২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ

সীমান্তে গোলাবর্ষণের পর নতুন ভয়ে ইরান

- ছবি : সংগৃহীত

আগেই চিন্তা প্রকাশ করেছিল ইরান। এবার সে ঘটনাই ঘটল। নাগার্নো-কারাবাখ ঘিরে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের সংঘাতের প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়ল ইরানে।

ইরান জানিয়েছে, ইরান সীমান্তে আজারবাইজানের রকেট এসে পড়েছে। এই ঘটনার পরে ফের ইরানের তরফে জানানো হয়েছে, দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি বৈঠকে বসুক দুইটি দেশ। ইরান মধ্যস্থতা করতে রাজি। যদি তারা লড়াই চালিয়ে যায়, তা হলে খেয়াল রাখতে হবে, তার প্রভাব যেন পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে না পৌঁছয়। ফের ইরানে যুদ্ধের কোনো প্রভাব পড়লে তেহরান সরাসরি ব্যবস্থা নেবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের যুদ্ধ নিয়ে প্রথম থেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছে ইরান। দুইটি দেশেরই সীমান্ত রয়েছে ইরানের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান দুই দেশের মানুষই ইরানে বসবাস করেন।

বস্তুত, এই মুহূর্তে ইরানে প্রায় এক লাখ আর্মেনিয়ান থাকেন। আজারবাইজানের মানুষের সংখ্যা তার চেয়ে ঢের বেশি। প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ। ইরানের মোট জনসংখ্যা আট কোটি ২০ লাখের মতো। আজারবাইজানের জনসংখ্যা এক কোটির সামান্য বেশি। সেখান থেকে আজারি মানুষের সংখ্যা ইরানে বেশি। ইরানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আজারবাইজান। প্রশাসনেও বহু আজারি কাজ করেন।

কিছুদিন আগে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কিছু কর্তাব্যক্তি চিঠি দিয়ে আর্মেনিয়াকে নাগার্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের হাতে ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। শুধু তাই নয়, গত কিছুদিনে তেহরানের রাস্তায় বিপুল পরিমাণ আজারি মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আর্মেনিয়ার মৃত্যু কামনা করা হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এ কারণেই ইরান এতটা চিন্তিত। এবং এই যুদ্ধে ইরানের একটা বড় অংশের মানুষের সমর্থন আজারবাইজানের দিকে। সরকারিভাবে আর্মেনিয়ার সঙ্গে কথাও বলেছেন ইরানের উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। কিন্তু আশঙ্কা অন্য জায়গায়। দীর্ঘ দিন ধরেই ইরানের ভয়, উত্তর ইরানের যে অংশে আজারি মানুষের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি, আজারবাইজান তা দখল করার চেষ্টা করবে। সাম্প্রতিক যুদ্ধ সেই আশঙ্কা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। নাগার্নো-কারাবাখের যুদ্ধ যদি আরো বিস্তৃত হয়, তাহলে ইরানের সীমান্তও সুরক্ষিত থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে।

সে কারণেই বারবার ইরান এই যুদ্ধ থামাবার কথা বলছে। আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরে ইউরোপে তেলের ব্যবসায় আজারবাইজান গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে। আমেরিকা ও ইসরাইল আজারবাইজানকে ওই অঞ্চলের সব চেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি বলে মনে করে।

তুরস্কের সঙ্গে আজারবাইজানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ফলে সেই দিক থেকে ইরানের সঙ্গে আজারবাইজানের শত্রুতাও রয়েছে। সব মিলিয়ে এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ বিস্তৃত হলে কে কোন স্বার্থে কোন পক্ষে সমর্থন জানাবে, তা এখনই বোঝা মুশকিল। প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব অঙ্ক আছে। ইরান চাইছে না, সেই পরিস্থিতি তৈরি হোক।

মৃত্যু মিছিল
এক দিকে কূটনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। অন্য দিকে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান দুই দেশেই প্রতিদিন গোলাগুলিতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। মৃত্যু হচ্ছে বহু সাধারণ মানুষের।

আর্মেনিয়ার হিসেব অনুযায়ী আজারবাইজানে এখনো পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আজারবাইজান অবশ্য কোনো সংখ্যা জানায়নি। অন্য দিকে আর্মেনিয়ার দাবি, তাদের দেশে এখনো পর্যন্ত ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো পর্যন্ত ছয়জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আজারবাইজান জানিয়েছে এই সংখ্যাটি অনেক বেশি।

এখনো ড্রোন ব্যবহার করে নাগার্নো-কারাবাখে গোলা বর্ষণ করছে আজারবাইজান। আর্মেনিয়ার সেনাও লাগাতার শেলিং চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement