১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজায় সাহায্য কর্মীদের মৃত্যুর ঘটনায় পূর্ণ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের দাবি

- ছবি : বিবিসি

গাজায় ইসরাইলের ড্রোন হামলায় সাহায্য সংস্থার সাত কর্মীর মৃত্যুর ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে একটি সাহায্য সংস্থা।

ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ-এর কিছু ‘মারাত্মক ভুল’ এর কারণে ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে)-এর সাত কর্মী হামলার টার্গেটে পরিণত হয়েছেন বলার পর সংস্থাটি এ আহ্বান জানালো।

ইসরাইলের সশস্ত্র বাহিনী এ ঘটনায় দু’জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে। তবে ওই সাহায্য সংস্থার সিইও বলেন, ইসরাইলের সশস্ত্র বাহিনী ‘গাজায় নিজেদের ব্যর্থতার গ্রহণযোগ্য তদন্ত করতে পারে না।’

এক বিবৃতিতে এরিন গোর বলেন, [আইডিএফের] দু:খ প্রকাশ আমাদের সাত সহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনার নিছক সান্ত্বনা মাত্র। এটা নিহতদের পরিবার ও বিশ্বজুড়ে ডব্লিউসিকে পরিবারের প্রতি নিছক সান্ত্বনা।’

তিনি বলেন, ‘ইসরাইলকে অবশ্যই গাজায় মানবিক সহায়তার সাথে জড়িত কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। ওই মৃত্যুর ঘটনার পর সেখানে অনেকগুলো সংস্থা তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে।

গত পহেলা এপ্রিল মাত্র চার মিনিটের মধ্যে গাজায় ত্রাণ সাহায্য বিতরণের সাথে জড়িত কর্মীদের গাড়িকে লক্ষ্য করে একের পর এক তিনটি মিসাইল আঘাত করলে সাতজন ত্রাণকর্মী মারা যান।

ওই ত্রাণ দলটি ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর অনুমোদন নিয়েই উপকূল থেকে ত্রাণ সহায়তা গুদামে স্থানান্তরের কাজ করছিলো। কিন্তু আইডিএফের ভুল ও নিজেদের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝির কারণে হামাসের পরিবর্তে তারাই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

আইডিএফ বলছে ‘কয়েকজন সশস্ত্র বন্দুকধারী’কে ওই কনভয়ের কাছাকাছি দেখা যাচ্ছিলো। তবে ড্রোন অপারেটররা ভুলবশত ত্রাণকর্মীদের বহনকারী গাড়িগুলোকে শনাক্ত করেছিলো।

সেনাবাহিনী দুঃখ প্রকাশ করে স্বীকার করেছে যে তাদের সৈন্যরা প্রটোকল মেনে কাজ করেনি এবং ত্রাণ দলের পুর্বানুমোদনের বিষয়টি সম্পর্কে তাদের জানানো হয়নি।

এ ঘটনায় একজন কর্নেল ও একজন মেজরকে বরখাস্তের পাশাপাশি আইডিএফের তিনজন কমান্ডারকে তিরস্কার করা হয়েছে। এছাড়া যেই ড্রোন ইউনিট এ ঘটনায় জড়িত সেটিকেও স্থগিত করা হয়েছে।

ইসরাইল এ ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের চাপের মুখে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ডেভিড ক্যামেরন বলেন, প্রাথমিক তথ্যগুলো ব্রিটিশ কর্মকর্তারা সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে দেখছেন। তিনি দুই কর্মকর্তার বরখাস্ত হওয়াকে ‘প্রাথমিক পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সামাজিক মাধ্যমে এক্স-এ তিনি লিখেছেন, ‘তদন্তে যা উঠে এসেছে তার পুরোটা প্রকাশ করতে হবে এবং পূর্ণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্বাধীন পর্যালোচনা করতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, তিনি ইসরাইলের তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছেন এবং সেটি সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করছেন।

তিনি বলেন, ‘কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেটি নয় বরং এসব পদক্ষেপের ফল দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।’

ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা দেয়া নিয়ে বাইডেন প্রশাসন ডেমোক্র্যাটদের দিক থেকেও চাপের মুখে রয়েছেন।

শুক্রবার সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিসহ কংগ্রেসের প্রায় তিন ডজন সদস্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ব্লিঙ্কেনকে চিঠি দিয়ে ইসরাইলকে সশস্ত্র সহায়তার একটি প্যাকেজ অনুমোদনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইসরাইল গাজায় নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি যথেষ্ট কমিয়ে আনতে ব্যর্থ হলে বা সাত ত্রাণকর্মীকে হত্যার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত রাখতেও বলেছেন তারা।

এ দিকে, আইডিএফের প্রকাশ্যে দু:খ প্রকাশের আগে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের একটি ভিডিও ফুটেজসহ তদন্তের আরো কিছু উপাদান দেখানো হয়েছে। ফুটেজে দেখানো হয় ত্রাণবাহী ট্রাকের ওপরে হামাসের একজন বন্দুকধারী দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে হচ্ছে।

তবে তদন্তে যা পাওয়া গেছে তার একটি সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়েছে মাত্র।

ইসরাইলের তদন্তে সামরিক অসদাচরণের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হয়েছে একজন মেজর জেনারেলের নেতৃত্বে।

আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘পেশাদার এবং চেইন অব কমান্ডের বাইরে থাকা স্বাধীন একটি কমিটি এই তদন্ত করেছে।’

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘তদন্তে যা পাওয়া গেছে তা ‘পরিষ্কারভাবে ও স্বচ্ছতার সাথে’ প্রকাশ করা হবে। তবে এটি করা হবে ডব্লিউসিকে ও যেসব দেশের নাগরিকরা মারা গেছে সেসব দেশের প্রতিনিধিদের সামনে উপস্থাপনের পর।

তিনি বলেন, সৈন্যরা নিশ্চিতভাবেই হামাসকে টার্গেট করেছিল, কিন্তু মারাত্মক ভুলের ধারাবাহিকতায় হামলাটি একটি ট্রাজেডিতে পরিণত হয়।

শুক্রবার জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বলেন, গাজায় সঙ্ঘাত শুরুর পর থেকে প্রায় ১৯৬ জন সাহায্য কর্মী মারা গেছেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন ‘ইসরাইলের সরকার ভুল স্বীকার করে। কিন্তু কে ভুলটি করেছে সেটি সমস্যা নয়। সমস্যা হলো সামরিক কৌশল ও প্রক্রিয়াই বারবার এ ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে। এসব ভুল ঠিক করার জন্য দরকার স্বাধীন ও অর্থবহ তদন্ত এবং মাঠের পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।’

বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ওয়াশিংটনের আরো সহায়তা গাজায় যাচ্ছে এবং ত্রাণকর্মী সুরক্ষায় বাড়তি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বলেছেন।

পরে ইসরাইল জানায়, গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য তারা আরো দু’টি রুটের অনুমোদন দিয়েছে। তবে কখন এই দুই রুট খুলে দেয়া হবে সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।

যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথমবারের মতো উত্তর গাজায় দ্যা ইরেজ গেইট খুলে দেয়া হচ্ছে এবং গাজার কাছে ইসরাইলি কন্টেইনার পোর্ট আশডড-এ মানবিক সহায়তা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া জর্ডান হয়ে আরো সহায়তা আসবে কেরেম শালম ক্রসিং এর মাধ্যমে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement