‘ইসরাইলকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দাও’
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৯ মে ২০২৪, ১০:৫৪
ইসরাইলের প্রতিষ্ঠার ‘নাকবা’ বা বিপর্যয়কে স্মরণ করে ওয়াশিংটনের ইউএস ক্যাপিটলের সামনে শত শত বিক্ষোভকারী ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে।
রোববার ইসরাইলভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্যা টাইমস অফ ইসরাইলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ‘নাকবা’ বা বিপর্যয়ের সময় ৭ লাখ
ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। এ নির্বাসনকে স্মরণ করে ওয়াশিংটনে সমাবেশ করে শত শত বিক্ষোভকারী।
বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এবং গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলি সামরিক অভিযান অবিলম্বে সমাপ্তির আহ্বান জানান।
এ সময় তাদের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়, ‘চুরি করা জমিতে শান্তি নেই’, ‘হত্যা বন্ধ কর, অপরাধ বন্ধ কর’, ‘ইসরাইলকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দাও।’
বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলকে সমর্থন করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনের উপর তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
নাকবা কী
১৯৪৮ সালের ১৫ মে মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছিল ফিলিস্তিনিরা। সেই ঘটনাকে নাকবা বা বিপর্যয়ের দিন হিসেবে পালন করে তারা। গত ১৫ মে ছিল নাকবার ৭৬তম বার্ষিকী। গাজায় ইসরাইল যুদ্ধের নামে গণহত্যা করে তাদের অব্যাহত সংগ্রামের ভয়াবহ স্মৃতি জাগিয়ে দিচ্ছে।
প্রায় ৭ লাখ ফিলিস্তিনির ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের আগে এবং ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পরে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। ফিলিস্তিনিরা একে আরবিতে নাকবা বলে, যার অর্থ বিপর্যয়।
যুদ্ধের পরে ইসরাইল তাদের ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিতে অস্বীকার করে কারণ এর ফলে তাদের সীমানার মধ্যে ফিলিস্তিনিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হতো। পরিবর্তে তারা স্থায়ী উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছে যার সংখ্যা এখন প্রায় ৬০ লাখ। বেশির ভাগই লেবানন, সিরিয়া, জর্দান এবং ইসরাইল-অধিকৃত পশ্চিমতীরে বস্তিসদৃশ শরণার্থী শিবিরে বসবাস করে। গাজায় শরণার্থী এবং তাদের বংশধররা জনসংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ। ফিলিস্তিনিদের ফিরে যাওয়ার অধিকার ইসরাইলের প্রত্যাখ্যান এই সঙ্ঘাতের মূল কারণ। ১৫ বছর আগে ভেঙে যাওয়া শান্তি আলোচনার সবচেয়ে জটিল বিষয়গুলোর মধ্যে একটি।
এখন অনেক ফিলিস্তিনি ভয় পাচ্ছে যে তাদের বেদনাদায়ক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আরো ভয়াবহ মাত্রায় হতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরাইল তার আক্রমণ বৃদ্ধি করার সাথে সাথে সমস্ত গাজাজুড়ে ফিলিস্তিনিরা গাড়ি এবং গাধার গাড়ি লোড করে উপচে পড়া তাঁবু ছেড়ে নিরাপদ জায়গার খোঁজে হেঁটে রওনা হচ্ছে। সাত মাসের যুদ্ধে বিভিন্ন সময়ের গণউচ্ছেদের চিত্রগুলো ১৯৪৮ সালের সাদা-কালো ফটোগ্রাফের সাথে সম্পূর্ণভাবে মিলে যাচ্ছে।
মুস্তাফা আল-গাজার (৮১) তার পরিবার নিয়ে মাসব্যাপী পালিয়ে তাদের গ্রাম থেকে বর্তমান মধ্য ইসরাইলের দক্ষিণ শহর রাফাহ যাওয়ার কথা এখনো স্মরণ করতে পারেন। তখন তার বয়স ছিল ৫ এবং তারা (ইসরাইলিরা) এক পর্যায়ে আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ করেছিল। তখন আল-গাজার ও তার পরিবার উষ্ণতায় ঘুমানোর জন্য একটি গাছের নিচে গর্ত খনন করেছিল আশ্রয় নিয়ে ছিলেন।
আল-গাজার এই সপ্তাহেই আবার পালাতে বাধ্য হন। এইবার মুওয়াসিতে একটি অনুর্বর উপকূলীয় অঞ্চলের তাঁবুতে আশ্রয় নেন যেখানে ইতোমধ্যেই প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি বাস করছিল।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি ১৯৪৮ সালের চেয়ে খারাপ। তখন ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসঙ্ঘের সংস্থা নিয়মিতভাবে খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছিল। এখন সেটাও তারা পাচ্ছেন না।
তিনি বলেছিলেন, ১৯৪৮ সালে আমার আশা ছিল ফিরে আসার, কিন্তু আজ আমার আশা বেঁচে থাকার। এখন আমি সারাক্ষণ ভয়ের মধ্যে থাকি। আমি আমার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের ভরণ-পোষণ দিতে পারি না। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়তে পড়তে বলেন।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আকস্মিক বড়ো ধরনের হামলা চালায়। এ সময়ে তারা প্রায় এক হাজার ১৭০ ইসরাইলিকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে বন্দী করে। এখনো হামাসের কাছে ১২৮ জন বন্দী হিসেবে আটক রয়েছে।
এদিকে ৭ অক্টোবর ইসরাইল গাজায় প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে যা এখনো চলছে। গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত এ হামলায় ৩৫ হাজার ৩০৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। আহত হয়েছে আরো ৭৯ হাজার ২৬১ ফিলিস্তিনি।
সূত্র : টাইমস অফ ইসরাইল
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা