ঘোষণা করলেন, আরো উচ্চতায় উড়ে গিয়ে মেঘের উপরে যেতে এবং সেই উচ্চতায় হেলিকপ্টার চালিয়ে যেতে।
ইসমায়িলি বলেন, নির্দেশ অনুযায়ী মেঘের উপরে চলে গেল হেলিকপ্টারগুলো। আমরা ছিলাম ৩ নম্বর হেলিকপ্টারে। মাঝখানের হেলিকপ্টারে ছিলেন প্রেসিডেন্ট রইসি আর সামনে ছিল অপর হেলিকপ্টারটি।
তিনি জানান, আমরা মেঘের উপরে যাবার আধা ঘণ্টা পর ক্যাপ্টেন বুঝতে পারলো যে মূল হেলিকপ্টারটি আমাদের সাথে নেই এবং ওই হেলিকপ্টারটিকে দেখা যাচ্ছে না।
ইসমায়িলি আরো বলেন, হেলিকপ্টারটি না আসায় আমাদের পাইলট পেছনে ফিরে গেল। আমি কো-পাইলটের কাছে জানতে চাইলে তিনি বললেন, সম্ভবত ওই হেলিকপ্টারটি জরুরি অবতরণ করেছে। আমরা যতই যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কোনোভাবেই যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল তাই কোনো সাড়া মেলেনি।
তিনি বলেন, আমাদের পাইলট ওই এলাকায় কয়েক রাউন্ড করে উড়ে উড়ে দেখার চেষ্টা করে এবং একপর্যায়ে মেঘের ওপরেও চলে যায়। কিন্তু সেখান থেকে নিচে কিছুই দেখতে পাননি এবং মেঘের নিচে আসাটাও সম্ভব হচ্ছিল না। সেই পরিস্থিতিতে আমরা পার্শ্ববর্তী সুনগুন তামা খনি এলাকায় অবতরণ করলাম এবং ঘটনার খোঁজখবর নিতে শুরু করলাম।
ইসমায়িলি বলেন, প্রেসিডেন্টের সাথে যারা ছিলেন তাদের কাছে মোবাইল ফোন ছিল। তাদেরকে কল করেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয় প্রধান আরো বলেন, ফ্লাইট ক্রু আমাদের বলেছিল যে- পাইলট নিহত মুস্তাফাভির সেল ফোনে একবার যোগাযোগ হয়েছিল। জবাব দিয়েছিলেন নিহত আয়াতুল্লাহ আলে হাশেম। তিনি বলেছিলেন, আমি ভালো নেই এবং আমি উপত্যকায় পড়ে গেছি, এছাড়া বিশেষ কোনো কিছু বলেননি তিনি। আমি ফোন করে তার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, বুঝতে পারছি না কী হয়েছে! বলতেও পারছি না আমি কোথায় আছি।
তিনি বললেন, আমি গাছগাছালির মধ্যে আছি। জিজ্ঞেস করলাম- কাউকে দেখতে পাচ্ছেন? তিনি বললেন, না, কাউকে দেখতে পাচ্ছি না, আমি একা, আমার চারপাশে কেউ নেই। আমি বললাম, ওই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যটা কিরকম দেখছেন? তিনি আমাদের গাছগাছালি ও বনের অস্তিত্বের কথা জানালেন। তার কথা থেকে আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল যে- হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে। আমরা দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজে নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
ইসমায়িলি বলেন, যখন আমরা এলাকাটি খুঁজে পাই, পরিস্থিতি দেখেই ধারণা করেছিলাম প্রেসিডেন্ট এবং অন্যান্য সফরসঙ্গী দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে নিহত হয়েছেন। তবে আলে-হাশেম কয়েক ঘণ্টা পরে নিহত হয়েছেন।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয় প্রধান আরো বলেন, আমরা যখন ওপর থেকে দুর্ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলাম, তখন বিস্ফোরণের শব্দ, আগুন কিংবা ধোঁয়ার কোনো আলামত দেখতে পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো বলেন, ঘণ্টাখানেক পর আমরা যখন সুনগুন তামার খনিতে নামি তখন আবহাওয়া অনুকূল ছিল। কিন্তু যখনই দুর্ঘটনাস্থলের দিকে যাই তখন মেঘ তৈরি হয়, বৃষ্টি শুরু হয় এবং কুয়াশা নেমে আসে। বিকেল ৩টার পর থেকে এলাকার আবহাওয়া সম্পূর্ণ পাল্টে যায়।
সূত্র : পার্সটুডে