রাইসিকে হত্যার অভিযোগ, যা বলছে ইসরাইল
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২০ মে ২০২৪, ২০:১৯
হেলিপকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে অপ্রত্যাশিত মৃত্যু ঘটেছে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসি ও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ নয়জনের। ঘটনাটি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ঘটনা সত্যিই দুর্ঘটনা নাকি এতে শত্রু পক্ষের হাত আছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে চিরবৈরী আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরাইলের রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইসরাইলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে এ ঘটনায় ইসরাইলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
তিনি বলেন,‘দুর্ঘটনার পেছনে আমরা নেই।’ তবে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরাইলি সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে ইসরাইলের বিরোধী দল বেতেনু পার্টির চেয়ারম্যান এম কে আভিগদোর লিবারম্যান বলেছেন, রাইসির মৃত্যু এই অঞ্চলে ইরানের নীতিতে কোনো পার্থক্য আনবে বলে ইসরাইল আশা করে না।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেইটকে তিনি বলেন,‘আমাদের জন্য, এটা কোনো বিষয় নয়। এই ঘটনা ইসরাইলের (ইরানের প্রতি) মনোভাবে কোনো প্রভাব ফেলবে না। ইরানের নীতি দেশটির সর্বোচ্চ নেতার (আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি) মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।’
তিনি বলেন,‘ইরানের প্রেসিডেন্ট যে একজন নিষ্ঠুর লোক ছিলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা তার জন্য একফোঁটা চোখের পানিও ফেলব না।’
ইসরাইলের অতি-রক্ষণশীল নোয়াম পার্টির নেতা এম কে আভিগদোর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন,‘এক মাসেরও কম সময় আগে তিনি (রাইসি) হুমকি দিয়েছিলেন যে, ইসরাইল আক্রমণ চালালে এর কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আর এখন তিনিই ইতিহাসের ধূলিকণা।’
তবে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে ইসরাইলের হাত প্রমাণিত হলে আঞ্চলিক উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পাবে। লেবানন, সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনজুড়ে ইরানের প্রক্সি নেটওয়ার্ক ভূ-রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপকে আরো জটিল করে তুলবে। বিশেষ করে ইসরাইল ও হামাসের সাথে চলমান সঙ্ঘাত নতুন মাত্রা পাবে। ইরানের নেতৃত্বে যেকোনো অস্থিতিশীলতা এই গোষ্ঠীগুলোকে উৎসাহিত করতে পারে। ফলে সম্ভাব্য বিস্তৃত সঙ্ঘাতের দিকে গড়াতে পারে ভবিষ্যত।
দি ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছে। এতে বিভিন্ন মহল থেকে বাস্তবতা অনুসন্ধানের আওয়াজ উঠেছে। ইসরাইল ও ইরানের বৈরিতা ঐতিহাসিক। তাই এসব আলোচনাকে একদম উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। বিশেষ করে দামেস্কে ইসরাইলের একজন ইরানি জেনারেলকে হত্যা এবং ইরানের পরবর্তী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যারেজসহ সাম্প্রতিক উত্তেজনা ওই সন্দেহকে ঘনীভূত করে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এমন আলোচনাকে অস্বীকার করেন। তারা বলেন, ইসরাইল ঐতিহ্যগতভাবে উচ্চ-প্রোফাইল রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পরিবর্তে সামরিক এবং পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার প্রক্রিয়া অধিক অবলম্বন করে থাকে। তাই এতে তাদের সম্পৃক্ত থাকার সম্ভাবনা গৌণ।
এর আগে, রোববার প্রতিবেশি আজারবাইজানের সাথে যৌথ অর্থায়নে নির্মিত কিজ কালাসি বাঁধের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা। পরে সেখান থেকে ইরানের তাবরিজ শহরে আরেকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাওয়ার সময় ভারজাকান অঞ্চলের দিজামারের পার্বত্য এলাকায় প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
কয়েক ঘণ্টার দীর্ঘ তল্লাশি অভিযানের পর সোমবার দিজামারের উজি ও পীর গ্রামের মধ্যবর্তী এলাকায় বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করা হয়। সেখান থেকে ইরানের উদ্ধারকারী দলের কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ নয়জনের লাশ উদ্ধার করেছেন।
রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের নতুন অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবেরের নাম ঘোষণা করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় শোকও ঘোষণা করেছেন তিনি।
সূত্র : দি ইকোনমিক টাইমস, টাইমস অব ইসরাইল, রয়টার্স।