অভিভাবকত্ব আইন পরিবর্তনে সৌদি নারীদের কী লাভ?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৩ আগস্ট ২০১৯, ১১:০১
সৌদি আরবের নারীরা এখন থেকে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই বিদেশ যেতে পারবেন। দেখে নেয়া যাক এই আইন পরিবর্তন দেশটির নারীদের জীবনে কোন বদল আনবে কিনা?
শুরু যেভাবে
সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান দেশটির প্রচলিত আইনের ধারাবাহিক বেশ কয়েকটি সংস্কার করার ফলে, ২১ বছরের বেশি বয়েসী মেয়েরা এখন পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারবে। নারীরা শিশুর জন্ম সনদ, বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রি করতে পারবেন এবং প্রথমবারের মত তাদের পারিবারিক দলিলপত্র পাবার অধিকার দেয়া হয়েছে।
এর আগে দেশটিতে নারীরা তাদের স্বামী, বাবা কিংবা পুত্রের অনুমতিক্রমে বাইরে যেতে পারতেন। ফলে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে যেসব নারী বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করতেন, তারা আইনের চোখে হতেন অবৈধ কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী।
সৌদি আরবের শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ২০১৬ সালে একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেন, যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে সৌদি আরবের অর্থনীতি বদলে দেয়া হবে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
এ সময়ের মধ্যে সৌদি আরবের শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণের হার ২২ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ এ উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
অভিভাবকত্ব আইন কী?
সৌদি রাজতন্ত্রের অধীনে এই অভিভাবকত্ব আইনে একজন নারীর হয়ে তার সব সিদ্ধান্ত নেবেন একজন পুরুষ। প্রত্যেক নারীর একজন পুরুষ অভিভাবক থাকতে হবে, তা সে বাবা, স্বামী, ভাই, বা পুত্র বা অন্য কোন পুরুষ আত্মীয় হলেও চলবে।নারীর জীবনের যাবতীয় কঠিন সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্ব ‘অভিভাবকের’ ঘাড়ে বর্তাবে।
এখন কেন পরিবর্তন কেন আনা হলো?
মানবাধিকার প্রশ্নে সৌদি আরবের অবস্থান বেশ প্রশ্নবিদ্ধ এবং সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বাকী বিশ্বের উদ্বেগ রয়েছে।
দেশটিতে যখন নারীরা প্রথমবারের মত গাড়ী চালানোর অনুমতি পান, সে সময়ই দেখা গেছে অন্য কোন ইস্যুতে দেশটির সমালোচনা চলছে।
গত বছর তুরস্কের সৌদি দূতাবাসের ভেতরে সাংবাদিক জামাল খাশোগজিকে হত্যার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশটি।
নারীদের গাড়ী চালানোর অনুমতি দেবার আগে এই অধিকারের দাবীতে প্রচারণা চালানোর দায়ে ২০১৮ সালের মে মাসে বেশ কয়েকজন নারী অধিকারকর্মী গ্রেপ্তার হন। তাদের কয়েকজন মুক্তি পেলেও এখনো অনেকেই জেলে আছেন।
লিঙ্গ বৈষম্যের অভিযোগ তুলে অল্প বয়েসী নারীদের বিদেশে আশ্রয় চাওয়ার কয়েকটি আলোচিত ঘটনাও সৌদি আরবকে বিপদে ফেলে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৮ সালের হিসেব অনুযায়ী বর্তমান সংস্কারের আগে, লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে সৌদি আরব বিশ্বের সব চাইতে খারাপ দেশগুলোর একটি।
গাড়ী চালানোর অনুমতি দেবার পর অনেকে সামাজিক মাধ্যমে খুব অভিনন্দন আর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন, কেউ কেউ লাগেজ নিয়ে এয়ারপোর্ট যাচ্ছেন এমন মেমে পোষ্ট করেছিলেন। কিন্তু অনেকেই সে সময় মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ওইসব পরিবর্তন দীর্ঘ মেয়াদে টিকবে না।
অনেকেই বলেছিলেন, আইন সংস্কার মুখে বলা পর্যন্তই, সেগুলো বাস্তবায়ন হবে না কখনো। এর একটি বড় কারণ সৌদি সমাজের বুনিয়াদ হবে কম্যুনিটি কাঠামো, যা দেশটিতে খুবই শক্তিশালী। আর সেই কাঠামো থেকে প্রাচীন ধ্যানধারণা মুছে ফেলা সহজ কাজ নয়।
এখনো অনেক আইন আছে, যেখানে পুরুষের অনুমতি ছাড়া নারীরা এমনকি জেল ছেড়ে বেরুতে পারে না, অথবা পারিবারিক সহিংসতা থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেন না।
এখনো বিয়ে বা নিজের মত বাঁচতে একজন নারীর অনুমতি নিতে হয় পুরুষ আত্মীয়ের কাছ থেকে।