২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

৩ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলো হাউছিরা

অস্ত্র হাতে হাউছি যোদ্ধারা - ছবি : আনাদোলু এজেন্সি

ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হাউছি যোদ্ধারা সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব জোটের সাথে তিন দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। শনিবার দলটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।

সৌদি আরবে হাউছি বিদ্রোহীদের হামলার একদিন পর তাদের পক্ষ থেকে এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলো।

হাউছি আন্দোলনের রাজনৈতিক নেতা মাহদি আল-মাশাত বিবৃতিতে বলেন, তিন দিনের জন্য আরব জোটের বিরুদ্ধে রকেট ও ড্রোন হামলাসহ সবধরণের সামরিক তৎপরতা বন্ধ রাখবে হাউছিরা। তবে ইয়েমেনে আরব জোট আগ্রাসন বন্ধ করলে ‘স্থায়ী’ যুদ্ধবিরতি সম্ভব হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘এটি বিশ্বাস পুনর্গঠন ও আলোচনার জগত থেকে পদক্ষেপের জগতে সকল পক্ষকে নিতে এক আন্তরিক আমন্ত্রণ ও বাস্তব পদক্ষেপ।’

তিনি বলেন, ‘ আমরা এই ঘোষণাকে চূড়ান্ত ও স্থায়ী প্রতিজ্ঞায় পরিণত করতে প্রস্তুত রয়েছি যদি সৌদি আরব তার অবরোধ শেষ করে এবং চূড়ান্তভাবে ইয়েমেন থেকে এর আগ্রাসন বন্ধ করে।’

এই বিষয়ে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

এর আগে শুক্রবার সৌদি আরবের জেদ্দায় এক তেল সংরক্ষণাগারে রকেট হামলা চালায় হাইছিরা।

সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হামলায় উত্তর জেদ্দার তেল সংরক্ষণাগারের দুইটি ট্যাঙ্কে আগুন লেগে যায়। তবে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

হামলায় কেউ হতাহত হয়নি বলে জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

হাউছি বিদ্রোহীদের সামরিক মুখপাত্র বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইয়াহইয়া সারি জানান, জেদ্দা ছাড়াও সৌদি রাজধানী রিয়াদ, জিজান, নাজরান, রাস তানুরা ও রাবেগে হামলা চালিয়েছে হাউছিরা।

হাউছিদের হামলার জবাবে শনিবার ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও লোহিত সাগর তীরবর্তী হোদাইদায় বিমান হামলা চালায় আরব জোট।

হাউছিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামলায় একটি জ্বালানি কেন্দ্র, এক জ্বালানি সরবরাহ কেন্দ্র ও রাষ্ট্রীয় এক সামাজিক বীমা কোম্পানির ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিমান হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছে বলে জানায় হাউছিরা।

এরপরই হাউছিদের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে।

২০১১ সালে আরব বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের বিক্ষোভের জেরে ইয়েমেনে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক আলী আবদুল্লাহ সালেহ সরকারের পতন ঘটে। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মানসুর হাদি দায়িত্ব নেন। নতুন সরকার গঠন হলেও ইয়েমেনের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকে।

বিবাদমান পক্ষগুলোর দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৪ সালের শেষে ইরান সমর্থিত উত্তর ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করলে প্রেসিডেন্ট হাদি সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। ২০১৫ সালের মার্চে সৌদি নেতৃত্বের জোট হাউছিদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে আগ্রাসন করলে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের মুখে পড়ে আরব উপদ্বীপের দরিদ্রতম দেশটি।

সাত বছরের বেশি চলমান এই যুদ্ধে হাউছি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানাসহ উত্তর ইয়েমেন নিয়ন্ত্রণে রাখে। অপরদিকে সৌদি জোটের সহায়তায় আবদ রাব্বু মানসুর হাদি দক্ষিণের বন্দরনগরী এডেনকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ইয়েমেনে সরকার প্রতিষ্ঠা করেন।

ইয়েমেনে চলমান এই যুদ্ধে এক লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বেসামরিক লোকজন। এছাড়া যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো মানুষ।

সাত বছরের টানা যুদ্ধ ও অবরোধে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে ইয়েমেন। ইতোমধ্যে ক্ষুধায় ৫০ হাজারের বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে। ইয়েমেনের চলমান পরিস্থিতিকে বিশ্বের নিকৃষ্টতম মানবসৃষ্ট মানবিক সংকট হিসেবে হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসঙ্ঘ।

সূত্র : আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement