কৃষিতে ঝুঁকছে মরুর দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২১ এপ্রিল ২০২০, ১৫:৪৮
লকডাউনের কারণে সারাবিশ্বে আমদানি-রপ্তানি স্থবির হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে প্রযুক্তির সাহায্যে কৃষি উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
সংযুক্ত আরব আমিরাত বলতে গেলে পুরোটাই মরুভূমি। দেশটিকে তাদের খাদ্যের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। খাদ্যের এ জোগান অব্যাহত রাখতে দেশটি বিদেশের মাটিতে কৃষিখাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে।
কিন্তু মারাত্মক সংক্রামক করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এখন লকডাউনে। ফলে খাদ্য সরবরাহ এবং কৃষি উৎপাদন হুমকির মুখে। বেশিরভাগ দেশে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ।
এ অবস্থায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের খাদ্য আমদানি প্রক্রিয়াও ঝুঁকিতে পড়েছে। দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে স্থানীয় কৃষি খামারগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা করছেন এর সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা।
দুবাইয়ের একটি খামারের প্রধান নির্বাহী ওমর আল-জুনদি বলেন, ‘‘এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। লকডাউনে সীমান্ত ও বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় খাদ্য আমদানির উপর তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’’
ওমরের খামার ‘বাদিয়া ফার্মস’-এ প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ কেজি শাক উৎপাদিত হয়। তার খামারে ফল এবং সবজি চাষও হয়।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানি এ মহামারি বিশ্বকে পুরোপুরি পাল্টে দেবে। সরকার নিজের অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে স্থানীয়ভাবে কৃষি উৎপাদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্প স্থাপনের দিকে মনযোগ দেবে। খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত ও নির্বিঘ্ন রাখতে তাদের এটা করতে হবে।’’
অত্যন্ত গরম আবহাওয়া এবং পানির অভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্বাভাবিক কৃষিকাজ সম্ভব নয়। সেখানে ভার্টিক্যাল ফার্মিং অর্থাৎ বিশেষ ব্যবস্থায় তৈরি ঘরের মধ্যে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে কৃষিপণ্য উৎপাদন করা হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অতীতে সরকার এরকম ব্যয়বহুল কিছু প্রকল্প শুরু করলেও পরে সেগুলো বাদ দিতে বাধ্য হয়।
কিন্তু তেল সমৃদ্ধ দেশটি পেট্রোডলারের জোরে আবারো নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৈরী আবহাওয়ায় কম পানি ব্যবহার করে বাণ্যিজকভাবে কৃষি পণ্য উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবু ধাবি ২০১৯ সালে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি পণ্য উৎপাদন প্রকল্পে ২৭ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেয়।
এ বছর এপ্রিলে আবু ধাবি ইনভেস্টমেন্ট অফিস (এডিআইও) ভার্টিক্যাল কৃষিখামার নির্মাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারোফার্মস-সহ চারটি কোম্পানিকে ১০ কোটি মার্কিন ডলার দেয়।
অ্যারোফার্মস-এর প্রধান নির্বাহী ডেভিড রোজেনবার্গ বলেন, ‘‘যেখানে বিশ্বের কোথাও কোথাও বলা হয় আগে প্রমাণ করে তারপর কথা বলতে এসো। সেখানে ইউএই ভাবছে, ‘‘আমি এটা প্রথমে করবো তারপর এটাকে আরো বড় এবং ভালো করবো' তারা এই মানসিকতা নিয়ে এগুচ্ছে।’’
অ্যারোফার্মস আবু ধাবিতে আট হাজার ২০০ বর্গ মিটারের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার স্থাপন করেছে। সেখানে তারা তাজা ফলমূল এবং সবজি উৎপাদন করে ন্যায্য মূল্যে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করবে।
অ্যারোফার্মসের দাবি, তারা কিছু শস্য মাঠের চেয়ে ৯৫ শতাংশ কম পানি খরচ করে উৎপাদন করতে সক্ষম। ফলে খরচ কমে আসবে।
‘‘যুক্তরাষ্ট্রে আমরা আমাদের পণ্যের দাম মাঠে ক্ষেতে উৎপাদিত পণ্যের দামের সমপর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এখানেও এটা করতে চাই। এটাই হবে আমাদের সক্ষমতার পরীক্ষা। আশা করি আমরা জিতবো।’’
লকডাউনের কারণে অনেক দেশেই এখন কৃষি শ্রমিকের অভাব দেখা দিয়েছে। যার অর্থ, এ বছর লাখ লাখ টন শস্য ক্ষেতেই পড়ে থেকে নষ্ট হবে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে আবু ধাবিতে এক লাখ ২২ হাজার ৫৫০ টন সবজি উৎপাদিত হয়েছিল। ডয়চে ভেলে।