ইরান হামলা করলে আত্মরক্ষায় পাল্টা আঘাত হানতে প্রস্তুত ইসরাইল
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১২ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:৫৪
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার বলেছে, সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে প্রাণঘাতী বিমান হামলার প্রতিশোধ নিলে তারা আত্মরক্ষা করতে এবং পাল্টা আঘাত হানতে প্রস্তুত রয়েছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ায় ইরানি কনুলেটে হামলার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে তেহরান। ওই হামলা ইসরাইল চালিয়েছে বলে বিশ্বাস করে মার্কিন সামরিক বাহিনীও। তবে ইসরাইল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
গাজায় ছয় মাসের যুদ্ধ ফিলিস্তিনি অঞ্চলকে মানবিক সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ১০ লাখেরও বেশি মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে।
ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের প্রধান সামান্থা পাওয়ার বুধবার আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ চলছে বলে যে 'বিশ্বাসযোগ্য' প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা তিনি মেনে নিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি সপ্তাহে বলেছেন, গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবাহ বাড়াতে ইসরাইল যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
গাজায় ইসরাইলি বোমা হামলা ও স্থল হামলায় অন্তত ৩৩ হাজার ৩৬০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৭৪ হাজার ৯৯৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে কতজন বেসামরিক ও কতজন যোদ্ধা রয়েছে তা আলাদা করে জানাতে না পারলেও নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু বলে জানায় মন্ত্রণালয়।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের অতর্কিত হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হওয়ার পর যুদ্ধ শুরু হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র বাহিনী প্রায় ২৫০ জনকে পণবন্দী করে।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ইরান হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে তারা দেশটিকে রক্ষা করতে এবং পাল্টা হামলা চালাতে প্রস্তুত রয়েছে।
ইরান গত সপ্তাহে দামেস্কে বিমান হামলায় নিহত তার দুই জেনারেলের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। তারা এ হামলার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করলেও ইসরাইল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইরান বা ওই অঞ্চলে সমর্থিত বহু সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার আশঙ্কায় ইসরাইল অতিরিক্ত বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিট প্রস্তুত রেখেছে এবং অন্যান্য সেনাদের সক্রিয় করেছে।
সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইরানি ভূখণ্ড থেকে হামলা হলে এটি স্পষ্ট যে, মধ্যপ্রাচ্যকে উত্তেজিত করতেই ইরান হামলা চালাবে। ’
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরাইল আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উন্নত করেছে। 'যেখানে প্রয়োজন সেখানে কীভাবে কাজ করতে হবে তা আমরা জানব।’
হাগারি বলেন, মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল এরিক কুরিলা ইসরায়েলি সামরিক নেতাদের সাথে কৌশলগত মূল্যায়নের জন্য ইসরাইলে পৌঁছেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ সপ্তাহে বলেছেন, ইসরাইলের নিরাপত্তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি এখনো আগের মতোই দৃঢ়।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরাইলি বিক্ষোভ, পণবন্দী মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং গাজায় হামাসের হাতে আটক কয়েক ডজন পণবন্দীর মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে তেল আবিবের রাস্তায় নেমে আসে বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীরা জিম্মিদের বড় বড় ছবি এবং ইংরেজি ও হিব্রু ভাষায় লেখা স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে।
অক্টোবরে দেশটিতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে চলতি মাসের শুরুতে হাজার হাজার ইসরাইলি জেরুজালেমে জড়ো হয়, যা সরকারবিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। প্রায় ছয় মাসের যুদ্ধ নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব নিয়ে নতুন করে বিভক্তি তৈরি করেছে, যদিও দেশটির অধিকাংশই মূলত যুদ্ধের পক্ষে রয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, আগাম নির্বাচন ইসরাইলকে ছয় থেকে আট মাসের জন্য অচল করে দেবে এবং পণবন্দী আলোচনাকে থামিয়ে দেবে। তিনি হামাসকে ধ্বংস করার এবং সমস্ত জিম্মিকে ঘরে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে সেই লক্ষ্যগুলো অধরা রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে বৃহস্পতিবার বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, গাজার কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি 'আসন্ন', ইউএসএআইডি প্রশাসক সামান্থা পাওয়ারকে নরম করে বলেছেন, সেখানে এরইমধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে তা 'বিশ্বাসযোগ্য'।
জিন-পিয়েরে বলেন, ‘এ কারণেই আমরা গাজায় পৌঁছানো মানবিক সহায়তা বাড়ানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজায় ত্রাণ বহনকারী ট্রাকের সংখ্যা বেড়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা জানি গাজার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, তাই আমরা অবশ্যই এই প্রতিবেদনগুলো সম্পর্কে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছি, যাতে গাজায় আরো বেশি সহায়তা পাওয়া যায়।’
তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ত্রাণের প্রবাহ বাড়াতে ইসরাইলকে চাপ দেয়া অব্যাহত রাখবে।
মার্কিন চাপের মুখে ইসরাইল নাটকীয়ভাবে গাজায় সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত সপ্তাহে বলেছে যে তারা আরো একটি কার্গো ক্রসিং খুলবে এবং অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি অঞ্চলে আগের চেয়ে আরো বেশি ট্রাক পাঠাবে। কিন্তু কয়েকদিন পরও এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক কর্মকর্তারা বলছেন, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর গাজায় বিপুল সংখ্যক লোক অনাহারে রয়েছে।
যদিও ইসরাইল বলছে, তারা এই অঞ্চলে প্রবেশকারী ত্রাণ ট্রাকের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়িয়েছে, জাতিসঙ্ঘের কর্মীরা কেবল সামান্য বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন।
সূত্র : ইউএনবি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা