রইসির জানাজা আজ, ইরানে পাঁচ দিনের শোক
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২১ মে ২০২৪, ১২:৫৩, আপডেট: ২১ মে ২০২৪, ১৩:০৩
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় সদ্য নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি'র জানাজা অনুষ্ঠিত হবে আজ।
দেশটির পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের তাবরিজ শহরে জানাজার কথা সোমবারই জানিয়েছিল রেভল্যুশনারি গার্ডস্-এর ঘনিষ্ঠ সংবাদ মাধ্যম তাসনিম।
এদিকে, আজ থেকে পাঁচ দিনের শোক পালন করছে দেশটি।
সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি এক আনুষ্ঠানিক বিৃবতিতে প্রেসিডেন্ট রইসির স্মরণে পাঁচ দিনের শোক ঘোষণা করেন।
খামেনি বলেন, তিনি ‘প্রিয় ইরানবাসীর প্রতি শোক জ্ঞাপন করছেন’।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, রোববার স্থানীয় সময় বিকেলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জলফা পার্বত্য এলাকায় রইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
হেলিকপ্টারে প্রেসিডেন্টের সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানসহ আরো পাঁচজন ছিলেন। তারা সবাই মৃত্যুবরণ করেন।
৬৩ বছর বয়সী রইসিকে সর্বোচ্চ নেতার উত্তরসূরী হিসেবে ভাবতেন অনেকে।
২৮ জুন দেশটিতে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।
অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের জন্য ইতোমধ্যেই ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট রইসির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর মোখবার-এর নাম অনুমোদন করেন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনি।
এছাড়া, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলি বাঘেরি কানিকে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
রোববার আজারবাইজানের সীমান্তের কাছে দুটি বাঁধ উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি। এরপর হেলিকপ্টারে ইরানের উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজ শহরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি।
তাবরিজ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হেলিকপ্টারটি।
প্রাথমিক প্রতিবেদনে দুর্যোগপূর্ণ ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনার কথা জানা গেছে।
প্রেসিডেন্টের বহরে মোট তিনটি হেলিকপ্টার ছিল। অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে অবতরণ করে।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানায়, রাইসিকে বেল ২১২ মডেলের একটি হেলিকপ্টার বহন করছিল। এই মডেলটি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি।
১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পরে যুক্তরাষ্ট্রের এটি ইরানের কাছে বিক্রি করার কথা নয়। সে হিসেবে উড়োযানটি অন্তত ৪৫ বছরের পুরনো।
দুর্ঘটনার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উদ্ধারকাজ চালাতেও বেগ পেতে হয়।
তুরস্কের পাঠানো একটি ড্রোনো স্থান শনাক্তের পর সোমবার দিনভর উদ্ধার কার্যক্রম চলে।
ইরানের রেড ক্রিসেন্ট প্রেসিডেন্ট ও তার সফরসঙ্গীদের লাশ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করে। তারপর অনুসন্ধান কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
৬৩ বছর বয়সী রইসি ২০২১ সালে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দেশটির মরালিটি বা নৈতিকতা বিষয়ক আইন কঠোর করার নির্দেশ দেন।
তার মৃত্যুর পর এক বিবৃতিতে ইরানি সরকার জানায়, সরকারের কর্মকাণ্ডে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না।
প্রেসিডেন্ট রাইসি'র মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে অনেক দেশ।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, রাইসিকে একজন ‘অসাধারণ রাজনীতিবিদ’ এবং ‘রাশিয়ার সত্যিকারের বন্ধু’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
রাইসির ‘দুঃখজনক মৃত্যকে’ ইরানের জনগণের জন্য ‘বিশাল ক্ষতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ইরানের আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইরানের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রইসির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বার্তা দিয়েছেন, ‘তার পরিবার ও ইরানের জনগণের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি। এই শোকের সময়ে ভারত ইরানের পাশে আছে।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, রাইসি'র মৃত্যুতে ‘অনেক বড় ক্ষতি’ হলো।
পাকিস্তানে এক দিনের শোক ঘোষণার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস এক বিবৃতিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে।
‘ভ্রাতৃপ্রতীম দেশটির জন্য দুঃখের এই ঘটনায় আমরা মর্মাহত,’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে সংগঠনটির বিবৃতিতে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টকে পাঠানো এক চিঠিতে লেখেন, ‘প্রেসিডেন্ট সাঈদ রইসি একজন জ্ঞানী ও নিঃস্বার্থ নেতা ছিলেন- যিনি তার দেশের সেবায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন এবং ইরানের জনগণের কল্যাণে কাজ করে গেছেন।’
বিবিসি'র মুখ্য আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা লিজ ডুসেট লিখেছেন, ‘তার প্রতিপক্ষের লোকেরা হয়তো এই সাবেক আইনজীবীর প্রস্থানে স্বস্তিই খুঁজবেন। তার বিরুদ্ধে ১৯৮০’র দশকে রাজনৈতিক বন্দীদের গণসাজা দেয়ায় ভূমিকা রাখার অভিযোগ আছে। যদিও তিনি বরাবরই সেই অভিযোগ নাকচ করে এসেছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের তরফে আসে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা