১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রাইসির মৃত্যুতে গাজা নিয়ে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র গোপন আলোচনা স্থগিত!

জো বাইডেন এবং ইব্রাহিম রাইসি - ফাইল ছবি

গাজা উপত্যকা নিয়ে ওমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গোপন যে আলোচনা শুরু হয়েছিল, তা প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে স্থগিত হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনর সিনিয়র মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ব্রেট ম্যাকগার্ক চলতি মাসের প্রথম দিকে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাঘেরি কানির (বর্তমানে তিনি ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী) সাথে পরোক্ষ আলোচনা শুরু করেছিলেন বলে তিনটি ইরানি সূত্র জানিয়েছে। উল্লেখ্য, পাশ্চাত্যের সাথে ইরানের আলোচনার 'পয়েন্ট ম্যান' হলেন এই কানি।

আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয় মাস্কাটে। উল্লেখ্য, এই মাস্কাটেই এক দশক আগে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে গোপন সভার পর ২০১৫ সালে জেসিপিওএ (জয়েন্ট কনপ্রেহেনসিভ প্লান অব অ্যাকশন) পরমাণু চুক্তি হয়েছিল।

জানুয়ারির পর এটিই ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে প্রথম দফার আলোচনা।
আলোচনার ব্যাপারে (এ নিয়ে প্রথম খবর প্রকাশ করেছিল ওয়াশিংটনভিত্তিক অ্যাক্সিয়স) একটি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে জানান, বাঘেরি ও ম্যাকগার্কের মধ্যে আলোচনায় ভালোই অগ্রগতি হয়েছিল। তারা মোটামুটি একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন।

ওই সময় বাঘেরি কানি ছিলেন ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী তবে রাইসির সাথে রোববার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসাইন আমির-আবদুল্লহিয়ান নিহত হওয়ার পর কানি হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হয়েছিল : ইসরাইলে রকার পরিবর্তনের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা; গাজায় ইসরাইলি যুদ্ধের অবসান; এবং এই অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে দেয়া প্রতিরোধ করা।

ইরানের ক্ষমতাসীন এস্টাবলিশমেন্টের সাথে ঘনিষ্ঠ একজন বিশ্লেষক মিডল ইস্ট আইকে বলেছেন, আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান ও তার মিত্রদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার কাজ করত।

তিনি বলেন, কিন্তু প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয়ে নিহত হওয়ায় এবং শিগগিরই নির্বাচন হতে যাওয়ায় আলোচনা বিলম্বিত হতে পারে।

উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলি হামলা শুরুর পর থেকে ইয়েমেনর হাউছি এবং ইরাকি আধাসামরিক বাহিনীসহ ইরানি মিত্ররা ওই অঞ্চলে মার্কিন টার্গেটগুলোতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

গত এপ্রিলে দামাস্কাসে ইরানি কমান্ডারদের ইসরাইলিদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইসরাইলে ইরান হামলা চালালে মার্কিন বাহিনী ইরানি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করে।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দুই পক্ষের আলোচনায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং তেল অবরোধ অবসান নিয়েও আলোচনা হয়ে থাকতে পারে।

উল্লেখ্য, জেসিপিওএ ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে বাতিল করে। ওই চুক্তিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি হ্রাস করার বিনিময়ে অবরোধ শিথিল করার কথা ছিল।

অবশ্য, গত বছর ওয়াশিংটন ও তেহরান বন্দী বিনিময়ের চুক্তি করে। এতে বন্দী মুক্তির বদলে যুক্তরাষ্ট্রের আটকে রাখা ৬ বিলিয়ন ডলার ইরানকে দিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, চলতি মাসে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা শুরুর আগে ম্যাকগার্ক জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত সাইয়িদ ইরাভানির সাথে সাক্ষাত করেছিলেন।

একটি সূত্র জানান, ওই বৈঠকে ম্যাকগার্ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উদ্ধৃতি তুলে ধরেছিলেন : 'আমি মার্কিন নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে পরমাণু এবং ব্যাপকভিত্তিক কোনো চুক্তি নিয়ে ইরানের সাথে আলোচনা করব না। কারণ, ইরানিরা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না।'

ম্যাকগার্ক বলেন, ট্রাম্পের বাতিল করা চুক্তিটি ২০২২ সালে আবার চালু করতে রাইসি সরকারের অস্বীকারে বাইডেন রিপাবলিকানদের প্রচণ্ড চাপ এবং অপমানের মুখে পড়েছেন।

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রে এখন নির্বাচনী আবহাওয়া বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় নতুন করে আবার আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

সূত্র : মিডল ইস্ট আই


আরো সংবাদ



premium cement